ইতালির এই শহরে বসতি গড়লেই মিলবে ৩২ লাখ টাকা!
উচ্চ শিক্ষা কিংবা বসতি গড়ার লক্ষ্যে অনেকেই নিজ দেশ ছেড়ে বিদেশে পাড়ি জমান। যারা বিদেশ যাওয়ার পরিকল্পনা করছেন, অথচ অর্থের সংকট আছে তারা চাইলে ঘুরে আসতে পারেন ইতালিতে। অনেকটা বিনামূল্যেই আপনি সেখানে বসতি গড়তে পারবেন!
ইতালির ছোট্ট এক শহর প্রেসিস এখন জনশূন্য প্রায়। এই শহর টিকিয়ে রাখতেই কর্তৃপক্ষ আকর্ষণীয় সুবিধার ঘোষণা দিয়ে আগ্রহীদের টানছে প্রেসিসে।
সেখানকার জরাজীর্ণ বাড়িগুলো নামমাত্র মূল্যে বিক্রি করে অন্যদের সেখানে বসবাসের সুযোগ করে দিচ্ছেন কর্তৃপক্ষ।
কর্মকর্তারা জানাচ্ছেন, একটি খালি বাড়ি কেনা ও বসবাসের জন্য আগ্রহীদের ৩০ হাজার ইউরো পর্যন্ত অর্থ দেওয়া হবে।
সেখানকার পুরোনো ও বিশালাকার সব বাড়িগুলোর দাম প্রায় ২৫ হাজার ইউরো থেকে শুরু। প্রেসিস শহরের বেশিরভাগ মানুষই ইতালির মূল শহরগুলো বসতি স্থাপন করাই ছোট্ট এই শহর পরিত্যক্ত হয়ে পড়েছে।
প্রেসিসের স্থানীয় কাউন্সিলর আলফ্রেডো প্যালিস জানান, ঐতিহাসিক এই শহরে ১৯৯১ সালের আগে নির্মিত অনেকগুলো খালি বাড়ি এখন পরিত্যক্ত অবস্থায় আছে।
আমরা আবারও এই শহরের বাসিন্দাদের দেখতে চাই। এ কারণেই নতুনদের আগমন জানাচ্ছি আমরা।
তবে শর্ত হলো শহরে যারা বাড়ি কিনবেন, তাদের বয়স ৪০ বছরের কম হতে হবে। সেখানকার অর্থনীতিকে চাঙ্গা করতে শহরে ব্যবসা শুরু করতে হবে। এছাড়া যে বাড়িটি কিনবেন, সেটি ১৯৯১ সালের আগে তৈরি করা হতে হবে।
প্রসাশনের পক্ষ থেকে বাড়ি কেনার অর্থ দুভাগে দেওয়া হবে। প্রথম ভাগটা দেওয়া হবে বাড়ি কেনার সময় আর শেষ ভাগটা দেওয়া হবে বাড়়িতে যদি কোনো মেরামতির কাজের প্রয়োজন হয় সেক্ষেত্রে।
২০১৯ সালে প্রেসিস ও অ্যাকোয়ারিকা নামে দুই শহর একসঙ্গে যোগ করা হয়। শহরগুলোর আর্থিক পরিস্থিতির উন্নতির জন্যই করা হয় এই পরিকল্পনা। দুই শহরের মোট জনসংখ্যা মাত্র ৯০০০।
প্রেসিসে বসতি গড়ার আরেকটি সুবিধা হলো মনোরম প্রাকৃতিক সৌন্দর্য উপভোগ করার সুযোগ মিলবে আপনার। এছাড়া এর পাশেই ইতালির সবচেয়ে জনপ্রিয় এক আকর্ষণীয় স্থান সেলেন্টোর অবস্থান।
সেখানেই সান্তা মারিয়া ডি লিউকার পাউডার সৈকতের অবস্থান। এই সমুদ্রের ফিরোজারঙা পরিষ্কার পানি আপনাকে মুগ্ধ করবে।
প্রেসিস শহরের ইতিহাস খুঁজে পাওয়া যায় মধ্যযুগে। এই এলাকাতেই ছিল সারাসেন দুর্গ। এর চারপাশে সন্ন্যাসীরা বসতি স্থাপন করেন।
তবে বসতিগুলো নিজেদের জন্য নয় বরং জলদস্যুদের আক্রমণ থেকে বেঁচে যাওয়াদের আশ্রয় হিসেবে। সন্ন্যাসীরা সেখানে তাদের জন্য ভূগর্ভস্থ জলপাই কল খনন করেছিল।
এক সময় প্রেসিসের নাম ‘সবুজ সোনার শহর’ হিসেবে খ্যাতি অর্জন করে। কারণ সেখানেই এক্সট্রা ভার্জিন অলিভ অয়েল তৈরি শুরু হয়।
রেনেসাঁর সময় শহরটি উন্নতি লাভ করে। পরবর্তী সময়ে চাহিদার সঙ্গে সঙ্গে ওয়াইন, পনির ও গবাদি পশুর ব্যবসার জন্যও পরিচিত হয়ে ওঠে শহরটি।
অতীতে অনেক স্থানীয়রা ভূ-গর্ভে বাস করতো। সেখানকার বারোক পালাজোর নীচে ২৩টি সিক্রেট চেম্বার ও জলপাই মিলের একটি নেটওয়ার্ক আছে।
যেখানে কৃষকরা ফসল কাটার মৌসুমে কয়েক মাস কাটাতেন। তার গাধার দ্বারা ঘানি ভাঙতেন ও জলপাইয়ের এক্সট্রা ভার্জিন অলিভ অয়েল তৈরি করতেন।
সূত্র ও ছবি: সিএনএন
জেএমএস/এমএস