যা দেখবেন চা বাগানের ভূত বাংলোয়
রফিকুল ইসলাম জসিম
চা বাগানের উঁচু টিলায় অবস্থিত এক বাংলো। প্রায় ১০টি রুম, সুন্দর কিচেন ও বিশাল গ্যারেজসহ এই বাংলোর অবস্থা বেশ নাজুক। মূলত রক্ষণাবেক্ষণের অভাবেই চা বাগানের সাহেবের স্মৃতি বিজড়িত হাজারীবাগ বাংলো এখন পরিচিত ভূত বাংলো নামে।
ভূত বাংলো ছাড়াও সেখানে গিয়ে আপনি ঘুরে আসতে পারেন সাতআনি জমিদার বাড়িতে। আরও দেখবেন সবুজ চা বাগান, গারোটিলা, হাজারীবাগ মসজিদ ও দুর্গামন্দির। প্রথমবার ভূত বাংলো থেকে ঘুরে এসে যা জানলাম তাই পাঠকদের উদ্দেশ্যে আজকের লেখা-
আরও পড়ুন: অদ্ভুত যে গ্রামে মাটির নিচেই বাস করে তিন হাজার মানুষ
স্টারলিং কোম্পানি হিসেবে ব্রিটিশ, স্কটিশ ও ইংরেজরা এই উপমহাদেশে চা উৎপাদন শুরু করেছিলো বহু বছর আগে। তারই ধারাবাহিকতায় ১৮৭৫ সালে ১৮৫৭.২০ হেক্টর জমি নিয়ে পাত্রখোলা চা বাগানের পথচলা শুরু হয়েছিল।
তৎকালীন বাগান মালিক হিসেবে ব্রিটিশরা তাদের বাগান ব্যবস্থাপনার সঙ্গে জড়িত ব্যবস্থাপকদের থাকার জন্য দৃশ্যমান ও ব্যয়বহুল ছোট-বড় বেশ কয়েকটি বাংলো তৈরি করেছিল। বাংলোগুলো তৈরি করা হয়েছিল শ্রমিকদের পাড়া থেকে অনেক দূরের টিলায়। সৌখিন ব্রিটিশ ব্যবস্থাপকরা তাদের বাংলোগুলো সাজিয়ে রাখতেন ছবির মতো করে।
কালক্রমে সেসব বাংলোগুলো এখন পুরোনো হয়ে গেলেও আছে স্বমহিমায় দাঁড়িয়ে। এর মধ্যে হাজারীবাগের পাত্রখোলা চা বাগানে সহকারী ব্যবস্থাপকের জন্য নির্মাণ করা হয় এই বাংলো। মোজাইক করা ফ্লোরে ঢালাই করা ছাদের ছোট-বড় প্রায় ১০টি রুম, সুন্দর কিচেন ও বিশাল গ্যারেজসহ এই বাংলোটি হাজারীবাগের সবচেয়ে উঁচু টিলাতে অবস্থিত।
আরও পড়ুন: যে শহরে থাকতে লাগে না টাকা, সবাই স্বাধীন!
এই বাংলো নিয়ে আছে বেশ কল্পকাহিনি। কথিত আছে, এই বাংলোয় একসময় জ্বিন-ভূতের উপদ্রব ছিলো। বাংলোয় যখন ম্যনেজার থাকতেন না তখন তার রূপ ধরা একজনকে দেখা যেত, যিনি দিব্যি খাওয়া-দাওয়া করে আবার ম্যনেজার আসার সময় হলে কেটে পড়তেন।
এরকম অদ্ভুত সব ঘটনা ও পরবর্তী সময়ে সেখানে আত্মহত্যার ঘটনা ঘটতেই বাংলো ছেড়ে চলে যান ম্যনেজার। এরপর থেকে আর কেউই ওই বাংলোয় থাকার সাহস পাননি। তখন থেকে বাংলোটি পরিত্যক্ত অবস্থায় এখনো দাঁড়িয়ে আছে ভূত বাংলো হিসেবে।
হোক ভূত বাংলো, তবে এর চারপাশ ও ছাদ থেকে আপনি যে দৃশ্য দেখতে পাবেন তা শিলং-চেরাপুঞ্জির মতোই অদ্ভুত সুন্দর। উঁচু টিলায় থাকার কারণে সেখান থেকে সবকিছু এত চমৎকার দেখায় যা নিমেষেই মনকে সতেজ ও প্রাণবন্ত করে তুলবে। এমন প্রাকৃতিক নেশায় ডুবে থাকতে ইচ্ছে করবে ঘণ্টার পর ঘণ্টা।
আরও পড়ুন: একদিনের ছুটিতেই ঘুরতে পারবেন দেশের যেসব স্থানে
কীভাবে যাবে ভূত বাংলোয়?
দেশের যে কোনো প্রান্ত থেকে বাস, কিংবা ট্রেনে মৌলভীবাজারের কমলগঞ্জ যেতে হবে। এরপর ভানুগাছ সিএনজি স্ট্যান্ড থেকে পাত্রখেলা (ভাড়া ৪০ টাকা) যেতে হবে। হাজারীবাগ এলাকায় গিয়ে দেখা মিলবে নিদর্শনটির।
একটি গ্রাম্য এলাকা। সেখানে খাওয়ার জন্য ভালো রেস্টুরেন্ট নেই। তবে ওই এলাকায় ছোট ছোট ৬/৭ টং দোকান আছে। যেহেতু বেশিরভাগ মানুষ সেখানে একদিনে ঘুরেই ফিরে আসেন তাই পর্যটকদের জন্য তেমন কোনো সুবিধা নেই সেখানে।
জেএমএস/জিকেএস