ভিডিও EN
  1. Home/
  2. ভ্রমণ

মুজিবনগর স্মৃতি কমপ্লেক্সে গিয়ে যা যা দেখবেন

সাজেদুর আবেদীন শান্ত | প্রকাশিত: ০৫:০২ পিএম, ২২ জুলাই ২০২৩

ঢাকা থেকে প্রায় একমাসের জন্য বের হয়েছি দেশের বিভিন্ন দর্শনীয় স্থান ঘুরে দেখার জন্য। প্রথমেই এসেছি দক্ষিণবঙ্গের মেহেরপুর জেলায়। মেহেরপুর জেলার মুজিবনগর উপজেলার জেলা ডাকবাংলোয় ‘সুর্যদোয়ে’ উঠেছি। জেলা পরিষদ ডাকবাংলোটি একদম মুজিবনগর স্মৃতি কমপ্লেক্সের ভেতরেই।

বাংলাদেশের প্রথম রাজধানী মুজিবনগর। এটি বাংলাদেশের অন্যতম এক ঐতিহাসিক জায়গা। এখানেই বাংলাদেশের প্রথম সরকার গঠিত হয়। ১৭ এপ্রিল সরকারের মন্ত্রী পরিষদ এখানেই শপথ গ্রহণ করেন। তৎকালীন এই স্থানের নাম বৈদ্যনাথতলার আম্রকানন থাকলেও তার নাম পরিবর্তন করে রাখা হয় মুজিবনগর। মুজিবনগরে গিয়ে যা আছে দেখার-

jagonews24

আরও পড়ুন: বিশ্বের একমাত্র স্থান যেখানে কখনোই বৃষ্টি হয় না

মুজিবনগর স্মৃতিসৌধ

বাংলাদেশের অস্থায়ী সরকার গঠিত হয় যেখানে, সেখানেই স্মৃতিস্বরুপ গড়ে তোলা হয় মুজিবনগর স্মৃতিসৌধ। এর স্থাপতি তানভীর কবির। স্মৃতিসৌধটিতে ২৩টি ত্রিভুজাকৃতি স্মৃতিস্তম্ভ নির্মাণ করা হয়েছে। এর মাঝখানে যেখানে শপথ নেওয়া হয় সেখানে ২৪ ফুট দীর্ঘ ও ১৪ ফুট প্রসস্থ সিরামিকের ইট দিয়ে একটি লাল মঞ্চ করা হয়েছে।

স্মৃতিসৌধটির ভূমি থেকে ২ ফুট উঁচু বেদিতে গোলাকার অসংখ্য বৃত্ত রয়েছে। যা দ্বারা ১ লাখ বুদ্ধিজীবীর মাথার খুলিকে বুঝানো হয়েছে ও ৩ ফুট উচ্চতায় অসংখ্য পাথর আছে।

jagonews24

যা দিয়ে ৩০ লাখ শহীদ ও মা বোনদের সম্মানের প্রতি ঐতিহাসিক দায়বদ্ধতা বুঝানো হয়েছে। এছাড়া স্মৃতিসৌধ আহরনের জন্য বেদিতে ১১টি সিড়ি রয়েছে। যা দিয়ে মুক্তিযুদ্ধকালীন সময়ে দেশের ১১টি সেক্টরকে বুঝানো হয়েছে।

আরও পড়ুন: খুব কম খরচেই ঘুরে আসতে পারেন বিশ্বের এই ৫ দেশে

স্মৃতিসৌধের উত্তর পাশের আমবাগান ঘেঁষা স্থানটিতে মোজাইক করা রয়েছে তা দ্বারা বঙ্গোপসাগর বুঝানো হয়েছে। স্মৃতিসৌধের মুল ফটকের রাস্তাটি মুল সৌধের রক্তের সাগর নামক ঢালকে স্পর্শ করেছে যা মুলত ভাষা আন্দলোনের প্রতীকী হিসেবে উপস্থাপনা করা হয়েছে।

jagonews24

এছাড়া লাল মঞ্চ থেকে ২৩টি দেওয়াল তৈরি করা হয়েছে তার ফাঁকে অসংখ্য নুড়ি পাথর দ্বারা মোজাইক করে লাগানো হয়েছে। যা দিয়ে যুদ্ধের সময় সাড়ে সাত কোটি জনতার ঐকবদ্ধতাকে প্রতীকী অর্থে বোঝানো হয়েছে।

সব মিলিয়ে স্মৃতিসৌধটি ছিলো দারুণ এক দর্শনীয় স্থান। বিশাল আমবাগানের একদম সামনে স্মৃতিসৌধটি বাংলাদেশের এক ঐতিহাসিক স্মৃতি বয়ে নিয়ে বেড়াচ্ছে।

আরও পড়ুন: গ্রেট হিমালয়া ট্রেইল জয়ের গল্প

jagonews24

মুক্তিযুদ্ধ স্মৃতি কমপ্লেক্স

আমবাগান ঘেঁষেই বিশাল এক জায়গাজুড়ে বানানো হয়েছে মুক্তিযুদ্ধ স্মৃতি কমপ্লেক্স। বৃত্তাকার এই কমপ্লেক্সের ভিতরেই রয়েছে বাংলাদেশের বিশাল এক মানচিত্র।

যা ১১টি ভাগে বিভক্ত করে মুক্তিযুদ্ধের সেক্টরে রুপদান করেছেন ও ভাস্কার্যের মাধ্মে তাতে যুদ্ধের চিত্র ফুটে তোলা হয়েছে। এছাড়া গুরুত্বপূর্ণ স্থাপনাগুলোও ভাস্কর্যের মাধ্যমে ফুটে তোলা হয়েছে।

