একদিনের ট্যুরে আজিয়ান সাগরে যা দেখবেন, যেভাবে যাবেন
ব্রি. জনোরলে (অব.) হাসান মো. শামসুদ্দীন
বেশ ভোরে ঘুম থেকে উঠলাম। আজকে আমরা আজিয়ান সাগরের তিন দ্বীপে একদিনের ট্যুর করবো। আগেই টিকিট কিনে নিয়েছিলাম। সাড়ে ৭ টায় যাত্রা শুরু হবে আমরা সাড়ে ৬টার মধ্যেই জেটিতে হাজির হলাম, তখনো কেউ আসেনি। বড় ক্রুইজ শিপ, ঘাটে লাগানো আছে।
হাইড্রাইকি ক্রুইজ লাইনের জাহাজে আমাদের এই ভ্রমণ হবে। আমরা জাহাজ ঘাটে একটি ছোট শেডের মতো জায়গায় বসলাম। তখন কেবল সূর্য উঠেছে। অন্ধকার কেটে গিয়ে ধীরে ধীরে গাঢ় নীল আকাশ ফর্সা হয়ে সূর্য বেরিয়ে আসছে। এথেন্সে আজিয়ান সাগর পাড়ের মেঘমুক্ত আকাশে সূর্যদয়ের দৃশ্য সপরিবারে উপভোগ করছিলাম, এটি ছিল একটা আনন্দময় মুহূর্ত।
সাড়ে ৭টার সময় জাহাজ প্রস্তুত হলো, তার আগে ক্রুরা আসতে শুরু করলেন। জাহাজে ওঠার আগে একটা কাউন্টার বানালো, চেয়ার, টেবিল ও ছাতা দিয়ে। এখানে চেকার যাত্রীদের টিকিট চেক করে আস্তে আস্তে ভেতরে পাঠাচ্ছে। ততক্ষণে বেশ কিছু যাত্রী চলে এসেছেন। বেশ বড় জাহাজ।
জাহাজের ভেতর ঢুকে পড়লাম। দুপাশে খোলা ডেক। ভেতরে বসার ব্যবস্থা আছে তবে যাত্রীরা সবাই সাগরের দৃশ্য দেখার জন্য বাইরে পেতে রাখা চেয়ারগুলো দখল করছিল। আমরাও চেয়ার দখল করে বসে পড়লাম। একটু ঠান্ডা আবহাওয়া।
হালকা গরম কাপড় আছে আমাদের সঙ্গে। ডেকে বসে সাগরের দৃশ্য দেখছি। সূর্যের আলো পড়ছে সাগরের গাঢ় নীল পানিতে। আকাশ গাঢ় নীল স্বচ্ছ ও মেঘমুক্ত। সাগর, আকাশ আর সূর্যের আলোতে অপূর্ব অনুভূতি সৃষ্টি হচ্ছিল।
এথেন্সের পিরাউস বন্দর থেকে হাইড্রা দ্বীপের দূরুত্ব ৩৭ ন্যাটিক্যাল মাইল বা ৬৯ কিলোমিটার। ক্রুজ লাইনে যেতে দেড় থেকে ২ ঘণ্টা সময় লাগে। এই সময়টা আজিয়ান সাগর দিয়ে জাহাজ চলে। মাঝে মধ্যে দু-একটি দ্বীপের দিগন্ত রেখা দেখা যায়।
সাড়ে ৮টার দিকে আমাদের জাহাজ চলা শুরু করলো। ধীরে ধীরে এথেন্সের তটরেখা দূরে সরে যাচ্ছিল আর দিগন্ত জুড়ে কালচে গাঢ় নীল পানির আজিয়ান সাগরের বুকে আমাদের জাহাজ এগিয়ে চলছিল।
সূর্যের সোনালী আলো মেখে নীল আকাশের নিচে আমরা জাহাজে বসে সাগরের দৃশ্য দেখছিলাম। যাত্রীরাও বিভিন্ন ডেকে ঘোরাঘুরি করে সবাই মোটামুটি এক জায়গায় সেট হয়ে যাচ্ছে। আমরাও কিছুক্ষণের জন্য পুরো জাহাজে একটা চক্কর দিয়ে আসলাম। বসে বসে সাগরের দৃশ্য দেখছি। ছবি তুলছি, সময় কেটে যাচ্ছে।
এক সময় দূরে দিগন্ত রেখায় হাইড্রা দ্বীপের দেখা মিললো। জাহাজ দ্বীপের জেটির দিকে এগিয়ে যাচ্ছিলো পথে অনেক ছোট ছোট বোট, ইয়ট ও ক্রুইজ লাইন দেখতে পেলাম। এগুলো নানা গন্তব্যের উদ্দেশ্যে চলছিল। হাইড্রা দ্বীপের জেটি অনেকটা বাঁকা চাঁদের মতো।
