ঘুরে আসুন বলিউডের ১০ শুটিংস্পট
সাইফুর রহমান তুহিন
বিশ্ব চলচ্চিত্রে যুক্তরাষ্ট্রের লস এঞ্জেলসের হলিউডের পরেই অবস্থান ভারতের মুম্বাই তথা বলিউডের। প্রতি বছরই বেশ কয়েকটি আলোচিত ও ব্যবসাসফল ছবি উপহার দেন বলিউডের প্রযোজক-পরিচালকরা। আর মুক্তির পরই এসব ছবি ছড়িয়ে পড়ে এশিয়া-ইউরোপ-আমেরিকা-আফ্রিকা সবখানে।
কাহিনি ও চিত্রনাট্যের পাশাপাশি এসব সিনেমার শুটিং লোকেশনও প্রায়ই নজর কাড়ে দর্শকদের। ভারতের বাইরেও শুটিং হয় কিছু ছবির, তবে ভারতে এমন কিছু জায়গা আছে যেগুলো পর্যটকদের কাছে জনপ্রিয়তা পেয়েছে সিনেমার শুটিং লোকেশন হওয়ার কারণে। এই লেখায় ভারতের কিছু বিখ্যাত স্থান ও সেগুলোতে চিত্রায়িত ছবি সম্পর্কে জেনে নিন-
প্যানগং লেক, লাদাখ
সাম্প্রতিক বছরগুলোতে প্যানগং লেক বেশ বিখ্যাত একটি জায়গা হয়ে উঠেছে। বলিউডের কিছু সিনেমার কারণে এমনকি ভ্রমণপিপাসু নন এমন লোকজনও ট্রাভেল ব্যাগ গুছিয়ে রওনা হয়ে যান লেকটি ভ্রমণ করে এর সৌন্দর্যকে মূল্যায়ন করতে।
যদি আপনি ‘থ্রি ইডিয়টস’ ছবির শেষ দৃশ্যটি কিংবা ‘যাব তাক হে জান’ ছবিতে শাহরুখ খান যেখানে আনুশকা শর্মাকে বাঁচিয়েছিলেন সে স্থান নিজ চোখে দেখতে চান, তাহলে প্যানগং লেক ভ্রমণ তালিকার ওপরের দিকেই থাকা উচিত। এই স্থানের আবহাওয়া বৈরী হলেও প্যানগং লেকে উল্লেখযোগ্যসংখ্যক পর্যটক ও চলচ্চিত্র নির্মাতার দেখা পাওয়া যায়।
রোথাং পাস, হিমাচল প্রদেশ
‘হাইওয়ে’, ‘জাব উই মেট’, ‘দেব ডি’র মতো জনপ্রিয় বলিউড সিনেমায় রোথাং পাসের নয়নাভিরাম দৃশ্য সেলুলয়েডে চিত্রায়িত হয়েছে আর এর মাধ্যমে তুষারাবৃত জায়গাটি পেয়েছে অমরত্ব। এই ছবিগুলো অনেক ভ্রমণপ্রেমীকেই রোথাং পাস ভ্রমণে ও এখানকার অনুপম সৌন্দর্যের রস আস্বাদনে আগ্রহী করেছে।
মানালি, হিমাচল প্রদেশ
প্রয়াত বলিউড তারকা ঋষি কাপুর অভিনীত ‘হিনা’ ও রণবীর কাপুরের ‘ইয়ে জওয়ানি হে দিওয়ানি’ মানালিতে চিত্রায়িত হওয়ার পর স্থানটি অনেকের কাছেই সবচেয়ে প্রিয় হিল স্টেশনগুলোর একটিতে পরিণত হয়। দুর্দান্ত সব পাহাড় চূড়া, ঘন সবুজ বনভূমি ও নদীসমূহ দেখতে আপনিও ঘুরে আসতে পারেন মানালি থেকে।
উদয়পুর প্রাসাদ, রাজস্থান
চলচ্চিত্র নির্মাতারা ছবির শুটিংয়ের জন্য সব সময়ই এমন তরতাজা লোকেশন খোঁজেন যা একটি ছবির সিনেমাটিকভাব বাড়াবে। আর এটি খুব আগের কথা নয় যে, এসব নির্মাতা উদয়পুরের সৌন্দর্যের প্রতি বিশেষভাবে আকৃষ্ট হয়েছেন যে প্রাসাদ আভিজাত্যের সঙ্গে প্রতিটি দৃশ্যে একটি রাজকীয়ভাব তুলে ধরে।
‘রাম লীলা’ ও ‘ইয়ে জওয়ানি হ্যায় দিওয়ানি’র মতো চলচ্চিত্রে ফুটে উঠেছে উদয়পুরের ঐতিহ্যবাহী রাজকীয় স্থাপনাসমূহ। যার মধ্যে বিখ্যাত উদয়পুর প্রাসাদও ছিলো।
কলকাতা
বলিউড ইন্ড্রাস্ট্রি কিন্তু কলকাতার প্রভাবদায়ী ভাবটি কখনো এড়িয়ে যেতে পারেনি। এখানকার কিছু জায়গায় পর্যটনসংক্রান্ত কর্মকাণ্ড সাম্প্রতিককালে বেড়েছে।
