ফুলের স্বর্গরাজ্যে কখন কীভাবে যাবেন?
মাহবুব সাকিব
প্রায় ১০ বছরের পরিকল্পনা ভ্যালি অব ফ্লাওয়ার দেখতে যাবো। শুনেছি সে এক স্বপ্নীল উদ্যান। প্রাকৃতিকভাবে শত শত ফুল ফোটে সেখানে। বহুবার প্ল্যান নিয়েও ভেস্তে যায়, কখনো বন্ধু জোগাড় হয় না, কখনো আবার সময়।
যাই হোক, অবশেষে দুই বন্ধু সিদ্ধান্ত নিয়েই নিলাম এবার যাবোই। তারপর কাঁধব্যাগ গুছিয়ে নিয়ে প্রস্তুত হলাম ফুলের স্বর্গরাজ্যে যাওয়ার। ১২ই জুলাই ঢাকা থেকে রওনা হলাম বেনাপোল স্থলবন্দরের দিকে সেখানে দিয়ে বর্ডার পারি দিয়ে কলকাতা যাব। তারপর কলকাতা থেকে গন্তব্যে।
ঢাকার মালিবাগ থেকে সোহাগ পরিবহন কাউন্টার থেকে বাস ছাড়লো রাত সাড়ে ১০টায়। এবার যাওয়ার আরেকটি আগ্রহ ছিলো আমাদের বাস পদ্মা সেতু পারি দেবে। রাতের পদ্মা নিশ্চয়ই অনেক সুন্দর হবে, এই ভাবনায় উচ্ছ্বসিত হলাম।
সেই আগ্রহ নিয়েই সামনে যাচ্ছি। রাত প্রায় ১১ টার দিকে অপরুপ পদ্মা পারি দিলাম আর উপভোগ করলাম এর বিশালতা। যাই হোক রাত ১২টার দিকে ফরিদপুর পারি দিয়ে মাগুরা ঢুকছি আর ভাবছি কত দ্রুত কোথায় চলে আসলাম, ব্রিজটা না থাকলে হয়তো কম সময়ে এতোটা পথ আসা ছিল শুধুই কল্পনাতীত।
ভোর ৪টার দিকে বেনাপোল পৌঁছালাম। বর্ডার খুলবে সকাল সাড়ে ৬টায়। অপেক্ষা ছাড়া এখন কী আর করার! দুই বন্ধু বসে অপেক্ষা আর চায়ের কাপে চুমুক। বর্ডার খুলে কার্যক্রম শুরু হলো কিন্তু দুই পাড়ে প্রায় হাজার হাজার মানুষ, বুঝতে পারছিলাম অনেক সময় লাগবে।
আমরা বেলা ১২টার দিকে দুই দেশের ইমিগ্রেশন শেষ করে বর্ডারের পাশে এক দোকান থকে টাকা চেঞ্জ করে রুপি করিয়ে কলকাতার উদ্দেশ্যে যাত্রা শুরু করলাম। প্রায় ৫ ঘণ্টা পর গিয়ে পৌঁছালাম কলকাতা শহরে। তখন শরীরে ভীষণ ক্লান্তি। একটি হোটেলে রুম ঠিক করে উঠে পরলাম। এবার রেস্ট। কাল বহুদুরের যাত্রা আবার শুরু করতে হবে।
১৪ই জুলাই বেলা ১২টায় আমাদের ফ্লাইট কলকাতা থেকে উত্তরাখন্ডের রাজধানী দেহরাদুনে। যথাসময়েই ফ্লাইট ছাড়লো। আমরা দেহরাদুন গিয়ে পৌঁছালাম বেলা ৩টার দিকে। এয়ারপোর্ট থেকে নেমেই দেখি হালকা বৃষ্টি হচ্ছে। আবহাওয়া খুবই আরামদায়ক ছিলো। তাপমাত্রা ২০ এর মতো হবে।