জেটিতে অনেক বোট বাঁধা আছে। অপূর্ব সুন্দর দৃশ্য। আমাদের জাহাজ আস্তে করে জেটিতে ভিড়ে গেল। এই পথে এসব জাহাজ নিয়মিত চলাচল করে বলে তাদের সব কিছুই সেট করা। জাহাজ থামার পর আমরা জাহাজ থেকে দ্বীপে নেমে আসলাম। এখানে আমাদেরকে ২ ঘণ্টা সময় দিল দ্বীপ ঘুরে দেখার জন্য।
হাইড্রা দ্বীপের দৃশ্য অপূর্ব, বাঁকা চাঁদের মতো এই জেটি এলাকায় গড়ে উঠেছে রাস্তা, দোকানপাট ও কিছু সরকারি-বেসরকারি ভবন। পুরো এলাকা সুন্দরভাবে রক্ষণাবেক্ষণ করা ও সাদা, নীল রং করা। এখানে দ্বীপের বামে একটু উঁচু বেদিতে গ্রীক স্বাধীনতা যুদ্ধের বীর এন্ড্রিয়াসের মূর্তি আছে।
জেটি এলাকা থেকে ঢালু রাস্তা উপরের দিকে উঠে গেছে দ্বীপের অভ্যন্তরে যাওয়ার জন্য। হাইড্রা দ্বীপের বিশেষত্ব হলো এখানে কোন গাড়ি কিংবা মোটরসাইকেল নেই। এখানকার বাহন হলো ঘোড়া, ঘোড়ার গাড়ি ও খচ্চর। এদের মাধ্যমে এখানকার পরিবহন ব্যবস্থা চলছে। একদিক থেকে আমরা দ্বীপ দেখা শুরু করলাম।
হাইড্রা দ্বীপের আয়তন ৫০ বর্গ কিলোমিটার ও জনসংখ্যা ২০০০ এর তো। এটি আজিয়ান সাগরের সারনিক গাল্ফের একটি দ্বীপ। জেটিটা পাহাড়ের পাদদেশে ও মূল দ্বীপ এলাকা পাহাড়ের ঢালুতে ধীরে ধীরে উঠে গেছে। কিছু পর্যটক খচ্চরে চড়ে পাহাড়ের উপরের মনেষ্ট্রি দেখার জন্য রওয়ানা হলো।
আমরা স্বাধীনতা যুদ্ধের বীরের বেদিতে গেলাম সেখান থেকে আশেপাশের দৃশ্য দেখে নীচের রাস্তায় নেমে দ্বীপের অন্যদিকে রওয়ানা হলাম। জেটির মাঝামাঝি জায়গায় অনেক দোকানপাট। বেশ কিছু জাহাজ এরই মধ্যে হাইড্রা দ্বীপে পর্যটক নিয়ে এসেছে তাই দোকানগুলো জমজমাট।
এগুলোর সামনেই ঘোড়ার গাড়ি, ঘোড়া ও খচ্চর বাঁধা আছে ঘুরে বেড়ানোর জন্য। অনেকে এই দ্বীপেই দু এক রাত কাটিয়ে যায়। মাঝে মাঝে এখানে অনেক কবি সাহিত্যিক এই দ্বীপে তাদের সময় কাটায় সাহিত্য সাধনায়।
দ্বীপের জীবন যাপন দেখতে দেখতে চলছি। অনেকে মালপত্র বহন করছে হাতে টানা ট্রলি দিয়ে। সানসেট পয়েন্ট বলে একটা জায়গা আছে, সেখানে সুন্দর একটা রেষ্টুরেন্ট, সিঁড়ি দিয়ে নীচে সাগরের কাছে এই রেষ্টুরেন্টে, সেখান থেকে আরো নীচে পর্যটকরা সাগরে নেমে সাঁতার কাটছে।
রং-বেরংয়ের সাঁতারের পোষাক পরা ছেলে মেয়েরা সেখানে রোদ পোহাচ্ছে, সাতাঁর কাটছে আর তাদের অলস সময় কাটাচ্ছে। এখান থেকে দ্বীপের অভ্যন্তরে যাওয়ার জন্য রাস্তা ধাপে ধাপে পাহাড়ের উপর দিকে উঠে গেছে। হাইড্রা দ্বীপে অনেক স্যুভেনিয়রের দোকান আছে, দ্বীপের স্মৃতি হিসেবে কিছু স্যুভেনিয়র কিনলাম।
