মিয়ানমার ভ্রমণে ঘুরে দেখবেন যেসব বিস্ময়কর স্থান
মিয়ানমার বর্মা বা বার্মা নামেও পরিচিত। এটি দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার একটি দেশ। এর জনসংখ্যা প্রায় ৫৪ মিলিয়ন। মিয়ানমার বাংলাদেশ ও ভারতের উত্তর-পশ্চিমে, উত্তর-পূর্বে চীন, পূর্ব ও দক্ষিণ-পূর্বে লাওস ও থাইল্যান্ড অবস্থিত।
আর দক্ষিণ ও দক্ষিণ-পশ্চিমে আন্দামান সাগর ও বঙ্গোপসাগর অবস্থিত। দেশটির রাজধানী নেপিডো। এর বৃহত্তম শহর ইয়াঙ্গুন।
মিয়ানমার দারুন পর্যটকবান্ধব দেশ। সেখানে বেড়ানোর সবচেয়ে ভালো সময় অক্টোবর থেকে জানুয়ারি। তবে চাইলে সারাবছরই বেড়ানো যায়।
ঢাকা থেকে বাংলাদেশ বিমান ও নোভো এয়ারে সরাসরি যাওয়া যায় মিয়ানমারে। তবে নোভো এয়ারের টানজিট সময় অনেক কম।
বিগত প্রায় এক দশক ধরে পর্যটকদের জন্য নিজেদের দেশের দরজা খুলে দিয়েছে মিয়ানমার। তবে মিয়ানমারে বেড়াতে গিয়ে বেশিরভাগ পর্যটকই ইনলে লেক, ইয়াঙ্গুন, বাগান কিংবা প্যাগোডা দেখেই সফর শেষ করেন।
আরও পড়ুন: বিশ্বের যে স্থানে গেলে দেখবেন প্রাকৃতিক চৌম্বক শক্তি
এগুলো ছাড়াও কিন্তু মিয়ানমারে এমন কিছু লুকায়িত স্থান আছে, যার প্রাকৃতিক সৌন্দর্য ও ঐতিহাসিক গুরুত্ব আপনার বিস্ময় বাড়িয়ে তুলবে। চলুন তবে জেনে নেওয়া যাক সেসব স্থান সম্পর্কে-
শিপাও
শিপাও হলো মিয়ানমারের প্রাচীন রাজকীয় শহর। এর দক্ষিণ-পশ্চিমের রাস্তা চলে গেছে বিখ্যাত ইনলে লেকের দিকে।
ইতিহাসপ্রেমী ও হাইকারদের কাছে শিপাও বেশ জনপ্রিয় এক স্থান। সেখানকার প্রাকৃতিক গরম পানির ঝরনা ও জলপ্রপাত দেখে মুগ্ধ হন পর্যটকরা।
ফা-আন
থাইল্যান্ড সীমান্ত পেরিয়ে ইয়াঙ্গুনের দিকে গেলেই ফা-আনে পৌঁছানো যায়। এটি কাইন রাজ্যের অন্তর্গত। চুনাপাথরের পর্বতে ঘেরা এই অঞ্চলের চারপাশে আছে বিস্ময়কর পার্বত্য গুহা।
যার ভেতরে খোদাই করা আছে বুদ্ধমূর্তি, প্যাগোডাসহ বিভিন্ন ভাস্কর্য মূর্তি। তবে সেখানকার গুহাগুলো ঘুরতে গেলে সাবধান থাকতে হবে। কারণ সেখানে বাদুরের উৎপাত যথেষ্ট।
রাতে শত শত বাদুর উড়ে বেড়ায় সেখানে। অ্যাডভেঞ্চারপ্রেমীদের কাছে কিন্তু এই স্থান বেশ আকর্ষণীয়।
থানলউইন নদীতে নৌকাবিহার কিংবা মাউন্ট জিউকাবিন পর্যন্ত ঘণ্টা দুয়েকের হাইকিং দারুণ রোমাঞ্চকর।
ফা-আন পৌঁছানোর সবচেয়ে ভালো উপায় হলো ইয়াঙ্গুন থেকে সরাসরি বাস ধরা। এক্ষেত্রে ৭ ঘণ্টার মধ্যে আপনি পৌঁছে যাবেন ফা-আন।
আরও পড়ুন: নেপালের বিপজ্জনক ৫ বিমানবন্দর
পুটাও
