কাতারের যে ৮ স্টেডিয়ামে ফুটবল বিশ্বকাপের খেলা হবে
ফুটবল বিশ্বকাপের বাকি আর মাত্র ২ দিন। এ বছর কাতারে শুরু হতে চলেছে ফুটবল বিশ্বকাপ। কাতারের মোট ৮টি স্টেডিয়ামে এবার হবে খেলা। জানা গেছে, প্রতিটি স্টেডিয়ামে সোলার প্যানেল ফার্ম থাকবে।
থাকছে তাপমাত্রা কমানোর ব্যবস্থা। এ সময়ও কাতারে বেশ গরম থাকবে। তাই ফুটবলার ও দর্শকদের যাতে অসুবিধা না হয় তার জন্যেই এই ব্যবস্থা। জেনে নিন কাতারের ৮ স্টেডিয়াম সম্পর্কিত নানা চমকপ্রত তথ্য-
খলিফা আন্তর্জাতিক স্টেডিয়াম
এই স্টেডিয়ামে একসঙ্গে ৪৫ হাজার ৪১৬ জন মানুষ একসঙ্গে বসে খেলা দেখতে পারবেন। ফুটবল বিশ্বকাপের ৮টি ম্যাচ হবে এখানে। এটি ১৯৭৬ সালে তৈরি হয়। কাতারের পুরুষ ফুটবল দলের স্টেডিয়াম।
এর আগে এশিয়ান গেমস, গালফ কাপ, এএফসি এশিয়ান কাপ ও বিশ্ব অ্যাথলেটিক্স হয়েছে এখানে। ২০০৯ সালে এই স্টেডিয়ামে ইংল্যান্ডের বিরুদ্ধে প্রীতি ম্যাচ খেলে ব্রাজিল। ২০১৯ সালে এই স্টেডিয়ামেই ক্লাব বিশ্বকাপ জেতে লিভারপুল।
আল জানিয়্যুব স্টেডিয়াম
এই স্টেডিয়ামে ফুটবল বিশ্বকাপের মোট ৭টি ম্যাচ অনুষ্ঠিত হবে। অতীতে এটি আল আকরা স্টেডিয়াম নামে পরিচিত ছিল। এই স্টেডিয়ামের ছাদ ঢাকা যায় ও ভেতরে তাপমাত্রা ঠান্ডা করার উদ্ভাবনী ব্যবস্থা আছে।
আরবের বিশেষ নৌকার অনুকরণে তৈরি এই স্টেডিয়ামের নকশা ছড়িয়ে পড়ার পরেই বিতর্ক শুরু হয়েছে। ব্রিটিশ ভাস্কর দামে জাহাজ হাদিদের নকশা উন্মোচনের পরেই অনেকে অভিযোগ করেন, এটি দেখতে নারীদের যৌনাঙ্গের মতো।
প্রবল সমালোচনা হলেও নকশা বদলানো হয়নি। ফুটবল বিশ্বকাপকে সামনে রেখে সবার আগে এই স্টেডিয়ামই তৈরি হয় কাতরে। এই স্টেডিয়ামের দর্শকাসন ৪০ হাজার।
এডুকেশন সিটি স্টেডিয়াম
কাতার ফাউন্ডেশন এলাকার মধ্যেই আছে এই স্টেডিয়াম। বিশ্বকাপের পর কাতারের নারী দল পাকাপাকিভাবে এই স্টেডিয়াম ব্যবহার করবে।
হিরার আদলে তৈরি এই স্টেডিয়ামের নাম দেওয়া হয়েছে ‘মরুভূমির হিরে’। এখানে দর্শকাসন আছে ৪০ হাজার। মোট ৮ ম্যাচ অনুষ্ঠিত হবে এই স্টেডিয়ামে।
রোদে স্টেডিয়ামটি হিরার মত চকচক করে। আর রাতে আলোকসজ্জার ব্যবস্থা থাকছে। গত বছর ফিফার ক্লাব বিশ্বকাপের ফাইনাল হয়েছিল এখানে।
আল বায়াত স্টেডিয়াম
