রোমাঞ্চকর ভ্রমণে ঘুরে আসুন ভারতের ৭ পাহাড়ি সড়কে
সাইফুর রহমান তুহিন
যারা রোমাঞ্চকর অনুভূতি পেতে পাহাড়ি রাস্তায় ভ্রমণ করেন, তারা চাইলে ঘুরে আসতে পারেন ভারতের বিপজ্জনক ৭ পাহাড়ি রাস্তায়। এসব রাস্তায় চলাচল করা আর মৃত্যুকে আমন্ত্রণ জানানো একই কথা!
এ কারণে থ্রিলারপ্রেমীরা এসব সড়কে নিজ নিজ বাহনে চেপে রোমাঞ্চকর অনুভূতি পেতে ছুটেন এক রুট থেকে অন্য রুটে। চলুন তবে জেনে নেওয়া যাক ভারতের তেমনই কিছু বিপজ্জনক পাহাড়ি সড়ক সম্পর্কে-
শ্রীনগর টু লেহ
এটি ভারতের সবচেয়ে সেরা ও চমকপ্রদ পাহাড়ি রুটগুলোর একটি। যা আপনাকে উপহার দেবে সারাজীবন মনে রাখার মতো স্মৃতি।
বিস্তৃত পুরো হাইওয়ে ভ্রমণই অতুলনীয় এক অভিজ্ঞতা যা আপনাকে নিয়ে যাবে নয়নাভিরাম কাশ্মীর, সোনামার্গ ও ড্রাস ভ্যালির ছবির মতো সুন্দর সব শহরে।
মৌলিক সুবিধাদি থাকার সুবাদে ও এক রাস্তার সঙ্গে আরেক রাস্তার সংযোগ তুলনামূলক ভালো হওয়ার কারণে এই রুট মানালি-লেহ হাইওয়ের তুলনায় সহজ।
নুব্রা ডুনেস টু প্যানগং
এটি এমন সব রোড ট্রিপসমূহের একটি যার মাধ্যমে আপনি সম্পূর্ণ পরিতৃপ্ত হবেন। প্যানগং লেক তার নজরকাড়া সৌন্দর্যের জন্য এমনিতেই সুপরিচিত। এর পাশাপাশি সড়কটি শ্যোক নদী হয়ে নুব্রা ভ্যালিকে প্যানগং লেকের সঙ্গে সংযুক্ত করেছে।
এটি সেইসব রোড ট্রিপগুলোর একটি যেখানে আপনি একের পর এক দৃশ্যকে ক্যামেরায় ধরে রাখতে চাইবেন। এই ট্রিপের পরিকল্পনা সাজানোর ক্ষেত্রে একটু সতর্ক থাকতে হবে আপনাকে কারণ, কারো কারো ক্ষেত্রে এটি বাড়তি চাপ হয়ে যেতে পারে।
এখনকার সময়ে অনেকেই এমনকি পছন্দ করেন নুব্রা ভ্যালি টু প্যানগং লেক রোডে যাওয়ার ক্ষেত্রে ওয়ারি লা হয়ে যেতে। এটিই হলো ওই এলাকা দিয়ে চলে যাওয়া উঁচু পার্বত্য এলাকা। সমুদ্রপৃষ্ঠ থেকে এটি ৫ হাজার ৩১২ মিটার পর্যন্ত উঁচু।
লেহ টু টসো মরিরি
ভারতের সবচেয়ে বেশি উচ্চতার লেকগুলোর মধ্যে অন্যতম আকর্ষণীয় হলো টসো মরিরি যা হতে পারে আপনার ক্লান্ত দুই চোখের জন্য খুবই প্রশান্তিদায়ক।
এখানকার স্থানীয় জনসংখ্যা বড়জোর ৪০০ হওয়ায় ও লেকটির অবস্থান একটু দুর্গম জায়গায় হওয়ার কারণে এটির স্বচ্ছতা ও দুষণমুক্ত সৌন্দর্য সত্যিই উপভোগ্য।
তুলনামূলক সহজ ভ্রমণের জন্য বুদ্ধিমানের কাজ হবে মানালি থেকে সেখানে না গিয়ে সোজা লেহ থেকে চলে যাওয়া।
লেহ টু টসো মরিরি রুটটি আপনাকে চমকে দেবে প্রতিটি বাঁকে বাঁকে আর হিমালয়ান মাউন্টেন রেঞ্জগুলোর অনুপম সৌন্দর্য আপনার দু’চোখে বুলিয়ে দেবে তৃপ্তির ছোঁয়া।