হিমালয় পাহাড়ের পাদদেশে মায়ানমারের কাচিন রাজ্যের এক ছোট্ট শহর হলো পুটাও। ট্রেকাররা মূলত এই স্থান থেকেই যাত্রা শুরু করেন।
দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়া ও মিয়ানমারের সর্বোচ্চ পর্বতশৃঙ্গ খাখাবোরাজি আরোহণের বেস ক্যাম্প হলো পুটাও। একমাত্র গ্রীষ্মকালেই রাস্তা দিয়েই পুটাও শহরে পৌঁছোনো যায়।
বৈচিত্রময় এই শহরে রাওয়াং ও লিসু’সহ বেশ কয়েকটি সংখ্যালঘু জাতি বসবাস করে। ইয়াঙ্গুন, মান্দালে ও মাইটকিনা থেকে সরাসরি প্লেনে পুটাও যাওয়া যায়।
ম্রাউকউ
রাখাইন রাজ্যের উত্তরে অবস্থিত ম্রাউকউ একটি পৌরাণিক নগর। বাগানের মতো এই স্থান ইউনেস্কো কর্তৃক ঐতিহ্যবাহী স্থানের তালিকায় জায়গা করে নিয়েছে।
এই শহরে আছে প্রচুর প্রাচীন মন্দির ও স্থাপত্য। বাগানের মতোই এই অঞ্চল মূলত পার্বত্য ভূখণ্ড। সবুজে মোড়ানো এই অঞ্চলের প্রাকৃতিক সৌন্দর্য এক কথায় অসাধারণ।
আরও পড়ুন: থাইল্যান্ড ভ্রমণে যে ভুল করলেই বিপদে পড়বেন
পায়ে হেঁটেই এ অঞ্চল ঘোরা যায়। ম্রাউকই শহরে পৌঁছানোর সবচেয়ে ভালো উপায় হলো প্লেনে সিটাও পৌঁছে সেখান থেকে নৌকায় কালাদান নদী পার হওয়া।
লোইকাও
থাইল্যান্ডের সীমানায় অবস্থিত কায়া রাজ্যের অন্তর্গত হলো লোইকাও। সেখানে গেলে দেখবেন চুনাপাথরের পাহাড়ে খোদাই করা প্যাগোডা। পর্যটকদের মুগ্ধ করে এই স্থান।
নানা সংস্কৃতির উপজাতি বাস করে লোইকাও অঞ্চলে। সেখানকার স্থানীয় সংস্কৃতি সম্পর্কে জানতে স্থানীয় জাদুঘরে ঢুঁ মারতে ভুলবেন না।
মিয়ানমারের লোইকাও এর নারীরাই ‘লম্বা গলা বা জিরাফ গলা’ হিসেবে পরিচিত বিশ্বব্যাপী। তারা ছোটবেলা থেকেই গলায় পিতলের আংটির মতো চোকার পরা শুরু করেন।
বর্তমানে অবশ্য সেই প্রথা বিশেষ দেখা যায় না। এই অঞ্চলের খাবার খুবই সুস্বাদু। প্লেনে খুব সহজেই ইয়াঙ্গুন থেকে লোইকাও পৌঁছাতে পারবেন।
আরও পড়ুন: ঢাকা থেকে কলকাতা যেতে ট্রেনের টিকিট কাটবেন যেভাবে
মাউন্ট ভিক্টোরিয়া
মাউন্ট ভিক্টোরিয়া ওই দেশের তৃতীয় উচ্চতম শৃঙ্গ। মিয়ানমারের চিন রাজ্যের নাট মা তুয়াং ন্যাশনাল পার্কের মধ্যে অবস্থিত এই শৃঙ্গ। সেখানে বিরল প্রজাতির উদ্ভিদ ও প্রাণী দেখলে আপনার নয়ন জুড়িয়ে যাবে।
ইউনেস্কো হেরিটেজ পার্কের তকমা পেয়েছে এই শৃঙ্গ। পাহাড়ের আড়ালে সূর্যোদয়ের দৃশ্য দেখে মুগ্ধ হবেন। তবে বর্ষাকালে মাউন্ট ভিক্টোরিয়া যাওয়া বিপজ্জনক।
সেখানকার নিকটতম বিমানবন্দর হলো বাগান। সেখান থেকে ৮ ঘণ্টার মতো ড্রাইভ করে পৌঁছোনো যায় নাট মা তুয়াং জাতীয় উদ্যান।
সূত্র: ডেইলিট্রাভেলপিল
জেএমএস/এএসএম