এয়ারপোর্ট স্ট্যান্ড থেকে ট্যাক্সি রিজার্ভ করলাম ঋষিকেষ বাস স্ট্যান্ডের কাছে। কারণ পরদিনা আমদের বাস স্ট্যান্ড থেকেই যশিমঠ যেতে হবে। তাই হোটেলটা বাস স্ট্যান্ডের কাছে নেওয়াই ভালো হবে। আমরা এসে পৌঁছালাম ঋষিকেষ। কিন্তু সেখানে গিয়ে কোনো সাধারণ হোটেল পেলাম না।
সেখানকার বেশিরভাগ হোটেলে যেসব হোটেল আছে সেগুলো বিদেশিরা থাকতে হলে আলদা একটি ‘সি ফরম’ ফিলাপ করে জমা দিতে হবে। ওই ফরম পুলিশের কাছে পাঠানোর পর তাদের তদন্ত সাপেক্ষেই কোনো ব্যক্তি হোটেলে রুম পাবেন। আমরা এতো ঝামেলা করতে চাচ্ছিলাম না।
তবে সাধারণ হোটেলে এসব ঝামেলা থাকে না। অনেকে বুদ্ধি দিলেন, সেখান থেকে ৩/৪ কিলোমিটার দূরে তপোভান গেলে নাকি মনমতো অসংখ্য হোটেল পাওয়া যাবে। আমরা সেখানে রওনা দিলাম। এরপর এক অটোরিকশা চালকের সাহায্য নিয়ে হোটেল পেলাম। পাসপোর্ট আর ভারতীয় ভিসার ফটোকপি নিয়ে আমাদেরকে হোটেলে রুম দিলেন মালিক।
যাক অবশেষে শান্তি। হোটেল পাওয়া গেলো। হোটেলে উঠে রেস্ট তারপর এক ঘুম। মাঝখানে খাবার এনে খেয়ে নিলাম। পরদিন খুব ভোরে রওনা দিতে হবে। ভোর ৫টায় রুম চেক আউট করে বের হয়ে গেলাম। বাস স্ট্যান্ডের কাছেই ছিলাম তাই সেখানে পৌঁছাতে দেরি হলো না। বাস ছাড়লো সকাল ৬টায়।
পাহাড়ি রাস্তা বেয়ে বাস ছুটে চললো আর সঙ্গে চলছে গঙ্গা নদী। ঘণ্টাখানেক চলার পর ড্রাইভার সাহেব নাস্তার ব্রেক দিলেন। বাস থেকে নেমে পাশের এক হোটেলে খেতে বসলাম, সেখানকার সহজ নাস্তা হলো আলু-পারোটা আর চা। নাস্তা শেষে বাস আবার চলতে শুরু করল। প্রায় ৩০০ কিলোমিটার রাস্তা, সারদিনের ব্যাপার। শুনেছি ড্রাইভার সাহেব মিনিমাম ৩ বার ব্রেক দেবেন।
প্রায় ৮০ কিলোমিটার পারি দেওয়ার পর আসলাম এক ঐতিহাসিক স্থানে, নাম তার দেবপ্রয়াগ। নাস্তার ব্রেক আর এই সুযোগে নেমে গেলাম আর অবাক পলকে তাকিয়ে রইলাম কী অপরূপ গঙ্গা নদী। এটিই সেই জায়গা যেখান থেকে অফিসিয়ালি গঙ্গা নদী শুরু হয়েছে। মানে আমাদের পদ্মা। চিন্তা করা যায় এখান থেকে বাংলাদেশ প্রায় ১৮০০ কিলোমিটার। এতো পথ পারি দিয়ে এই গঙ্গা বাংলাদেশে পদ্মা নামে প্রবেশ করেছে। কিছু ছবি আর ভিডিও নিয়ে কালের সাক্ষী হয়ে রইলাম।
