ঈদের ছুটিতে ঘুরে আসুন মিরসরাইয়ের ১০ পর্যটন স্পটে
এম মাঈন উদ্দিন
ভ্রমণপিপাসু পর্যটকদের হাতছানি দিয়ে ডাকছে সৌন্দর্যের অপরূপ লীলাভূমি চট্টগ্রামের মিরসরাই। ঈদের ছুটিতে পর্যটকদের বরণ করতে প্রস্তুত আছে পর্যটন স্পটগুলো।
এখানে আছে দেশের দ্বিতীয় বৃহত্তম কৃত্রিম লেক মহামায়া সেচ প্রকল্প, দেশের ৬ষ্ঠ সেচ ও প্রথম বায়ু বিদ্যুৎ প্রকল্প মুহুরী পজেক্ট, আট স্তর বিশিষ্ট জলপ্রপ্রাত খৈয়াছড়া ঝরনা, রূপসী ঝরনা, বাওয়াছড়া প্রকল্প, বোয়ালিয়া ঝরা।
আরও পড়ুন: ৮০ দিনে ৮১ বছরের দুই নারীর বিশ্বভ্রমণ
আরও আছে ডোমখালী বেড়িবাঁধ ও মিরসরাই অর্থনৈতিক অঞ্চলের বসুন্ধরা পয়েন্ট। প্রকৃতির সঙ্গে এবার ঈদে তাই এখানকার মুখরিত জনপদ হয়ে উঠবে আরও মুখর।
প্রাণের টানে ঘর থেকে বেরিয়ে পড়া প্রকৃতিপ্রেমীদের আমন্ত্রণ মহামায়া, খৈয়াছড়া, বাওয়াছড়া ও মুহুরীর পক্ষ থেকে।
মহামায়ার প্রকৃতিতে রঙের ছড়াছড়ি
ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কের মিরসরাই উপজেলার ঠাকুরদীঘি বাজারের এক কিলোমিটার পূর্বে। ছায়াঘেরা সড়ক। দেশের যে কোনো স্থান থেকে এসে এই লেকে যেতে রাস্তায় প্রস্তুত আছে সিএনজি অটোরিকশা। কিছুদূর পর দেখা মিলবে রেলপথ। রেল লাইন পার হলেই কাছে টানবে মহামায়া।
প্রাণের টানে ছুটে আসা পথ যেন ক্রমশই বন্ধুর হতে চাইবে মনের কোণে জাগা মৃদু উত্তেজনায়। দূর থেকে দেখা যায় প্রায় পাহাড়সম বাঁধ। উভয় পাশে শুধু পাহাড় আর পাহাড়।
বাঁধের ধারে অপেক্ষমান সারি সারি ডিঙি নৌকা আর ইঞ্জিনচালিত বোট। ১১ বর্গকিলোমিটার আয়তনের লেক কেবল সুভা ছড়ায়।
আরও পড়ুন: মালদ্বীপ নাকি আন্দামান, হানিমুনের জন্য সেরা গন্তব্য কোনটি?
পাহাড়ের কোল ঘেঁষে স্বচ্ছ পানিতে তাকাতেই দেখা যায় নীলাকাশ। পূর্ব-দিগন্তের সারি পাহাড়ের বুক চিরে যেতে যেতে একসময় হারিয়ে যেতেও মন চাইবে কল্পনায়। সঙ্গের সাথী পাশে নিয়ে গেলে তো কথাই নেই। পরিবার-পরিজন নিয়ে গেলেও কোনো বারণ নেই। কিছুদূরেই দেখা যাবে পাহাড়ের কান্না। অঝোরে কাঁদছে।
অথচ তার কান্না দেখে নিজের কাঁদতে ইচ্ছে হবে না। উপরন্তু কান্নার জলে গা ভাসাতে মন চাইবে। তারও পূর্বে যেখানে লেকের শেষ প্রান্ত, সেখানেও বইছে ঝরনাধারা।
কী নীল, কী সবুজ, সব রঙের ছড়াছড়ি যেন ঢেলে দেওয়া হয়েছে মহামায়ার প্রকৃতিতে। এর সঙ্গে মিশতে গিয়ে মন এতটাই বদলে যাবে, যেন মন বারবার ঘুরে আসতে চাইবে ফেলে আসা স্মৃতিতে।
রূপসী ঝরনার রূপে পাগল হবে যে কেউ
আপনার মনটা যতই খারাপ থাকুক। রূপসী ঝরনায় পা রাখলে আপনার মন ভালো হয়ে যাবে নিশ্চিত। রূপসী ঝরনার রূপের জাদু আপনাকে পাগল করবে।
আরও পড়ুন: অনলাইনে ট্রেনের টিকিট কাটার সহজ নিয়ম