নদী, নদী বন্দর ও বঙ্গপোসাগরও প্রতীকী অর্থে দেখানো হয়েছে। তাতে পানি ধারা প্রবাহমান করা হয়েছে। যা দেখে মনে হবে বাংলাদেশের মানচিত্রের ভিতরে নদী ও সাগরে প্রবাহিত হচ্ছে পানি। তা উপর থেকে ভালোভাবে দেখা ও অনুধাবন করার জন্য তিনটি ওয়াচ টাওয়ারও স্থাপন করা হয়েছে।

jagonews24

আরও পড়ুন: যে শহরে থাকতে লাগে না টাকা, সবাই স্বাধীন!

ভাস্কর্য

মুজিবনগর স্মৃতি কমপ্লেক্সের বাহিরে দেওয়াল ঘেঁষে যুদ্ধের গুরুত্বপুর্ন সময়গুলোর আদলে ভাস্কার্য তৈরি করা হয়েছে। এরমধ্যে আছে বঙ্গবন্ধুর ঐতিহাসিক ৭ই মার্চের ভাষণ, পাকিস্থানী হানাদার বাহিনির আত্মসমার্পন, জাতীয় চার নেতা, মুক্তিযুদ্ধের প্রশিক্ষণ, বৈঠক, ও বাঙালীদের নির্যাতনের দৃশ্য ভাস্কার্যের মাধ্যমে ফুটিয়ে তোলা হয়েছে। এছাড়া সামনে আছে একটি পানির ফোয়ারা।

jagonews24

জাদুঘর

মুক্তিযুদ্ধ স্মৃতি কমপ্লেক্সের একদম পেছনেই রয়েছে বঙ্গবন্ধুর ৭ই মার্চের ঐতিহাসিক ভাষনের বঙ্গবন্ধুর আঙুল সমেত একটি ভাস্কার্য আর তাতে লেখা জয় বাংলা। এর পিছনে আছে জাদুঘর। জাদুঘরটিতে আছে মুক্তিযুদ্ধে অবদান রাখা জাতীয় বীরদের। এছাড়া মুক্তিযুদ্ধের পক্ষে বিভিন্ন আন্তর্জাতিক পত্রিকায় প্রকাশিত নিউজের কপি।

স্বাধীনতা সড়ক

মুক্তিযুদ্ধের স্মৃতি ধারনের জন্য মুক্তিযুদ্ধ স্মৃতি কমপ্লেক্সের একদম বাহিরে পিছটায় আছে স্বাধীনতা সড়ক। এ সড়কটি বাংলাদেশের মেহেরপুর হয়ে ভারতের নদীয় দিয়ে কলকাতা পৌঁছাবে। সড়কের বাংলাদেশ অংশের কাজ ইতিমধ্যেই শেষ হয়েছে।

jagonews24

আরও পড়ুন: বিমান ঘুরতে গেলে সঙ্গে যেসব জিনিস নেওয়া উচিত নয়

যারা মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাস জানতে চান বা স্মৃতি দেখতে চান তাদেরকে অবশই আসতে হবে এই স্মৃতি কমপ্লেক্সে। এখানে আসলে দেখতে পারবেন মুক্তিযুদ্ধের বিরত্বগাথা ইতিহাস।

মুজিবনগর উপজেলার উপজেলা নির্বাহী অফিসার আনিমেষ বিশ্বাস বলেন, ‘মুজিবনগর একটি ঐতিহাসিক জায়গা। মুক্তিযুদ্ধের স্মৃতি বিজরিত এ জায়গায় প্রতিদিনই দেশের দূর দুরান্ত থেকে বিভিন্ন দর্শনার্থীরা আসে। তাদের কথা ও নিরাপত্তার কথা বিবেচনা করে এ জায়গাগুলোতে সবসময় নিরাপত্তা বাহিনীর সদস্যরা টহল দেয়’।

jagonews24

ঢাকা থেকে যেভাবে যাবেন

ঢাকা থেকে কল্যানপুর বা সায়েদবাদ থেকে মেহেরপুর সদরে বাস নিয়মিত যাতাযায়ত করে। নন এসি বাসের ভাড়া ৬৮০ টাকা ও এসি বাসের ভারা মান ভেদে ১৫০০ থেকে দুই হাজার টাকা। মেহেরপুর সদর থেকে মাত্র ৩০ মিনিটে ৩০ টাকা ভাড়া দিয়ে সরাসরি যাওয়া যায় মুজিবনগর স্মৃতি কমপ্লেক্সে।

আরও পড়ুন: কম খরচে ভুটান ভ্রমণের উপায়

থাকা ও খাওয়া

মুজিবনগরে থাকার জন্য জেলা পরিষদ ডাক বাংলো আছে। এছাড়া বেসরকারি হোটেল ও গেস্ট হাউজ আছে যেগুলোয় ৫০০ থেকে ২ হাজার টাকায় থাকা যায়। আর খাওয়ার জন্য বেশ কিছু হোটেল ও রেস্টুরেন্ট আছে। মেহেরপুরের জনপ্রিয় একটি খাবার হলো ‘সাবিত্রী’ মিষ্টি। যা সদরের বিভিন্ন মিষ্টির দোকানেই পাবেন।

লেখক: ফিচার লেখক ও গণমাধ্যমকর্মী

জেএমএস/এমএস

আরও পড়ুন