বাস আবার ছাড়লো পাহাড়ি ভয়ংকর সব বাঁক দিয়ে আমাদের বাস ছুটে চলল যশিমঠের দিকে। বিকেল ৫টার দিকে গিয়ে পৌঁছালাম যশিমঠ। মাঝখানে আরেক বার আমাদের দুপুরের খাবারের বিরতি ও ছিল। যাই হোক বাস থেকে ক্লান্ত শরীর নিয়ে নামলাম। একটা ভয় ছিল আবার সেই হোটেল নিয়ে। তবে প্রথম হোটেলে গিয়েই রুম পেয়ে গেলাম। আর দেরি করলাম না ১৫০০ রুপি ভাড়া দিয়ে একটা রুম নিয়ে নিলাম। হোটেলে উঠে ফ্রেশ তারপর খাওয়া-দাওয়া ও ঘুম।
খুব ভোরে ঘুম থেকে উঠলাম। কারণ আজ আমাদের অনেক দূরে যেতে হবে। আবার ট্রেকিংও করতে হবে। তাই আর দেরি করলাম না, চলে গেলাম যশিমঠ থেকে গোবিন্দঘাট যাওয়ার ট্যাক্সি স্ট্যান্ডে। সেখানে গিয়ে হালকা নাস্তা সেড়ে ট্যাক্সিতে উঠে গেলাম। গাড়ি চলতে লাগলো হিমালয়ের বড় বড় পাহাড়ি রাস্তা দিয়ে, কী চমৎকার সেই দৃশ্য। আমরা কিছু দূর যাওয়ার পর ড্রাইভার গাড়ি থামিয়ে দেখালো এই জায়গার নাম বিষ্ণুপ্রয়াগ।
এখানে চীন থেকে বয়ে আসা ধোলি গঙ্গা নদী আর অন্য পাশ থেকে সতোপন্থ হিমবাহ থেকে বয়ে আসা অলকানন্দা মিলেছে ও এটিই প্রথম প্রয়াগ। এ রকম ৫টি প্রয়াগ পাড়ি দিয়ে গঙ্গা নদীর সৃষ্টি। মন ভরে সেই জায়গা উপভোগ করলাম। তারপর আবার আমাদের গাড়ি চলা শুরু করল।
প্রায় ঘণ্টাখানেক যাওয়ার পর আমরা পৌঁছালাম গোবিন্দঘাট। এখানে থেকে এই গাড়ি আর যাবে না। আমাদের আরেকটি গাড়ি ধরতে হবে, সেটি এখান থেকে প্রায় ৪ কিলোমিটার পাড়ি দিয়ে নিয়ে যাবে পুলনা গ্রামে। একদম পাহড়ের উপরে। নিচ থেকে সেই রাস্তা দেখেই রক্ত হিম হয়ে আসছিলো। কিন্তু যেতে তো হবেই।
প্রায় ২০-২৫ মিনিট আঁকাবাঁকা রাস্তা পাড়ি দিয়ে আমরা অবশেষে পৌঁছালাম পুলনা গ্রাম। এখন এখান থেকেই আমাদের ট্রেক শুরু হবে গাংগারিয়া গ্রামের উদ্দেশ্যে। শুরুতে আমরা একজন পোর্টার নিয়ে নিলাম। আমাদের দুই বন্ধুর ব্যাগ দিয়ে দিলাম তার কাছে, কারণ এই ভারি ব্যাগ নিয়ে ট্রেক খুব কষ্টসাধ্য।
পোর্টারের চার্জ নিলো এক হাজার রুপি। একজন পোর্টার মিনিমাম ২০ কেজি বহন করতে পারে, এক্ষেত্রে আমাদের দু’জনের ব্যাগ তেমন ভারি হবে না। খুব বেশি হলে ১৩-১৪ কেজি। যাই হোক অবশেষে পাহাড়ের উপরের দিকে উঠতে শুরু করলাম। প্রায় ১০ কিলোমিটার হাঁটতে হবে।
হাঁটতে কষ্ট হলেও আশেপাশের প্রকৃতি দেখে সেই কষ্ট দূর হয়ে যায় নিমিষেই। দূরে পাহাড়ের গা বেয়ে ঝরনা বয়ে চলেছে। সবুজ পাইন দেবদারু গাছের সারি। দুই পাহাড়ের মাঝখান দিয়ে বয়ে চলছে খরস্রোতা নদী। সেই নদীর উপর ছোট ছোট ব্রিজ পারি দিয়ে আমরা এগিয়ে চলছি।