প্রকৃতির অপরূপ সৌন্দর্য এর আরেক নাম বড় কমলদহ রূপসী ঝরনা। আঁকাবাঁকা গ্রামীণ সবুজ শ্যামল মেঠো পথ পার হয়ে পাহাড়ের পাদদেশে গেলেই শোনা যাবে ঝরনার পানি গড়িয়ে পড়ার অপরূপ নুপুরধ্বনি।
দু’পাশে সুউচ্চ পাহাড়। শাঁ শাঁ শব্দে উঁচু পাহাড় থেকে অবিরাম শীতল পানি গড়িয়ে যাচ্ছে ছড়া দিয়ে। রূপসী ঝরনা প্রথম দেখেই তার রূপে পাগল হবে যে কেউ।
মেঘের মতো উড়ে আসা শুভ্র এ পানি আলতো করে ছুঁয়ে দেখলেই এর শীতল পরশ মুহূর্তে ক্লান্তি ভুলিয়ে দেবে। টলটলে শান্ত পানির চুপচাপ বয়ে চলার ধরনই বলে দেবে এর উৎস অবশ্যই বিশাল কিছু থেকে।
কিছুক্ষণের মধ্যেই পর্যটকরা আবিষ্কার করবেন লাল আর নীল রঙের ফড়িঙের মিছিল! যত দূর পর্যন্ত ঝিরিপথ গেছে ততদূর পর্যন্ত তাদের মন মাতানো ঝিঁঝিঁ পোকার গুঞ্জন শোনা যায়।
চলার পথে শোনা যায় হরিণের ডাক। অচেনা পাখিদের ডাক, ঘাসের কার্পেট বিছানো উপত্যকার সঙ্গে। রূপসী ঝরনার পানিতে গোসল করার লোভ সামলানো কারো পক্ষেই সম্ভব নয়।
আরও পড়ুন: মেসির বাড়ির ওপর দিয়ে কেন উড়তে পারে না বিমান?
দেশের বিভিন্ন স্থান হতে যে কোনো বাস যোগে ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কের বড়দারোগাহাট বাজারে নামবেন। এরপর সিএনজি অটোরিকশা যোগে বাজারের উত্তর পাশের ব্রিকফিল্ড সড়ক দিয়ে পাহাড়ের পাদদেশ পর্যন্ত যাবে।
এরপর পায়ে হেঁটে ঝরনায় যেতে পারবেন যাবেন। অথবা যে কোনো বাস থেকে ব্রিকফিল্ড সড়কের মাথায় নেমে অটোরিকশা ছাড়া আধা কিলোমিটার পথ পায়ে হেঁটে যেতে পারবেন।
খৈয়াছড়া ঝরনা
প্রকৃতির নান্দনিক তুলিতে আঁকা সৌন্দর্য দেখে মুগ্ধ হচ্ছে দেশের ভ্রমণপিপাসু মানুষ। অনেকে রাতের বেলায় চাঁদের আলোয় ঝরনার অপরূপ সৌন্দর্য উপভোগ করতে পাহাড়ের পাদদেশে তাবু টাঙিয়ে অবস্থান করছে।
প্রকৃতির অপরূপ সৃষ্টি সেতুবন্ধন করে, সবুজের চাদরে ঢাকা বনানী রূপের আগুন ঝরায়, যেখানে প্রকৃতি খেলা করে আপন মনে, ঝুম ঝুম শব্দে বয়ে চলা ঝরনাধারায় গা ভিজিয়ে মানুষ যান্ত্রিক জীবনের অবসাদ থেকে নিজেকে ধুয়ে সজীব করে তুলছে খৈয়াছরা ঝরনায়।
গ্রামের সবুজ শ্যামল আঁকা-বাঁকা মেঠো পথ পেরিয়ে শরীরটা একটু হলেও ভিজিয়ে নেওয়া যায় নিঃসন্দেহে। আট স্তরের ঝরনা দেখতে দেশি-বিদেশি পর্যটকের ভিড় বেড়েছে।
দেশের অন্যতম বড় প্রাকৃতিক ঝরনাটি দেখতে প্রতিদিন ছুটে যাচ্ছে হাজার হাজার দেশি বিদেশি পর্যটক। উপজেলার খৈয়াছড়া ইউনিয়নের বড়তাকিয়া বাজারের উত্তর পাশে ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কের ৪.২ কিলোমিটার পূর্বে ঝরনার অবস্থান। এর মধ্যে ১ কিলোমিটার পথ গাড়িতে বাকি পথ হেঁটে যেতে হবে।
