ইফতার ঘিরে অপরূপ মিলনমেলা
মামুনূর রহমান হৃদয়
সারাদিন রোজা রাখার আনন্দটা ধরা দেয় নানা পদ ও স্বাদের ইফতারির মাধ্যমে। এই স্বাদ ও আনন্দ আরও বেড়ে যায় যদি পরিবার-পরিজন বা বন্ধু-বান্ধবের সঙ্গে ইফতার করা যায়। তাই তো রমজান মাসের প্রতিটি বিকেল শিক্ষার্থীদের আগমনে মুখর হয়ে ওঠে তিতুমীর কলেজের সবুজ মাঠ।
সবাই মিলে উৎসবে মেতে ওঠে ইফতারের প্রস্তুতি নিতে। গোটা মাঠ যেন পরিণত হয় মিলনমেলায়। গোধূলি লগ্নে সূর্য পশ্চিম আকাশে হেলে পড়লে সবুজ মাঠের বুকে শিক্ষার্থীরা ছোট ছোট দলে মাঠজুড়ে বৃত্তাকারে ইফতারের অপেক্ষায় বসে থাকে।
মনোরম আবহাওয়ার খোলামেলা মাঠটি প্রতিটি দলেরই প্রথম পছন্দ। প্রতি দলে ২ জন থেকে শুরু করে ১৫-৩০ জনও থাকে। নিচে বিছানো থাকে খবরের কাগজ, হাতে থাকে পানি, শরবত বা জুসের বোতল। থাকে ছোলা, মুড়ি, পিঁয়াজু, বেগুনি, সবজির চপ, জিলাপি, আলুর চপ, শসা, তরমুজ, আনারসসহ নানা পদ। বড় আয়োজন হলে তো কথাই নেই। তখন কেউ তেহারি, বিরিয়ানি বা খিচুরির ব্যবস্থা করেন।
আরও পড়ুন: ঢাকার কাছেই মুড়াপাড়া জমিদার বাড়ি
ইফতারের সময় ঘনিয়ে আসতেই কানায় কানায় পূর্ণ হয়ে ওঠে মাঠটির চারপাশ। বেশ কিছু সংগঠন মাঠের বদলে বেঁছে নেয় অডিটরিয়াম, শ্রেণিকক্ষ বা ক্যাম্পাসের যে কোনো সুন্দর পরিবেশ।
বাইরে থেকে কেউ হঠাৎ দেখলে ভাবতে পারেন, শিক্ষার্থীরা সবাই বোধহয় কোনো বড় অনুষ্ঠানের দাওয়াতি মেহমান। সবাই মিলে এমন উৎসবমুখর পরিবেশের সৃষ্টি করে যে, দেখলে মনে হবে সবাই একই বৃত্তের লোক!
ক্যাম্পাসে যারা ইফতার করতে আসেন, সবাই যে তিতুমীরের শিক্ষার্থী; এমনটি নয়। নিমন্ত্রিত অতিথিও আছেন। অনেকে আছেন, যারা এখান থেকে সম্প্রতি পড়াশুনার পাট চুকিয়েছেন। কিন্তু ক্যাম্পাসের মায়া ত্যাগ করতে পারেননি। তাই সুযোগ পেলেই ছুটে আসেন বন্ধু, ছোট ভাই-বোনদের সঙ্গে সময় কাটাতে।
আরও পড়ুন: ছুটির দিনে জিন্দাপার্ক ঘুরে যা যা দেখবেন
পাশাপাশি কিছু ছিন্নমূল পথশিশুর জন্যও ইফতার উৎসব বয়ে আনে এক ভিন্ন রকম আনন্দের উপলক্ষ। ইফতারের প্রায় সময় এসব শিশু হাজির হয় কলেজ ক্যাম্পাসে। হাতে থাকে ছোট বাটি। সামাজিক ও রাজনৈতিক সংগঠনের কাছ থেকে তারা ইফতার উপহার পেয়ে পরিবার-পরিজন নিয়ে ভাগাভাগি করে খায়। তাই এসব শিশুও যেন উৎসবের অন্যতম অনুষঙ্গ হয়ে ওঠে।
সব মিলিয়ে রমজান মাসের ইফতারের সময়টা তিতুমীর কলেজ ক্যাম্পাসকে দিয়েছে এক ভিন্ন মাত্রা। এই ভাতৃত্ববোধ বারবার মনে করিয়ে দেয়, এটি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান নয়; এটি একটি পরিবার!
লেখক: শিক্ষার্থী ও গণমাধ্যমকর্মী।
এসইউ/জেআইএম