দুপুর ২টার দিকে এসে পৌঁছালাম পুলনা গ্রামে। প্রায় ৬ ঘণ্টা লাগে আমাদের এই ১০ কিলোমিটার ট্রেক করে আসতে। অনেকটাই ক্লান্ত হয়ে গেলাম, কিন্তু আমাদের সঙ্গে অনেক আভিযাত্রী ছিলেন। ভ্যালি অব ফ্লাওয়ার বাদেও এই স্থানের বিশেষ গুরুত্ব আছে, কারণ সেখানে আছে একটি ট্যাম্পল। যার নাম হেমকুন্দ সাহিব ট্যাম্পল।
এই হেমকুন্দ সাহিব মন্দির ভ্যালি অব ফ্লাওয়ারের পাশে প্রায় ১৪ হাজার ফিট উপরে পাহাড়ের চূড়ায় অবস্থিত। এখানে প্রচুর শিখ ধর্মের মানুষ আসে। স্থানটি বিখ্যাত হওয়ার কারণ হলো এই ট্যাম্পল পৃথিবীর সবচেয়ে উঁচুতে অবস্থিত শিখ ট্যাম্পল। আমাদের প্ল্যান ছিলো সেখানেও যাওয়ার।
তবে সময় স্বল্পতার কারণে যাওয়া হয়নি সেখানে। শুধু ভ্যালি অব ফ্লাওয়ার দেখেই চলে আসি আমরা। যাই হোক অবশেষে পুলনা গ্রামে পৌঁছে এক হোটেল ঠিক করি, অবশ্য এখানেও হোটেল পেতে কোনো সমস্যা হয়নি। আমরা দুই রাত এই হোটেলে ছিলাম, বেশ ভালো হোটেলটি। আশপাশে পাইন দেবদারু গাছ আর বরফের পাহাড়।
পরদিন সকালে ১৭ই জুলাই আমরা নাস্তা সেড়ে বের হলাম ভ্যালি অব ফ্লাওয়ারে যাওয়ার উদ্দেশ্যে। প্রায় ৪ কিলোমিটার ট্রেক। কিছুদূর যাওয়ার পর এলো চেক পোস্ট। সেখান থেকে পার্মিট নিলাম প্রতিজন চার্জ ৬০০ রুপি ফরেনারদের জন্য, আর ভারতীয়দের জন্য ১৫০ রুপি।
পার্মিট নিয়ে সামনে চলা শুরু করলাম। যত সামনে যাচ্ছি, ততই মনে হচ্ছে প্রকৃতির মধ্যে হারিয়ে যাচ্ছি। পুষ্পাবতী নদী পাহাড়ের বুক চিরে জোর শক্তি নিয়ে বয়ে চলছে। সে কি শক্তি পানির। সামনে যাওয়া যাচ্ছে না, পাথরের বুকে পানি আছড়ে পরে কুয়াশার সৃষ্টি হচ্ছে।
আমরা সেই পথ পাড়ি দিয়ে সামনে চলতে শুরু করলাম। সামনে এবার এক বড় পাহাড়। এই পাহাড় পারি দিলেই ভ্যালি অব ফ্লাওয়ার। তবে এই পাহাড় আর শেষ হয় না, উঠতে উঠতে ক্লান্ত হয়ে যাচ্ছি। তবে এই পাহাড়ের রাস্তা আর শেষ হয় না। প্রায় ২ ঘণ্টা লাগলো পাহাড় পারি দিতে।
যেই পাহাড় পারি দিয়ে সামনে গেলাম চোখের সামনে ফুটে উঠলো এক নয়নাভিরাম ভ্যালি। কি যে সুন্দর লাগছিলো দেখতে। তবে এটা তো মূল ভ্যালি নয়। সেখানে তো অনেক ফুল ফুটে থাকবে। আমরা চলতে শুরু করলাম ভ্যালি ধরে। আর অপেক্ষা কখন আসবে সেই ফুলের বাগান।