পুরো দ্বীপের ঘর-বাড়িগুলো পাথরের। এগুলোর বেশিরভাগ সাদা রং করা ও নীল বর্ডার দেয়া। নীল আকাশের নীচে এক শ্বেত শুভ্র পরিবেশ। গাঢ় নীল সাগরের পাড়ে শ্বেত শুভ্র জনবসতি, সব মিলিয়ে এক অপূর্ব দৃশ্য। দুই ঘণ্টা ধরে দ্বীপের নানান জায়গায় ঘুরে বেড়ালাম।
আমাদের যাওয়ার সময় হয়ে গেছে। জেটিতে আবার এক হলাম। জাহাজে উঠতে কিছু সময় লাগলো। সবাই উঠার পর জাহাজ রওয়ানা হলো। সেই আগের পথে জেটি ছাড়লাম। আমাদের পরবর্তী গন্তব্য ছোট দ্বীপ পোরস।
সূর্যালোকিত দিন, নীল আকাশ আর গাঢ় নীল আজিয়ান সাগরের বুকে ভেসে চলছে আমাদের জাহাজ। আমরা এখন চলছি পোরোস দ্বীপের দিকে। হাইড্রা থেকে উঠার পর যাত্রীরা অনেকেই সূর্যের আলো গায়ে মাখার জন্য কাপড় চোপড় কমিয়ে ফেলেছে।
অনেক যুবক যুবতী রোদে মাখামাখি করে অন্তরঙ্গ পরিবেশে সময় কাটাচ্ছে। সাগরে মাঝে মাঝে ইয়ট চলছে। ধনকুবেরদের ইয়ট এই সাগরে ভেসে বেড়ায়। ইয়টগুলোতে সূর্যস্নান এখানকার সাধারণ দৃশ্য। এছাড়া অনেক ফেরি কিংবা বোট চলছে গ্রীসের নানা দ্বীপে পর্যটক ও যাত্রী নিয়ে।
পোরোস সারনিক গাল্ফের মধ্যে গ্রীসের একটা ছোট দ্বীপ। এটা মূল ভূখণ্ড থেকে ২০০ মিটার চওড়া একটা সাগরের চ্যানেল দিয়ে বিচ্ছিন্ন। এই দ্বীপের আয়তন ৩১ বর্গ কিলোমিটার ও ৩৭৮০ জন অধ্যুষিত এই দ্বীপ। ছুটির দিনে এথেন্সের অনেক মানুষ বিনোদনের জন্য এই দ্বীপে আসে।
পোরোস দ্বীপ দুটি অংশে বিভক্ত এই অংশ দুটি একটা ব্রিজ দ্বারা সংযুক্ত। পর্যটকরা নিয়মিত আসে বলে এই দ্বীপ পর্যটনবান্ধব। এখানে সব যানবাহনই চলাচল করে। যথাসময়ে আমাদের জাহাজ পোরোস দ্বীপের জেটিতে ভিড়লো। এখানে সময় দেয়া হলো এক ঘণ্টা।
দুপুর হয়ে গেছে, লাঞ্চের সময় হয়ে এসেছে। জাহাজে লাঞ্চের ব্যবস্থা আছে ও টিকেটের সঙ্গে তার দাম দেওয়া হয়েছে। পোরোস দ্বীপে নেমেই বেশ কিছু যাত্রী একটা গাড়ি ঠিক করে দ্রুত দ্বীপ দেখতে চলে গেল। এসব গাড়ির ড্রাইভার জাহাজের অবস্থানের সময় জানেন ও জাহাজের সঙ্গে তাদের সমন্বয় আছে।
আমরা দ্বীপ দেখতে হেঁটেই রওয়ানা হলাম। জেটিতে অনেক সুন্দর সুন্দর বোট লাগানো। এসব বোট ব্যক্তি মালিকানাধীন। সৌখিন ধনকুবেররা এসব বোটে সাগরে ঘুরে বেড়ায় তাদের অবসর সময়ে। রাস্তার দু’পাশে ফুটপাত, এখানকার ফুটপাতগুলো বেশ চওড়া, সাগর পাড়ের দিকের ফুটপাতে মাঝে মধ্যে বসার ব্যবস্থা আছে। সেখানে কিছু গাছ আছে যেগুলোর ছায়াতে মানুষ বসতে পারে।