কাহানি’ ও ‘ভিকি ডোনার’ ছবিতে দুর্গাপূজা উৎসব চমৎকারভাবে চিত্রায়িত হয়েছে। ‘বারফি’ ছবিতে ট্রামে চড়ার দৃশ্য আমাদের হৃদয় জয় করেছে। যখনই কলকাতায় কোনো সিনেমার শুটিং হয়েছে তখনই ‘সিটি অব জয়’ পরিণত হয়েছে একটি কর্মচঞ্চল জায়গায়।
ইন্ডিয়া গেট, নতুন দিল্লি
ছবির চিত্রায়নের জন্য নির্মাতারা যখনই দিল্লির কথা বিবেচনা করেছেন তখনই ইন্ডিয়া গেট অনেক ছবির অংশ হয়েছে। ‘দিল্লি ৬’, ‘রকস্টার’, ‘থ্রি ইডিয়টস’ ও ‘রং দে বাসন্তি’ প্রভৃতি ছবি দিল্লিকে একটি গুরুত্বপূর্ণ স্থান হিসেবে উপস্থাপন করেছে।
অনেক ছবিতে ইন্ডিয়া গেটের দৃশ্য শুধু দর্শকদের মনে দেশপ্রেমের অনুভূতিই সঞ্চার করেনি, এর পাশাপাশি উৎসাহী পর্যটকদেরকে জায়গাটির সৌন্দর্যকে নতুন করে আবিষ্কার করতে উৎসাহী করেছে।
গুলমার্গ, কাশ্মীর
কাশ্মীরের সঙ্গে বলিউডের ভালোবাসার সম্পর্ক মোটেই সাম্প্রতিক নয়, এটি চলে আসছে অনেক আগে থেকেই। আজও কাশ্মীর বলিউড ইন্ড্রাস্ট্রির প্রিয় জায়গাগুলোর একটি। নয়নাভিরাম জায়গাটির ছবির মতো সুন্দর সব দৃশ্যাবলী অনেক চলচ্চিত্র নির্মাতাকেই অনুপ্রাণিত করেছে।
এখানকার সৌন্দর্যকে সেলুলয়েডের ফিতায় ফ্রেমবন্দি করতে। ‘হায়দার’, ‘হাইওয়ে’, ‘রকস্টার’ প্রভৃতি সিনেমা ছাড়াও আরও অনেক ছবিই কাশ্মীরকে আমাদের হৃদয়ের কাছাকাছি এনেছে।
মুম্বাই
‘সিটি অব ড্রিমস’ বা স্বপ্নের শহর নামে পরিচিত মুম্বাই জায়গা পেয়েছে অনেক ছবিতেই। এখনো এটি মনে হয় যে, বলিউড এই শহরটির যথেষ্ট জায়গা পায়নি।
‘তালাশ’, ‘দ্য আনসার লাইস উইথিন’, ‘ধুম’, ‘ওয়েক আপ সিড’, ‘মুন্না ভাই এমবিবিএস’ প্রভৃতি ছাড়াও আরও অনেক ছবিই মুম্বাইতে চিত্রায়িত হয়েছে।
এতো বেশি ছবির শুটিং এখানে হয়েছে যে, মুম্বাইতে গিয়ে না থাকলেও জায়গাটিকে আপনার কাছে নিজের ঘরবাড়ির মতোই চেনা মনে হবে।
মুন্নার, কেরালা
প্রাকৃতিক সৌন্দর্য ও শীতল পরিবেশের কারণে মুন্নার চলচ্চিত্র নির্মাতাদের নজর কাড়তে সক্ষম হয়েছে। আপনি কি জানেন, ‘চেন্নাই এক্সপ্রেস’ ও ‘লাইফ অব পাই’ এর মতো আলোচিত ছবির কিছু অংশ মুন্নারে চিত্রায়িত হয়েছিলো? যদি না জেনে থাকেন তাহলে ছবি দুটি আবার দেখুন।
আর আপনি যদি ভেবে থাকেন যে, কেরালা শুধু তার শান্ত জলাধারগুলোর জন্যই পরিচিত তাহলে বলিউড আপনাকে একটি বিকল্প দেখিয়ে দেবে। চেষ্টা করুন ও আশাকরি আপনি হতাশ হবেন না।
নাহারগড় দুর্গ, জয়পুর
দৃষ্টিনন্দন সব স্মৃতিস্তম্ভ ও স্থাপত্যকলার জন্য জয়পুর সব সময়ই পর্যটক ও চলচ্চিত্র নির্মাতাদের কাছে জনপ্রিয় ছিলো। তবে যে অবকাঠামোটি আলাদাভাবে বলিউড নির্মাতাদের নজর কেড়েছে তা হলো নাহারগড় দুর্গ।
৭০০ ফুট উঁচু নাহারগড় দুর্গ আমাদেরকে মনে করিয়ে দেয় ‘রং দে বাসন্তি’ অজয় দেবগন ও অভিষেক বচ্চন অভিনীত ‘বোল বাচ্চন’ ছবির বিখ্যাত দৃশ্যগুলোর কথা।
সূত্র : দ্য টাইমস অব ইন্ডিয়া
লেখক: ফ্রিল্যান্স সাংবাদিক ও ভ্রমণ লেখক।
জেএমএস/এমএস