আরও প্রায় আধাঘণ্টা চলার পর চোখের সামনে ফুটে উঠলো সেই ভ্যালি। এক স্বর্গীয় বাগান। এই নিরবতা, প্রকৃতির সুর, কলতানি এসব তো কিছু একমাত্র স্বর্গীয় বাগানেই মিলবে। প্রায় ২ ঘণ্টার মতো ছিলাম সেই ফুলের ভ্যালিতে। সেখানকার সৌন্দর্য আসলে ভাষায় প্রকাশ করার মতো না।
হৃদয়ে অনেক স্মৃতি নিয়ে ভ্যালি অব ফ্লাওয়ার দেখে বিকেলে ফিরে আসলাম পুলনা গ্রামে। আসলে ভ্যালিতে রাতে থাকার অনুমতি নেই। সকাল ৭-৫টা পর্যন্ত এই ভ্যালি খোলা থাকে। এছাড়া অন্য সময় থাকা যায় না।
এরপর ফিরে আসলাম গাঙ্গগারিয়া গ্রামে। এরপর বিকেলে খাবার খেয়েই রেস্ট নিলাম। রাতে তাড়াতাড়ি খেয়ে ঘুম। সকালে উঠে আবার আমাদের পাহাড়ের নিচে নামতে হবে, যেতে হবে পুলনা গ্রাম হয়ে গোবিন্দঘাট। সেখান থেকে আবার ট্যাক্সি নিয়ে যোশিমঠ হোটেলে যেতে হবে।
তাই তাড়াহুড়ো করে সকালে বের হলাম বেলা ১০টার দিকে। পৌঁছে গেলাম পুলনা গ্রামে। সেখান থেকে গেলাম গোবিন্দঘাট। তারপর সেখানে কিছু খাবার খেয়ে গাড়িতে উঠে বসলাম যোশিমঠের উদ্দেশ্যে। অবশেষে ঘণ্টাখানেক অপেক্ষার পর গাড়ি ছাড়ল।
গাড়িটা যখন গোবিন্দঘাট থেকে মেইন রোডে উঠে সামনের দিকে যোশিমঠের দিকে যেতে লাগলো, আমি হুট করে একটু পেছনে ফিরলাম। এমন এক দৃশ্য দেখলাম আমি আবেগাপ্লুত। পেছনে বাদরিনাথের রাস্তায় হিমালয়ের এক সাদা শৃঙ্গ যেন আকাশ ছুয়ে আছে। সে এক অপরূপ দৃশ্য।
ঘণ্টাখানেক পর এসে পৌঁছালাম যোশিমঠ। প্ল্যান ছিলো পরদিন চলে যাবো কিন্তু বন্ধু বললো এখানে যখন এসেছি তাহলে অলি গ্রামটা দেখেই যাই। পাহাড়ের একদম উপরে এই গ্রাম। শুনেছি এখান থেকে নাকি নন্দা দেবি পাহাড় দেখা যায়। নন্দা দেবি ভারতের একমাত্র সবচেয়ে উচু পর্বত। অলি খুব সুন্দর কিন্তু সেটা শীতের সময়। শীতে এখানে প্রচুর স্নো-ফল হয়। তখন বিভিন্ন খেলা হয় সেখানে।
অলি বিখ্যাত স্নো-স্কেটিং এর জন্য। কিন্তু এই বর্ষা মৌসুমে কী ভালো লাগবে? সেটা নিয়ে একটু দ্বিধায় ছিলাম। পরে ভাবলাম যেহেতু এখানে আছি তাহলে দেখে আসা যায়। খুব দূরে ক্যাবল কারে গেলে প্রায় ৫ কিলোমিটার। আমরা তারপর গেলাম ক্যাবল কার স্টেশনে। তবে ভাগ্য খারাপ প্রায় এক ঘণ্টা বসে রইলাম কিন্তু ক্যাবল কার আর ছাড়ছে না। মিনিমাম ৮ জন লোক না হলে নাকি ছাড়ে না এই ঝুলন্ত গাড়ি!
