সিলেটের ‘সাদা পাথর’ ভ্রমণে কখন ও কীভাবে যাবেন?
মার্জিয়া আফরোজ মিলি
মাথার ওপরে তুলোর মতো মেঘ। সীমান্তের দিকে ক্যানভাসে আঁকা ছবির মতো সবুজ পাহাড়। নিচে পানি-পাথরের সংমিশ্রণ। পাহাড়ের বুক চিরে বয়ে চলেছে ঠান্ডা পানির স্রোত। সে পানিতে দাপিয়ে বেড়াচ্ছে শিশু থেকে বয়োজ্যৈষ্ঠরা।
প্রাকৃতিক সৌন্দর্যে ভরপুর সিলেটের কোম্পানীগঞ্জের পর্যটনকেন্দ্র সাদা পাথরে দেখা মেলে এমন দৃশ্য। তাইতো জল, পাথর আর বুনো সৌন্দর্যের টানে এখানে ছুটে আসেন শত শত ভ্রমণপ্রেমী।
আরও পড়ুন: কাশ্মীর ভ্রমণে যে ৫ কাজ করলেই বিপদ
চায়ের রাজ্য, বুনো বন, পাথুরে নদী, পাহাড়ের বুক চিরে নেমে আসা ঝরনা, বিস্তৃত নীল জলধারা, হাওরসহ আছে দৃষ্টিনন্দন আরও পর্যটনকেন্দ্র। এর মধ্যে অনেকের প্রিয় ভোলাগঞ্জের সাদাপাথর।
যদিও পুরো সিলেট জুড়েই চোঁখ ধাঁধানো সবুজের হাতছানি। যেদিকে চোঁখ যায় সেদিকেই ছোট-বড় টিলার মতো পাহাড়গুলোকে মুড়িয়ে রাখা চা-বাগান, আকাশ, সবুজ ক্ষেত, ছোট-বড় নদী, খাল ইত্যাদি।
রাজধানী ঢাকা থেকে সড়ক, রেল ও আকাশ পথে যেতে হবে সিলেট শহর। হানিফ, শ্যামলী, গ্রিনলাইন ইত্যাদি পরিবহনের বাস নিয়মিত ঢাকা থেকে সিলেট যাওয়া-আসা করে। এছাড়া কমলাপুর রেলস্টেশন থেকে বেশ কিছু ট্রেন সিলেট যাতায়াত করে।
আরও পড়ুন: প্রথমবার ত্রিপুরা গেলে যে ৬ স্থান ঘুরতে ভুলবেন না
সময় বাঁচাতে চাইলে ঢাকা থেকে আকাশ পথেও যেতে পারেন। প্রতিদিন বেশ কয়েকটি ফ্লাইট চলাচল করে। সময় লাগবে প্রায় ৪৫ মিনিট। ভাড়া ৩০০০-৫০০০ টাকা। তাই আমরা সময় বাঁচাতে আকাশ পথকেই বেছে নিলাম।
সিলেট শহরে নেমে ভোলাগঞ্জ সাদা পাথর যেতে পৌঁছে গেলাম নগরীর আম্বরখানা পয়েন্টে। সিলেট শহরের আম্বরখানা থেকে দোতলা বিআরটিসি বাসে করে সাদা পাথরকে আলিঙ্গন করার উদ্দেশ্যে যাত্রা করলাম। বলে রাখা ভালো বিআরটিসি ছাড়াও সাদা পাথর নামে আরেকটি পরিবহন আছে।
৬০ টাকার বিনিময়ে ঘণ্টাখানেকের ভেতরেই ধলাইয়ের উৎসমুখ সাদা পাথরে। কেউ চাইলে রির্জাভ সিএনজি অটোরিকশাতেও যেতে পারে। সেক্ষেত্রে খরচ একটু বেশি পড়বে।
আরও পড়ুন: ডোমখালী সমুদ্রসৈকতে ঘুরে আসুন একদিনেই
সকালের হাস্যোজ্জ্বল রোদে যাত্রা। প্রচণ্ড গরম, বাসের ভেতরে সিটের সাথের ফ্যানটাও নষ্ট। তবে বাস ছাড়ার সঙ্গে সঙ্গে প্রকৃতির স্নিগ্ধ হিমেল হাওয়া যাত্রা আরামদায়ক করে তুললো।
মসৃণ সড়কপথ, মাঝে মধ্যে ধুলোর ঝাপটা কিছুটা অস্বস্তি আনে। সিলেট সদর পার হয়েই কোম্পানিগঞ্জ উপজেলায় ঢুকলেই দেখা যায়- পথের দু’ধারে পাথরের স্তুপ। কোথাও কোথাও মেশিনে পাথর ভাঙার ব্যস্ততা।