আরও পড়ুন: ঈদযাত্রায় যে বিষয়গুলো খেয়াল রাখবেন
রুপে মাতোয়ারা হবেন রূপসী ঝরনায়
দু’পাশে সুউচ্চ পাহাড়। শাঁ শাঁ শব্দে উঁচু পাহাড় থেকে অবিরাম শীতল পানি গড়িয়ে যাচ্ছে ছড়া দিয়ে। রূপসী ঝরনা প্রথম দেখেই তার রূপে পাগল হবে যে কেউ। মেঘের মতো উড়ে আসা শুভ্র এ পানি আলতো করে ছুঁয়ে দেখলেই এর শীতল পরশ মুহূর্তে ক্লান্তি ভুলিয়ে দেবে।
টলটলে শান্ত পানির চুপচাপ বয়ে চলার ধরনই বলে দেবে এর উৎস অবশ্যই বিশাল কিছু থেকে। কিছুক্ষণের মধ্যেই পর্যটকরা আবিষ্কার করবেন লাল আর নীল রঙের ফড়িঙের মিছিল! যত দূর পর্যন্ত ঝিরিপথ গেছে তত দূর পর্যন্ত তাদের মন মাতানো ঝিঁঝিঁ পোকার গুঞ্জন শোনা যায়।
চলার পথে শোনা যায় হরিণের ডাক। অচেনা পাখিদের ডাক, ঘাসের কার্পেট বিছানো উপত্যকার সাথে। রূপসী ঝরনার পানিতে গোসল করার লোভ সামলানো কারো পক্ষেই সম্ভব নয়।
বছরের পর বছর ঝরনার পানি গড়িয়ে যাচ্ছে এই ছড়া বয়ে। কয়েক বছর পূর্বে রূপসী ঝরনা নামে আবিষ্কার হলো এটি। মিরসরাই উপজেলার সর্বদক্ষিণে বড় দারোগারহাটের উত্তরে পাহাড়ের কোল অবস্থিত এক দৃষ্টিনন্দন, অনিন্দ্যসুন্দর এক জলপ্রপাত।
মিরসরাইয়ের অন্যান্য ঝরনাগুলোর চেয়ে এই ঝরনায় যাওয়া অনেকটাই সহজ। এর সৌন্দর্য কোনো অংশেই খৈয়াছড়া, নাপিত্তাচড়া ঝরনার চেয়ে কম না।
এই ঝরনায় যাওয়ার পথে দৃষ্টিনন্দন ছড়া, দু’পাশের দণ্ডায়মান পাহাড়, সবুজ প্রকৃতি, গুহার মতো ঢালু ছড়া, তিনটি ভিন্ন ভিন্ন অপরূপ ঝরনা রূপসীর সৌন্দর্য্যকে অন্যান্য ঝরনা থেকে আলাদা করেছে।
আরও পড়ুন: ডোমখালী সমুদ্রসৈকতে ঘুরে আসুন একদিনেই
বাওয়াছড়ার অপরূপ দৃশ্য পর্যটকদের নজর কাড়ে
উপজেলার ওয়াহেদপুর ইউনিয়নের মধ্যম ওয়াহেদপুর বাওয়াছড়া পাহাড়িয়া এলাকায় যুগ যুগ ধরে ঝরনা প্রবাহিত হচ্ছে। সবুজ শ্যামল পাহাড়িয়া লেকে পাখিদের কলতানে আবাল, বৃদ্ধ, বণিতা সকলের প্রান জুড়িয়ে যাবে।
প্রতিদিনই দেশের বিভিন্ন স্থান থেকে এ স্থানে ছুটে আসে শত শত পর্যটক। ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কের বড় কমলদহ বাজার থেকে থেকে ২ কিলোমিটার পূর্ব দিকে এটি অবস্থিত।
মুহুরীর চরে জল আর রোদের খেলা
প্রকৃতির আরেক নাম মুহুরী। যেখানে আছে আলো-আঁধারির খেলা। আছে জীবন-জীবিকার নানা চিত্র। মুহুরীর চর, যেন মিরসরাইয়ের ভেতর আরেক মিরসরাই। অন্তহীন চরে ছোট ছোট প্রকল্প। এ পাড়ে মিরসরাই, ওপাড়ে সোনাগাজী। ৪০ দরজার রেগুলেটরের শোঁ শোঁ আওয়াজ শোনা যায় দূর থেকে।
পশ্চিমে মৎস্য আহরণের খেলা, আর পূর্বে মন কাড়ানিয়া প্রকৃতি। নুয়ে পড়া মনোবল জেগে উঠবে পূবের জেগে ওঠা চরে। ডিঙি নৌকায় ভর করে কিছুদূর যেতেই দেখা মিলবে সাদা সাদা বক।
