যাতায়াতের ভোগান্তিতে পর্যটক কমছে নিঝুম দ্বীপে
মামুন রাফী
নিঝুম বনের মধ্যে মায়াবী হরিণের দৃশ্যে হৃদয় ছুঁয়ে যায় ভ্রমণপিপাসুদের। নোয়াখালী জেলার হাতিয়া উপজেলার নিঝুম দ্বীপ জাতীয় উদ্যান প্রাকৃতিক সৌন্দর্যের লীলাভূমি।
তাই প্রতি বছর নেমে আসে লাখো পর্যটকের ঢল। তবে যাতায়াত ব্যবস্থা খুবই নাজুক হওয়ায় দিন দিন কমছে পর্যটকদের আনাগোনা। ভোগান্তির শিকার হচ্ছে প্রায় ৬০ হাজার জনবসতি।
আরও পড়ুন: বাংলাদেশের যে দ্বীপে মানুষের চেয়েও হরিণ বেশি
হাতিয়া উপজেলা থেকে বিচ্ছিন্ন এ দ্বীপে যেতে হয় মুক্তারিয়া ঘাট সংলগ্ন মেঘনা নদী পাড়ি দিয়ে। ঘাটে নেই কোনো পন্টুন বা জেটি।
নিরাপত্তাহীন অধিক যাত্রি নিয়ে প্রায় এক কিলোমিটারের এই নদী পাড়ি দিতে ভাড়া দিতে হয় নৌকায় জনপ্রতি ৩৫ টাকা ও স্পিডবোটে ৮০ টাকা, যা প্রতি বছর বাড়ছে।
এছাড়া জাহাজমারা-মোক্তারিয়া ঘাটে নিরাপদ সড়ক না থাকায় বর্ষার মৌসুমে উপজেলার সঙ্গে দ্বীপের যাতায়াত ব্যবস্থা বিচ্ছিন্ন হয়ে যায়। নানা দুর্ভোগে পড়ে মানুষ। প্রতিনিয়ত ঘটতে থাকে দুর্ঘটনাসহ মারাত্মক প্রাণহানী।
আরও পড়ুন: একসঙ্গে এত রিকশা আগে কখনো দেখেননি ভারতীয় ৪ ভ্রামণিক
হাতিয়া থেকে নিঝুম দ্বীপকে বিভক্তকারী ১২৫০ মিটার দূরত্বের অগভীর মুক্তারিয়া খালের ওপর একটি ক্রসড্যাম নির্মাণের দীর্ঘদিনের দাবি হাতিয়াবাসীর।
বিশেষজ্ঞদের মতে, পরিকল্পিতভাবে ক্রসড্যাম প্রকল্প বাস্তবায়িত হলে নিঝুম দ্বীপের পাশে ৩০ লাখ একর জমি জেগে উঠবে।
জাহাজমারা নিঝুম দ্বীপের মধ্যে ক্রসড্যাম নির্মাণের সম্ভাব্যতা নিরূপণকল্পে নেদারল্যান্ডস সরকারের একটি বিশেষজ্ঞ দল স্থানীয় ভূমি পুনঃউদ্ধার বিভাগের সহায়তায় দুবার হাতিয়া-জাহাজমারা নিঝুম দ্বীপের অবস্থান ও ব্যাপক পরীক্ষা-নিরীক্ষা করেন।
ওই স্থানে ক্রসড্যাম নির্মাণ করা যেতে পারে বলে জরিপ দল রিপোর্টে উল্লেখ করেন। এ প্রকল্প বাস্তবায়নে আজও কোনো সরকারি কার্যকর পদক্ষেপ নেওয়া হয়নি। গুরুত্বপূর্ণ এ প্রকল্পটি দীর্ঘদিন যাবৎ ফাইলবন্দি হয়ে পড়ে আছে।
আরও পড়ুন: ১৬৭ দেশ ভ্রমণের রেকর্ড গড়লেন লক্ষ্মীপুরের মেয়ে নাজমুন নাহার
বিশেষজ্ঞ মহলের মতে, মাত্র ৩০ কোটি টাকা ব্যয়ের মাধ্যমে নদীভাঙন রোধসহ বিশাল ভূমি জেগে উঠলে এ অঞ্চলের লাখ লাখ মানুষ প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষভাবে উপকৃত হবে।
ক্রসড্যামের ফলে প্রকৃতির অপরূপ লীলাভূমি নিঝুম দ্বীপে ব্যাপকহারে পর্যটক ভ্রমণ করতে পারবেন। যা দেশের দ্বিতীয় বৃহত্তম পর্যটন কেন্দ্র হিসেবে আত্মপ্রকাশ করতে পারে।
আশা করছি, বাংলাদেশ সরকার দেশ ও জনগণের স্বার্থে সম্ভাবনার আরেক নতুন বাংলাদেশ সৃষ্টিতে কার্যকরি পদক্ষেপ গ্রহণ করবে।
লেখক: কবি ও সাংবাদিক, হাতিয়া, নোয়াখালী।
জেএমএস/এসইউ/জেআইএম