ফুটবল বিশ্বকাপের প্রথম ম্যাচসহ মোট ৮টি ম্যাচ অনুষ্ঠিত হবে এই স্টেডিয়ামে। এর মধ্যে একটি সেমিফাইনালও আছে। এতে একেসঙ্গে ৬০ হাজার দর্শক একসঙ্গে বসে খেলা দেখতে পারবেন।
মরুভূমিতে টাঙানো তাঁবুর মতো দেখতে এই স্টেডিয়াম। কাতারের কেন্দ্রস্থল দোহার থেকে সবচেয়ে দূরে এই স্টেডিয়াম।
অন্যান্য সব স্টেডিয়ামের মতো আল বায়াতেও পাঁচতারা হোটেলের মতো সব ধরনের সুযোগ সুবিধা থাকছে। দর্শকদের সুবিধার জন্যও বিভিন্ন ব্যবস্থা রাখা হয়েছে।
আল-রাইয়ান স্টেডিয়াম বা আহমেদ বিন আলি স্টেডিয়াম
প্রথমে এই স্টেডিয়ামের নাম ছিল আল-রায়ান স্টেডিয়াম। পরে নাম বদলে করা হয়েছে আহমেদ বিন আলি স্টেডিয়াম। কাতারের সংস্কৃতির আদলে তৈরি করা হয়েছে এই স্টেডিয়াম।
এই স্ট্রেডিয়ামে ৪০ হাজার দর্শক বসে খেলা দেখতে পারবেন। মোট ৭টি ম্যাচ হবে এখানে। কাতারের মরুভূমির কাছাকাছি অবস্থিত এই স্টেডিয়াম দেখতেও মরুভূমি সদৃশ্য। তাপমাত্রা এখানে কিছুটা বেশি থাকতে পারে।
আল থুমামা স্টেডিয়াম
এই স্টেডিয়াম দেখতে টুপির মতো। মধ্যপ্রাচ্যের নারীদের একটি বিশেষ টুপি (গাফিয়া)র আদলে তৈরি করা হয়েছে এই স্টেডিয়াম। এখানে মো ৮টি ফুটবল ম্যাচ অনুষ্ঠিত হবে।
এই স্টেডিয়ামের দর্শকাসন ৪০ হাজার। জানা গেছে, বিশ্বকাপের পরেই এর দর্শকাসন কমিয়ে অর্ধেক করা হবে। আসনগুলো বিক্রি করা হবে উন্নত দেশে। স্টেডিয়ামের মধ্যে একটি মসজিদ ও হোটেলও তৈরি করা হবে।
লুসাইল স্টেডিয়াম
উদ্বোধনী ম্যাচ ও ফাইনালসহ মোট ১০টি খেলা হবে এই স্টেডিয়ামে। ৮০ হাজার দর্শকাসন আছে লুসাইল স্টেডিয়ামে। এ বছরই স্টেডিয়ামের উদ্বোধন হয়েছে। অত্যাধুনিক এই স্টেডিয়ামে আছে অনেক সুবিধা।
বিশ্বকাপের পরে এই স্টেডিয়ামের যাবতীয় আসনও বিক্রি করে দেওয়া হবে। এমনকি স্টেডিয়ামটি ভেঙেও ফেলা হবে। কারণ লুসাইলে আর নতুন স্টেডিয়াম নাকি দরকারই নেই।
স্টেডিয়াম ৯৭৪
এই স্টেডিয়ামের অদ্ভুত নামকরণ নিয়ে অনেকের মনেই নানা প্রশ্ন আছে। এ বিষয়ে আয়োজকরা জানিয়েছেন, ৯৭৪টি শিপিং কন্টেনার দিয়ে এই স্টেডিয়াম তৈরি হয়েছে বলেই এমন নামকরণ। এতে দর্শকাসন ৪০ হাজার। মোট ৭টি ম্যাচ হবে এই স্টেডিয়ামে।
জানা গেছে, বিশ্বকাপ শেষ হতেই ভেঙে ফেলা হবে স্টেডিয়ামে। কাতারের সামুদ্রিক এলাকায় অবস্থিত এই স্টেডিয়াম ও এর আশপাশের সৌন্দর্য দর্শকদের মন ভরিয়ে দেবে।
সূত্র: আল জাজিরা
জেএমএস/জেআইএম