এখানে ভিড় করে সুদূরের বিদেশি পাখি, তবে অতিথি পাখি বলেই অত্যধিক পরিচিত তারা। চিকচিকে বালিতে জল আর রোদের খেলা চলে সারাক্ষণ। সামনে-পেছনে, ডানে-বামে কেবল সৌন্দর্য আর সুন্দরের ছড়াছড়ি।
এ অবস্থায় মন আঁধারে ঢেকে যেতে পারে, যদি ক্যামেরা সঙ্গে না থাকে। মুহুরীর প্রকৃতির ছোঁয়ায় উদ্ভাসিত স্মৃতিরা যেন হারিয়ে যাওয়ার নয়। এসব ক্যামেরার ফিল্মে আটকে রাখার মত হাজার বছর ধরে।
আরও পড়ুন: ছুটির দিনে ঘুরে আসুন লাকুটিয়া জমিদার বাড়ি
ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কের (পুরাতন) জোরারগঞ্জ বাজারে নেমে ধরতে হবে সংযোগ সড়কের পথ। জোরারগঞ্জ-মুহুরী প্রজেক্ট সড়ক নামে এ সড়কে দেখা মিলবে হরেক রকমের মোটরযানের।
ভাঙাচোরা আঁকা-বাঁকা আধাপাকা সড়ক পাড়ি দিতে হবে প্রায় আট কিলোমিটার। এরপর মুহুরী প্রকল্পের বাঁধ। যেতে যেতে দুই কিলোমিটার পরই দেখা মিলবে আসল সৌন্দর্য।
ডোমাখালী সমুদ্র সৈকত
৫২ বাঁকের বড়দারোহাট-বেড়িবাঁধ সড়ক অতিক্রম করে দেখা মিলবে বিশাল সমুদ্র সৈকতের। শোনা যাবে সাগরের গর্জন। দখিনা মিষ্টি হাওয়ায় শরীরটা শীতল হয়ে যাবে। উত্তরে দু’চোখ যতটুকু যাবে দেখা মিলবে সৈকতের, দক্ষিণে কেওড়া গাছের সবুজ বাগান।
পশ্চিমে শুধু সাগর আর সাগর। চোখে পড়বে দুষ্ট ছেলেদের সাগরের স্বচ্ছ পানিতে লাফালাফি দৃশ্য। ঘাটে আছে সারি সারি ডিঙি নৌকা। জেলেরা কেউ মাছ ধরে সাগর থেকে ঘাটে ফিরছে, কেউ আবার সাগরে যাচ্ছে। এমন নৈসর্গিক মনোমুগ্ধকর দৃশ্য দেখার জন্য সেখানে প্রতিদিন ছুটে যাচ্ছেন, অসংখ্য ভ্রমণপিপাসু নানা বয়সের মানুষ।
বঙ্গবন্ধু শিল্পনগরের কাজ শুরু করার পর মেরিনড্রাইভের বাঁধ নির্মাণের কারণে বিশাল এলাকাজুড়ে সমুদ্র সৈকতের সৃষ্টি হয়েছে। মিরসরাই উপজেলার একেবারে দক্ষিণ সীমান্তে অবস্থিত এই স্পটের নাম ‘ডোমখালী সমুদ্র সৈকত’।
আরও পড়ুন: কলকাতার যেসব স্থানে ঢুঁ মারতে ভুলবেন না
শুধু দিনে নয়, রাতেও সাগর পাড়ে দেখা মেলে অসংখ্য মোটরসাইকেল, প্রাইভেটকারের। রাতে বেলায় বিশাল সমুদ্রের গর্জন কানপেতে শুনে সেখানে ছুটে যান তরুণরা। পূর্ণিমার রাতে সেখানে তরুণ-যুবকদের ঢল নামে। এই সমুদ্র সৈকতের দুরত্ব প্রায় ৪ কিলোমিটার।
থাকা ও খাওয়া
বড় দারোগাহাট, বড়কমলদহ ও কমলদহ বাজারে খাওয়ার হোটেল আছে। তবে ঈদের ছুটিতে সেগুলো বন্ধ থাকবে।
দুর-দুরান্ত থেকে আসা পর্যটকরা থাকা ও খাওয়ার জন্য যেতে পারেন মিরসরাইয়ের বিভিন্ন পর্যটন স্পট থেকে গাড়ি যোগে মাত্র ৪০-৫০ মিনিটের পথ চট্টগ্রাম শহরের প্রবেশ মুখে এ কে খান ও অলংকারে কুটুম্ববাড়ি রেস্তোরায়। থাকার জন্য একেখানে মায়ামী রিসোর্ট ও অলংকারে রোজ ভিও হোটেলে।
জেএমএস/জিকেএস