এ পাথরের উৎস ধলাই নদ। ভারতের খাসিয়া জৈন্তিয়া পাহাড় থেকে প্রচুর পরিমাণে পাথর ঝরনার পানিতে নেমে আসে। স্থানীয় বাসিন্দাদের এই পাথরই জীবকার অন্যতম উৎস।
ভোলাগঞ্জ বাজার পেরিয়ে এক কিলোমিটারের ভেতরেই সাদা পাথরে যাওয়ার ঘাট। ঘাটে নামলেই মনোরম দৃশ্যে চোঁখ জুড়িয়ে যাবে। দৃষ্টিনন্দন এ দৃশ্য ক্যামেরা বন্দী করতে মন করবে ছটফট।
আরও পড়ুন: মনের মতো সঙ্গী না পেয়ে একাই ‘হানিমুনে’ তরুণী
যদিও সামনে রয়েছে অপার সৌন্দর্য! ঘাটের মুখে ছোট-বড় কিছু দোকান রয়েছে। ভ্রমণপ্রেমীদের জন্য পণ্যের পসরা নিয়ে বসেছেন দোকানীরা।
ধলাইয়ের তীরে আছে সারি সারি নৌকা। ভাড়া ৯০০ টাকা দিয়ে ধলাই পার হয়ে সাদা পাথরে। নৌকাগুলোতে উঠা যায় ৮-১০ জন। নৌকায় একজন গেলেও ভাড়া ৯০০ টাকা।
ধলাই পেরিয়ে পৌছে যাবো সাদা পাথরের স্বর্গরাজ্য। তপ্ত রোদে পোড়া বালুপথ শেষে চোখে পড়বে পাথর রাজ্য। পাথর বিছানো বিছানার উপর দিয়ে ধেয়ে যাচ্ছে ঝরনার পানি।
দু’দিকে পাথর, মাঝখান দিয়ে বয়ে যাচ্ছে স্বচ্ছ জলধারা। শীতল জলধারায় পা দিলেই মিলবে প্রশান্তি। আর এই পানিতে দাপিয়ে বেড়াচ্ছে নানা বয়সের পর্যটকরা। ঘণ্টার পর ঘণ্টা চলে তাদের জলের সঙ্গে খেলাধুলা। জলে শান্ত করে মন-প্রাণ।
আরও পড়ুন: প্রথমবার ত্রিপুরা গেলে যে ৬ স্থান ঘুরতে ভুলবেন না
জলধারা পার হয়ে পাহাড়ের রাজ্য ও কাঁশফুলের দোলা। পাথরের ওপর পা রেখে ধেয়ে আসা হাঁটু পানির জলাধারা পার হওয়া কম কষ্ট সাধ্য না।
সাদা মেঘে আবর্তিত পাহাড়গুলোর কাছে যাওয়ার অনুমতি নেই। তাই পেছনে রেখেই চলে ছবিতোলা। কারণ ওগুলো প্রতিবেশি দেশের আওতাধীন।
ওপারে ভারতের মেঘালয় রাজ্যের পাহাড়ি অঞ্চল লুংলংপুঞ্জি ও শিলংয়ের চেরাপুঞ্জি। তাই দুই দেশের সীমান্ত বাহিনী বিজিবি-বিএসএফের বিশেষ নজরদারি।
যতটুকু সময় জল, পাহাড় আর সাদা পাথরের সান্নিধ্যে ছিলাম অপরূপ মোহনীয় সৌন্দর্যের প্রেমে পড়েছি। যদিও সন্ধ্যার মধ্যে রিসোর্টে পৌঁছানোর তাড়া থাকায় খুব অল্প সময়েই বিদায় নিতে হলো।
আরও পড়ুন: কলকাতার যেসব স্থানে ঢুঁ মারতে ভুলবেন না
খুব ইচ্ছে ছিল আরও কিছুক্ষণ প্রকৃতির সঙ্গে মিশে থাকার। শীতল জলে পা ডুবিয়ে স্নিগ্ধতা অনুভব করার, কিছু বলার!
সারাবছরই সাদা পাথরে ঘুরতে যেতে পারেন। তবে বর্ষার মৌসুমে এ স্থানের সৌন্দর্য কয়েক গুণ বৃদ্ধি পায়। জুন থেকে সেপ্টেম্বর হচ্ছে যাওয়ার উপযুক্ত সময়।
অন্য মৌসুমে পাথরের সৌন্দর্য দেখতে পেলেও নদীতে পানির পরিমাণ কম থাকে। আর শীতকালে নৌকা চলাচল করার মতো পানি থাকে না। তখন পায়ে হেঁটে ঘুরে দেখতে হবে।
লেখক: শিক্ষার্থী ও গণমাধ্যমকর্মী
জেএমএস/এমএস