আজকে দিনটা বেশ রোদেলা, গরমও লাগছিল বেশ। একটা আইসক্রিম পার্লারে ঢুকলাম সেখানে আইসক্রিমের অর্ডার দিলাম। দ্বীপে নানা ধরনের বাদাম, ফল ও খাবারদাবার বিক্রির ব্যবস্থা আছে। পর্যটকদের জন্য দ্বীপের স্মৃতিচিহ্ন হিসেবে অনেক সুভেনিরও পাওয়া যায় দোকানগুলোতে।
আমরা হেঁটে হেঁটে সাগর ও দ্বীপের দৃশ্য দেখে ফিরে আসতে আসতেই সময় শেষ হয়ে গেল। এরই মধ্যে গাড়িতে করে যাওয়া পর্যটকরাও জাহাজের কাছে দ্বীপে চক্কর দিয়ে ফিরে এসেছে। আমরা আবার জাহাজে উঠলাম। তখন লাঞ্চ টাইম। এখানে দু’ভাগে লাঞ্চ দেয়া হয়। পর্যটক অনেক বেশি তাই প্রথমে এক গ্রুপ ও তারপর আরেক গ্রুপের খাবারের ব্যবস্থা। তবে সবারই খাবারের জন্য ক্ষুধা লাগাতে খাবারের ঘরের সামনে বেশ ভিড় দেখলাম।
জাহাজের কর্মীরা টিকেট দেখে দেখে ভেতরে ঢুকতে দিচ্ছে। আমরা ভেতরে চলে এলাম। বেশ সুন্দর খাবারের ব্যবস্থা, খাবার লাগানো আছে দুটো টেবিলে বসে ও দাঁড়িয়ে খাবার খাওয়ার ব্যবস্থা আছে। মাছ, মাংস, ব্রেড, রাইস, সবজি, সালাদ, ড্রিংকস, কেক, সুইটস, ফ্রুট ইত্যাদি নিয়ে বেশ বিশাল আয়োজন। মজা করে লাঞ্চ খেয়ে বাইরে চলে আসলাম।
লাঞ্চের সময়ও পোর্ট হোটেল পাশের চেয়ারে বসে বাইরের দৃশ্য দেখছিলাম। আমরা ধীরে ধীরে আজিনা দ্বীপের দিকে চলছি। এটা আমাদের ফিরতি যাত্রা, আজিনা দ্বীপ দেখে আমরা ফিরে যাব আমাদের গন্তব্য এথেন্সে। বাইরে সাগরের দৃশ্য অপূর্ব।
মোটামুটি আজকের ভ্রমণে আবহাওয়ার কারণে আনন্দের সঙ্গে সময় কেটে যাচ্ছিল। গ্রীসে এসে সাগর দেখার আনন্দ পুরোপুরি ভোগ করছিলাম। ভূ-মধ্যসাগরে এর আগে সাইপ্রাস থেকে মিশরের পোর্টসৈয়দ পর্যন্ত গিয়েছিলাম।
এবার আজিয়ান সাগরের মাঝে জাহাজে করে বেড়াচ্ছি। অপূর্ব সুন্দর ভূ-মধ্যসাগরীয় পরিবেশে থাকতে পেরে মনটা আনন্দে ভরে উঠছিল।
পোরোস দ্বীপ এথেন্স থেকে ৫৮ কিলোমিটার আর আজিনা দ্বীপ থেকে এথেন্সের দূরত্ব ২৭ কিলোমিটার। সবচেয়ে দূরের হাইড্রা দ্বীপে প্রথমে গিয়ে তারপর ফেরার পথে বাকি দুই দ্বীপ ঘুরে আবার এথেন্সে ফিরে আসার এই ক্রুজ। আজিনা দ্বীপ এথেন্সের কাছে হওয়াতে অনেক এথেন্সবাসী গ্রীষ্মকালে এখানে এসে বসবাস করে।
এজন্য অনেকেরই এই দ্বীপে বাড়ি আছে। এটা প্রায় ৮৭.৫ বর্গ কিলোমিটার আয়তনের দ্বীপ। এই দ্বীপে আগ্নেয়গিরি আছে ও দ্বীপের দুই-তৃতীয়াংশ জুড়ে এর অবস্থান। আজিনা দ্বীপের সমতল এলাকা বেশ উর্বর ও এখানে আঙুর, কাঠবাদাম, জলপাই ও ডুমুর প্রচুর পরিমাণে উৎপন্ন হয়।
