১৫৯ দেশ ভ্রমণ করলেন নাজমুন নাহার
প্রথম বাংলাদেশি হিসেবে বাংলাদেশের পতাকা হাতে পশ্চিম আফ্রিকার দ্বীপ দেশ কেপ ভার্দে ভ্রমণের মাধ্যমে ১৫৯ দেশ ভ্রমণ করেছেন নাজমুন নাহার। ভ্রমণে বাংলাদেশের পতাকাবাহী হয়ে বিশ্ব মানচিত্রে বিরল দৃষ্টান্ত স্থাপনের মাধ্যমে ইতিহাস গড়েছেন। গত ১৭ ডিসেম্বর তিনি আটলান্টিক মহাসাগরের মাঝে অবস্থিত কেপ ভার্দের দুর্গম সল দ্বীপের মাটিতে লাল-সবুজের পতাকা হাতে পা রাখেন।
এরই মধ্যে তিনি একে একে দেশটির পাঁচটি বিচ্ছিন্ন দ্বীপ ভ্রমণ করেন। দ্বীপসমূহ হলো—সল, বোয়া ভিস্তা, সাও নিকোলাও, সনটো আনটো ও ফোগো দ্বীপ। ১৮ ডিসেম্বর নাজমুন নাহারকে নিয়ে কেপ ভার্দে টিএসএম টিভিতে একটি প্রতিবেদন প্রকাশ হয়। তারপর তিনি সল দ্বীপের দুটি স্থানীয় স্কুল ভিজিট করেন। সেখানে তিনি বিশ্ব শান্তির বার্তা ও পরিবেশ সচেতনতায় শিশুদের উৎসাহিত করেন।
বন-জঙ্গল, পর্বতমালা, মহাসমুদ্র, মরুভূমির লাখ লাখ মাইল একা পাড়ি দিয়ে আসা তার বিশ্বভ্রমণের এ অভিযাত্রাকে অভিনন্দিত করেন কেপ ভার্দের মানুষ। এরপর তিনি কেপ ভার্দের সল দ্বীপের শান্তা মারিয়া, কাইট সমুদ্র তীর, সল্ট মাইন, এসপারাগস ও পালমিরা শহর, লায়ন মাউন্টেন, সার্ক বিচসহ বেশকিছু দর্শনীয় স্থানে ভ্রমণের মাধ্যমে বাংলাদেশের লাল-সবুজের পতাকা উত্তোলন করেন।
নাজমুন নাহার ২০২১ সালের ৬ অক্টোবর বাংলাদেশের পতাকা হাতে বিশ্বভ্রমণের এক অবিস্মরণীয় মাইলফলক সৃষ্টি করেন আফ্রিকার দেশ সাওটোমে ও প্রিন্সিপ ভ্রমণের মাধ্যমে। ২০২২ সালের শুরুর দিকে ভ্রমণ করেন আফ্রিকা, ইউরোপ ও মধ্য এশিয়ার দেশ সান মারিনো, মরিশাস, উজবেকিস্তান ও তাজিকিস্তান। অক্টোবর থেকে ডিসেম্বর পর্যন্ত ভ্রমণ করেন যুদ্ধ বিধ্বস্ত ফিলিস্তিন, ইসরাইল, জিব্রাল্টার ও কেপ ভার্দে।
যেখানেই গেছেন, বাংলাদেশের পতাকার পাশাপাশি উঁচু করে ধরেছেন বিশ্ব শান্তির বার্তা ‘নো ওয়ার, অনলি পিস’। তার ভ্রমণের সময় বিশ্বের বিভিন্ন দেশের লোকাল কমিউনিটি ও শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান ভিজিট করেন। সেখানেই তিনি বিশ্ব শান্তি ও পরিবেশ সচেতনতায় নারী, শিশু ও তরুণদের উৎসাহিত করেন।
তার বিশ্বভ্রমণ এতটা সহজ ছিল না। বিশ্বভ্রমণ করার জন্য তাকে কঠোর পরিশ্রম করতে হয়েছে। পূর্ব আফ্রিকা, পশ্চিম আফ্রিকা, দক্ষিণ আমেরিকা, ইউরোপ, সেন্ট্রাল আমেরিকা ও এশিয়ার বেশিরভাগ দেশে একাই সড়কপথে ভ্রমণ করেছেন। দীর্ঘ ২২ বছরের অভিযাত্রায় অনেক কঠিন-দুর্গম পথ পাড়ি দিয়েছেন। অনেক কঠিন পরিস্থিতিসহ মৃত্যুর মুখোমুখি হয়েছেন বহুবার। তবুও থামেনি তার পদযাত্রা। তিনি মৃত্যুর সঙ্গে পাঞ্জা লড়েও বাংলাদেশের পতাকা নিয়ে যাচ্ছেন বিশ্ব অভিযাত্রার সঙ্গে সঙ্গে।
বাংলাদেশের পতাকা হাতেই বিশ্বের বিভিন্ন দেশের গণমাধ্যমের শিরোনাম হয়েছেন তিনি। বিশ্বের বিভিন্ন দেশের মন্ত্রী, রাষ্ট্রপ্রধান, বিখ্যাত ব্যক্তিরা তাকে সংবর্ধিত করেছেন। পিস টর্চ বিয়ারার অ্যাওয়ার্ডসহ দেশ-বিদেশে ৫০টিরও বেশি সম্মাননা অর্জন করেছেন তিনি।
নাজমুন নাহার সুইডেনের লুন্ড ইউনিভার্সিটি থেকে উচ্চতর ডিগ্রি অর্জন করেন। তার জন্ম বাংলাদেশের লক্ষ্মীপুরে। তার লক্ষ্য বাংলাদেশের পতাকা নিয়ে বিশ্বের প্রতিটি দেশে ভ্রমণ করবেন। বাংলাদেশি পতাকাবাহী নাজমুন নাহার ইতিহাসের কিংবদন্তি তারুণ্য। তার এ অর্জন বাংলাদেশকে গৌরবময় করছে দেশে-দেশে।
এসইউ/জেআইএম