দেখে আসুন কাঠের তৈরি শতবর্ষী মসজিদ
রুবেল মিয়া নাহিদ
দক্ষিণ এশিয়ার একমাত্র কাঠের তৈরি শিল্পসমৃদ্ধ দৃষ্টিনন্দন মুসলিম স্থাপত্যকলা শতবর্ষী মমিন মসজিদ। পিরোজপুরের মঠবাড়িয়া উপজেলার উদয়তারা বুড়িরচর গ্রামের মমিন উদ্দিন আকন ঊনবিংশ শতাব্দীর শুরুর দিকে মসজিদটি নির্মাণ করেন। সম্পূর্ণ নিজস্ব শৈল্পিক ভাবনা ও অভিজ্ঞতা দিয়ে তিনি মসজিদটি তৈরি করেন। যা শিল্পকর্মের অপূর্ব নিদর্শন হিসেবে পরিচিত। বিচিত্র কারুকাজখচিত সম্পূর্ণ কাঠ দিয়ে তৈরি এ মসজিদ স্থানীয়ভাবে ‘কাঠ মসজিদ’ নামে পরিচিত।
নির্মাণকাজ
১৯১৩ সালে মসজিদের নির্মাণকাজ শুরু হয়। পিরোজপুরের নেছারাবাদ থেকে হরকুমার নাথকে মাসিক ৪০ টাকা বেতনে প্রধান মিস্ত্রি হিসেবে নিয়োগ করা হয়। ২২ জন মিস্ত্রি ৭ বছর ধরে নির্মাণকাজ শেষ করেন। ১৯২০ সালে মসজিদটি সম্পূর্ণ হয়। মমিন উদ্দিন আকন সব সময় নির্মাণকাজ পরিচালনা করতেন। এর কারুকাজ সূক্ষ্মভাবে পরীক্ষা করে দেখতেন। কারণ বহু দুষ্প্রাপ্য ও মূল্যবান কাঠ দিয়ে এটি তৈরি।
উপাদান
মসজিদটি তৈরিতে ব্যবহার করা হয়েছে লোহাকাঠ ও সেগুনকাঠ। কাঠগুলো মিয়ানমার, ত্রিপুরা ও আসাম থেকে সংগ্রহ করা হয়েছিল। কাঠামো তৈরিতে লোহার পেরেকের বদলে কাঠের শলাকা ব্যবহার করা হয়। ২৪ ফুট দৈর্ঘ ও ১৮ ফুট প্রস্থের মসজিদটিতে চৌচলা টিন শেড দিয়ে পাটাতন তৈরি করা হয়।
নির্মাণশৈলী
অসাধারণ ও দৃষ্টিনন্দন এর নির্মাণশৈলী। ভেতরে আলো-বাতাস প্রবেশ ও সৌন্দর্য বাড়ানোর জন্য পাটাতনের মাঝখানে তৈরি করা হয়েছে দ্বিতীয় আরেকটি দোচালা টিনের ছাউনি। মসজিদের উত্তর ও দক্ষিণ দিকে দুটি করে এবং পূর্ব ও পশ্চিমে চারটি করে জানালা। পূর্ব দিকে একটি মাত্র প্রবেশদ্বারে কারুকার্যখচিত দুটি খাম্বাবিশিষ্ট দরজা আছে। এতে মসজিদটি নির্মাণের সূক্ষ্ম শিল্পকর্ম ফুটে উঠেছে।
বৈশিষ্ট্য
মসজিদটি দেখতে প্রতিদিন দেশের বিভিন্ন এলাকা থেকে মানুষ আসে। এটি সরকারের প্রত্নতত্ত্ব অধিদপ্তর সংরক্ষণ করছে। বিভিন্ন সময় বর্ষার কারণে নামমাত্র কিছু কাঠ বা রঙের ক্ষতি হলেও পরে মেরামত করে সৌন্দর্য ধরে রাখা হয়েছে। ইউনিসেফ প্রকাশিত বিশ্বের অনন্য মসজিদ নিয়ে প্রকাশিত ৪০০ পৃষ্ঠার একটি বইয়ে মসজিদটির সচিত্র বর্ণনা আছে। তা ছাড়া বরিশাল বিভাগের মধ্যে শুধু এ মসজিদের আলোকচিত্র ২০১৪ সাল থেকে জাতীয় জাদুঘরের স্থাপত্য গ্যালারিতে স্থান পেয়েছে।
যেভাবে যাবেন
ঢাকা থেকে সড়ক বা নৌপথে পিরোজপুরের মঠবাড়িয়া যাওয়া যায়। নৌপথে ঢাকার সদরঘাট থেকে বরিশাল যাওয়া যায়। বরিশাল থেকে যে কোনো স্থানীয় পরিবহনে মঠবাড়িয়া যেতে পারবেন। মঠবাড়িয়া থেকে মমিন মসজিদের দূরত্ব প্রায় ১২ কিলোমিটার।
যেখানে থাকবেন
মঠবাড়িয়ায় বেশি কিছু হোটেল ও জেলা পরিষদের ডাক বাংলোয় রাতযাপন করতে পারবেন।
কোথায় খাবেন
মঠবাড়িয়ায় ভালো মানের কিছু রেস্তোরাঁ আছে। সুযোগ থাকলে পিরোজপুরের রসগোল্লা, রসমালাই এবং রসমঞ্জুরি খেতে পারেন।
এসইউ/এএসএম