চারদিকে বড় বড় পাহাড় রেঞ্জ দ্বারা বেষ্টিত একটি প্রবাহমান নদীও অতিক্রম করবেন আপনি। সংক্ষেপে শুধু এ কথাই বলা যায়, লেহ টু টসো মরিরি ট্রিপটির কথা আপনি খুব তাড়াতাড়ি ভুলতে পারবেন না।
শিমলা টু কাজা
বিশ্বের সবচেয়ে বিপজ্জনক সড়ক রুটগুলোর একটি হিসেবে বিবেচিত শিমলা টু কাজা শুধু অ্যাডেভঞ্চারপ্রেমীদের জন্যই। যখন আপনি প্রাচীন মন্দিরসমূহ ও নয়নাভিরাম প্রাকৃতিক দৃশ্যাবলী অতিক্রম করবেন তখন গাড়িচালক ও ভ্রমণসঙ্গীদের ধন্যবাদ দিতেই হবে।
যাত্রাপথে অতিক্রম করবেন চোখজুড়ানো গ্রামসমূহ। আর এসব জায়গা অতিক্রমকালে হঠাৎ গাড়ি থামিয়ে জ্বালানি ভরার পাশাপাশি অনুপম প্রাকৃতিক সৌন্দর্য উপভোগ করতে পারবেন।
এই রুটে ভ্রমণ করতে পারবেন শুধু সাহসীরাই। যদি আপনি তেমন কেউ হন তাহলে তৈরি হোন রোমাঞ্চকর ভ্রমণের জন্য।
দার্জিলিং টু পেলিং
উত্তর-পূর্ব ভারতের পর্যটকদের খোঁজ করা সবচেয়ে জনপ্রিয় রুটগুলোর একটি হলো দার্জিলিং টু পেলিং। পাহাড়ি ল্যান্ডস্কেপ আর বিস্তৃত ঘন সবুজ চা-বাগান।
যদি আপনি আসলেই অ্যাডভেঞ্চারপ্রেমী হন, তাহলে ভ্রমণ শুরু করুন নতুন দিল্লি থেকে। এতে সবকিছু উপভোগ করতে পারবেন একেবারে পরম তৃপ্তি নিয়ে।
শিলং টু চেরাপুঞ্জি
মেঘালয়ের রাজধানী শিলং থেকে বিশ্বের সবচেয়ে বৃষ্টিবহুল স্থান চেরাপুঞ্জিতে যাওয়ার রুটটি পারতপক্ষে কোনো পর্যটকই মিস করতে চাইবেন না।
এর উল্লেখযোগ্য দিক হচ্ছে পুরো যাত্রাপথে দারুণ সব ছবির মতো দৃশ্যাবলী তো পাবেনই। এর সঙ্গে এমন কিছু জায়গা অতিক্রম করবেন যেখানে হাত বাড়ালেই স্পর্শ করতে পারবেন মেঘকে।
এর পাশাপাশি দৃষ্টিনন্দন পাথরখণ্ড, ঘন সবুজে আবৃত ভূমি, সবুজ বনানী- সবকিছুই আপনার ভ্রমণকে করে তুলবে দারুণ উপভোগ্য।
গ্যাংটক টু চাঙ্গু লেক ও নাথু-লা পাস
সমুদ্রপৃষ্ঠ থেকে আনুমানিক ১২ হাজার ৩১০ ফুট উচ্চতায় অবস্থিত চাঙ্গু লেক সিকিম রাজ্যের রাজধানী গ্যাংটক থেকে প্রায় ৫০ কিলোমিটারের ভ্রমণ। এই ভ্রমণ শুরুর আগে সিকিমে একরাত থাকতে পারেন।
এই রুটের আঁকাবাঁকা পথ হয়তো আপনাকে কিছুটা ভয় পাইয়ে দিতে পারে! তবে পুরো রুটের নয়নাভিরাম প্রাকৃতিক সৌন্দর্য ঠিকই মন থেকে সব চিন্তা দূর করে দেবে।
যাত্রাপথে আপনি অতিক্রম করবেন বিশ্বের উচ্চতম এটিএম বুথ ও শেরাথাংয়ে অবস্থিত ইন্দো-চাইনিজ সীমান্ত বাণিজ্য কেন্দ্র।
ঝামেলা এড়াতে শীতকালে এই রোড ট্রিপ এড়িয়ে চলুন, কারণ তখন ভারি তুষারপাতের কারণে শুধু রাস্তাই দুর্গম হয় না, কখনো কখনো তা বন্ধও হয়ে যায়।
লেখক: ফ্রিল্যান্স সাংবাদিক ও ফিচার লেখক
জেএমএস/জিকেএস