পেস্তা বাদামের জন্য এই দ্বীপ বিখ্যাত। এই দ্বীপের বিচগুলোও বেশ জনপ্রিয়। এথেন্সের পিরাউস বন্দর থেকে হাইড্রোফয়েলে ৪-১৫ ইউরোর বিনিময়ে অনেকে এসব বীচে এসে সূর্যস্নান করে। তাছাড়া এই দ্বীপে আসার জন্য নিয়মিত ফেরি আছে। এথেন্সের মূল ভ-খণ্ড থেকে এক ঘণ্টায় এখানে আসা যায়।
আজিনা দ্বীপের জেটিতে তিনটার দিকে আমরা নামলাম। এখানে বেশ প্রশস্ত জেটি এলাকা, সেখান থেকে হেঁটে পাশের রাস্তায় যেতে হয়। রাস্তা পার হয়ে আমরা একটু ভেতরের গলিতে গেলাম। ভেতরে মানুষের ঘর-বাড়ি ও সঙ্গে ছোট ছোট দোকনপাট। এসব দোকানে পেস্তা বাদামসহ নানা ধরনের বাদাম বেশ সুলভ মূল্যে পাওয়া যায়।
আমরা বেশ কয়েক প্যাকেট বাদাম কিনলাম। এখানে অনেক দোকানপাট আছে ও জিনিসের দামও হাতের নাগালের মধ্যে। বিচের এই এলাকায় ক্যাফে আছে। রাস্তার পাশে চেয়ার টেবিল পাতা। দোকান থেকে কফি ও হালকা নাস্তা এনে মানুষজন এখানে বসে খাচ্ছেন। এলাকা পরিচ্ছন্ন, ঘরবাড়িগুলো সুন্দরভাবে রং করা ও দৃষ্টিনন্দন।
সেখানে ঘণ্টা দেড়েক সময় দেয়া হলো ঘুরে দেখার জন্য। ভেতরে ঘোরাঘুরি করে ও কিছু কেনাকাটা শেষে আবার সাগর পাড়ে চলে এলাম। সাগর পাড়ে অন্যান্য দ্বীপের মতোই এখানে অনেক বোট ও ইয়ট বাঁধা। এখানেও রাস্তায় বসার ব্যবস্থা আছে। আমরা সফট ড্রিংকস নিয়ে বেঞ্চে বসলাম। একটু দূরেই চার্চ অব সিওটুকুস সেখানে গিয়ে ছবি তুললাম।
এক সময় আজিনার সঙ্গে এথেন্সের বেশ ভালোই সংঘাত হতো অবশ্য সেটা খৃষ্টপূর্ব ৫ম থেকে ৬ষ্ঠ শতাব্দীর মধ্যকায় সময়ে। নগর রাষ্ট্রগুলো তখন একটার সঙ্গে আরেকটা ক্ষমতার লড়াই চালিয়ে যেত। এখন তাদের সুন্দর সহবস্থান, ফলশ্রুতিতে উন্নতি ও উন্নয়ন।
আমাদের দ্বীপ ভ্রমণের সময় শেষ, আবার জাহাজে উঠে বসলাম। এসময় জাহাজে একটা সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান হয়, যাত্রীরা সবাই জাহাজের ভেতরে বসে, গ্রীক গান, নাচের অনুষ্ঠান হলো, অনেক পর্যটক জাহাজের শিল্পীদের সঙ্গে নাচ গানে অংশ নিলেন। সবাই বেশ আনন্দের সঙ্গে ভিন্ন সংস্কৃতির অনুষ্ঠান উপভোগ করলেন।
এথেন্সে যখন জাহাজ ফিরে আসে তখন সন্ধ্যা হয়ে গিয়েছে। নীচে নেমে আসার পর যাত্রীরা যার যার ট্রাভেল এজেন্টের বাসে কিংবা ট্যাক্সি নিয়ে রওয়ানা হলো। আমাদের গাইড মাইকেল আমাদেরকে নিতে আসলেন।
তিনি বিবাহিত, তার বাড়ি ক্রেটা দ্বীপে। তিনি বললেন, তাদের দ্বীপ অনেক সুন্দর ও কাজের জন্যই তিনি এখানে থাকেন, তবে তার মন পড়ে থাকে ক্রেটা দ্বীপে। তার সঙ্গে গল্প করতে করতে হোটলে ফিরে এলাম। আর সঙ্গে নিয়ে এলাম আজিয়ান সাগরে কাটানো একটা সুন্দর দিনের স্মৃতি।
লেখক: সদস্য, বাংলাদশে ট্র্যাভলে রাইর্টাস অ্যাসোসয়িশেন।
জেএমএস/জিকেএস