বর্ষায় প্রিয়জনকে নিয়ে ঘুরে আসুন ‘বাংলার আমাজনে’
বর্ষায় সিলেট ভ্রমণের কথা ভাবলেই প্রথমেই সবার মনে পড়ে রাতারগুলের নাম। ‘বাংলার আমাজন’ নামে পরিচিত সিলেটের গোয়াইনঘাটের রাতারগুলের সৌন্দর্য দ্বিগুণ হয়ে যায় বর্ষায়।
রাতারগুল দেশের একমাত্র ‘ফ্রেশওয়াটার সোয়াম্প ফরেস্ট’ বা জলাবন। দেশের একমাত্র স্বীকৃত এই সোয়াম্প ফরেস্টের দূরত্ব সিলেট শহর থেকে প্রায় ২৬ কিলোমিটার। সিলেট জেলার সীমান্তবর্তী উপজেলা গোয়াইনঘাটের ফতেহপুর ইউনিয়নে এই জলাবনের অবস্থান।
জানা যায়, পুরো পৃথিবীতে স্বাদুপানির জলাবন আছে মাত্র ২২টি। তার মধ্যে ভারতীয় উপমহাদেশে আছে এর দুটি, একটি শ্রীলংকায়, বাংলাদেশের রাতারগুলে একটি।
পর্যটকদের মতে, অনিন্দ্যসুন্দর বিশাল এ বনের সঙ্গে তুলনা চলে একমাত্র আমাজনের। আর এ কারণেই বাংলার আমাজন হিসেবে বিশেষ পরিচিত এই রাতারগুল।
রেইন ফরেস্ট নামে পরিচিত হলেও বিশ্বের স্বাদুপানির সবচেয়ে বড় সোয়াম্প বন কিন্তু আমাজনই। ঠিক আমাজন সোয়াম্পের মতোই স্বাদুপানির বন দেশের এই রাতারগুল।
সিলেটের স্থানীয় ভাষায় মুর্তা বা পাটিগাছ ‘রাতাগাছ’ নামে পরিচিত। সেই মুর্তা অথবা রাতাগাছের নামানুসারে এই বনের নাম হয়েছে রাতারগুল।
আমাজনের মতোই গাছগাছালির বেশিরভাগ অংশই বছরে ৪-৭ মাস থাকে পানির নিচে। বর্ষা মৌসুমেই শুধু সেখানে পানির দেখা মেলে। শীতকালে অবশ্য সেটা হয়ে যায় আর দশটা বনের মতোই, পাতা ঝরা শুষ্ক ডাঙা।
আর এ কারণেই বর্ষাই হলো রাতারগুল ভ্রমণের সেরা সময়। এ সশয় সেখানে গেলে দেখবেন কোনো গাছের কোমর পর্যন্ত ডুবে আছে পানিতে। একটু ছোট যেগুলো, সেগুলো আবার শরীরের অর্ধেকই ডুবিয়ে আছে জলে।
কোথাও চোখে পড়বে মাছ ধরার জাল পেতেছে জেলেরা। ঘন হয়ে জন্মানো গাছপালার কারণে কেমন যেন অন্ধকার লাগবে পুরো বনটা। মাঝেমধ্যেই গাছের ডালপালা আটকে দেবে পথ।
বর্ষায় এ বনে চলতে হয় খুব সাবধানে। কারণ রাতারগুল হচ্ছে সাপের আখড়া। বর্ষায় পানি বাড়ায় সাপেরা ঠাঁই নেয় গাছের ওপর। তাই সৌভাগ্য হলে বেশ কিছু সাপের সঙ্গে দেখাও হয়ে যেতে পারে।