আমরা অনেক সময় বসে রইলাম কেউ আর আসলো না। কারণ এখন অব সিজনে অলিতে কেউ যায় না। ঘণ্টাখানেক অপেক্ষার পর ভাবছি কী করি? তখন টাক্সি বুক করলাম, সেটি আমাদের নিয়ে যাবে সেখানে ঘণ্টা দুয়েক থাকবে তারপর গাড়ি আমাদের নিয়ে আসবে। গিয়ে গাড়ি ছেড়ে দিলে আবার গাড়ি পাওয়া যায়না। তাই গাড়ি বুক করে নিলাম।
আমরা গিয়ে অবশেষে অলি পৌঁছালাম বিকেলে। যাওয়ার পথে প্রচুর আপেল গাছ দেখতে পেলাম। আবারো আঁকাবাঁকা পথ পাড়ি দিয়ে গাড়ি মনে হচ্ছে আকাশে উঠে যাচ্ছে। এতো উপরে সেই অলি। অলি জায়গাটা দেখে কাশ্মীরের গুলমার্গের কথা মনে পরলো। অনেকটাই এমন। অলি খুব সুন্দর। আমরা গিয়ে পাহাড়ের বুকে শুয়ে উপভোগ করছি আর দেখছি অলিকে। হঠাৎ সামনে আসলো পুরো হিমালয়ে রেঞ্জকে উঁকি দিয়ে বের হয়ে আসছে নন্দাদেবী পর্বত। সে এক অসাধারণ দৃশ্য।
অলি ঘুরে আবার নিচে নেমে আসতে থাকলাম। রেখে আসলাম কিছু স্মৃতি। আফসোস রয়ে গেলো আর কিছুদিন এখানে যদি থাকতে পারতাম। তাহলে হয়তো কিছুটা মন শান্ত হত। কিন্তু কী আর করার ফিরে যেতে হবে আবার বহু দূর। অলি থেকে নিচে নামার সময় দেখতে পেলাম সেখানে প্রায় প্রতিটা বাড়িতেই আপেল গাছের বাগান।
সে কী চমৎকার দেখতে এতো সুন্দর পরিবেশ আবার পাহাড়ের গায়ে গায়ে আপেল গাছের বাগান। আমরা গাড়ি থামিয়ে একটা বাগানের সামনে থামলাম। কিছু আপেল খেলাম আর ক্যামেরায় বন্দি করে নিলাম সেসব দৃশ্য। গাছ দৃশ্য এসব আর তো আর নিতে পারবো নাম ছবিতেই সব নিয়ে যাই।
অবশেষে এসে পৌঁছালাম যোশিমঠ। হোটেলে রেস্ট নিলাম, পরদিন খুব সকালে হোটেলের নিচেই বাস পেলাম ঋষিকেষ যাওয়ার। বাসে উঠে গেলাম। প্রায় ১০ ঘন্টার জার্নি শেষে আবারো এসে পৌঁছালাম ঋষিকেষে। এবার প্ল্যান করলাম আমাদের যেহেতু ঋষিকেষে কোনো কাজ নেই তাহলে আমরা দিল্লি চলে যাই।
রেল স্টেশন খুঁজে বের করি। আবশেষে স্টেশন খুঁজে পেলাম। ঋষিকেষ থেকে খুব বেশি দূরে না। একটি অটো ভাড়া করে সেখানে গেলাম। দুই বন্ধুর ভাড়া আসলো ১০০ রুপি। রেল স্টেশনে ঢুকে অবাক হলাম এতো সুন্দর সাজানো গুছানো স্টেশন। আসলে স্টেশন নতুন হয়েছে তাই এতো সুন্দর।
আমরা গিয়ে টিকেট কাউন্টার খুঁজে বের করে দিল্লির টিকেট কাটলাম, বিকেল ৫টায় ট্রেন। এখন ৪টা বাজে। দেখতে দেখতে সময় চলে গেল। ট্রেন ছাড়ল যথাসময়ে, রাত ১২টার দিকে দিল্লি রেল স্টেশনে পৌঁছালাম।
তারপর দিল্লীতে দু’দিন থেকে সরাসরি ঢাকায় ফ্লাইটে মাত্র আড়াই ঘণ্টায় ঢাকা ফিরে আসলাম। আর সঙ্গে নিয়ে আসলাম অসংখ্য স্মৃতি।
লেখক: ফিজিক্যাল থেরাপিস্ট ও ট্রাভেলার।
জেএমএস/এমএস