বনবিভাগের তথ্যমতে, এই বনের আয়তন ৩ হাজার ৩২৫ দশমিক ৬১ একর। এর মধ্যে ৫০৪ একর বন ১৯৭৩ সালে বন্য প্রাণীর অভয়ারণ্য ঘোষণা করা হয়। বিশাল এ বনে আছে জলসহিষ্ণু প্রায় ২৫ প্রজাতির উদ্ভিদ।
সেখানে মূলত প্রাকৃতিক বন হলেও বেত, কদম, হিজল, মুর্তাসহ নানা জাতের পানি সহিষ্ণু গাছ লাগিয়েছে বন বিভাগ। রাতারগুল বনে সাপের মধ্যে গুইসাপ, জলঢোড়া ছাড়াও আছে গোখরাসহ বিষাক্ত অনেক প্রজাতি। বর্ষায় বনের ভেতর পানি ঢুকলে এসব সাপ উঠে পড়ে গাছের ওপর।
পাখিদের মধ্যে আছে সাদা বক, কানি বক, মাছরাঙা, টিয়া, বুলবুলি, পানকৌড়ি, ঢুপি, ঘুঘু, চিল ও বাজ। শীতে মাঝেমধ্যে আসে বিশালকায় সব শকুন। আর লম্বা পথ পাড়ি দিয়ে ঘাঁটি গাড়ে বালিহাঁসসহ হরেক জাতের পাখি।
বর্ষায় হাওরের স্বচ্ছ পানির নিচে ডুবে থাকা গাছগুলোর সৌন্দর্য দেখে আপনি মুগ্ধ হবেনই। মনে হবে যেন কোনো কল্পনার জগতে ভেসে বেড়াচ্ছেন।
গোয়াইন নদী দিয়ে রাতারগুল যাওয়ার অসাধারণ সুন্দর পথ ধরে নৌকায় ভেসে প্রাকৃতিক সৌন্দর্য উপভোগ করতে পারবেন। এছাড়া নদীর চারপাশের দৃশ্যের সঙ্গে দেখবেন দূরে ভারতের মিজোরামের উঁচু সবুজ পাহাড়।
কীভাবে যাবেন রাতারগুল?
রাতারগুল যাওয়া যায় বেশ কয়েকটি পথে। তবে যেভাবেই যান, যেতে হবে সিলেট থেকেই। দেশের যে কোনো স্থান থেকে প্রথমে যান সিলেট। সেখান থেকে আম্বরখানা পয়েন্টে পৌঁছে সিএনজি নিয়ে গোয়াইনঘাট পৌঁছাতে হবে। ভাড়া পড়বে ৫০০-৮০০ টাকার মধ্যেই।
ওসমানী এয়ারপোর্ট থেকে শালুটিকর হয়ে যাওয়া এই রাস্তাটা বর্ষাকালে খুবই সুন্দর। এরপর একইভাবে গোয়াইনঘাট থেকে রাতারগুল বিট অফিসে আসবার জন্য ট্রলার ভাড়া করতে হবে, ভাড়া পড়বে ৮০০-১৫০০ টাকার মধ্যে (আসা-যাওয়া)।
আর সময় লাগে ২ ঘণ্টা। বিট অফিসে নেমে ডিঙি নৌকা নিয়ে বনে ঢুকতে হবে, এতে মাঝি ঘণ্টাপ্রতি নেবে ২০০-৩০০ টাকা।
আরও এক উপায়ে আপনি পৌঁছাতে পারেন রাতারগুল। এজন্য সিলেটের আম্বরখানা পয়েন্ট থেকে সিএনজি নিয়ে মোটরঘাট (সাহেব বাজার হয়ে) পৌঁছাতে হবে। ভাড়া পড়বে ২০০-৩০০ টাকা। আর সময় লাগবে ঘণ্টাখানেক।
এরপর মোটরঘাট থেকে সরাসরি ডিঙি নৌকা নিয়ে বনে চলে যাওয়া যায়। এতে ঘণ্টাপ্রতি ২০০-৩০০ টাকা লাগবে। এই পথটিই বেশ জনপ্রিয়। কারণ এতে সময় ও খরচ সবচেয়ে কম।
জেএমএস/জেআইএম