একদিনেই ঘুরে আসুন পারকি সমুদ্রসৈকতে
মাজহারুল ইসলাম শামীম
পারকি সমুদ্রসৈকতের নাম হয়তো অনেকেরই অজানা। পারকি সমুদ্রসৈকত বা পারকি সৈকত বাংলাদেশের চট্টগ্রাম শহর থেকে ২০ কিলোমিটার দক্ষিণে আনোয়ারা উপজেলায় অবস্থিত ১৩ কিলোমিটার দীর্ঘ সমুদ্রসৈকত।
চট্টগ্রামের নেভাল একাডেমি কিংবা বিমানবন্দর এলাকা থেকে কর্ণফুলী নদী পেরোলেই পারকি চর পড়ে। একসময় সমুদ্রসৈকত বলতে শুধু কক্সবাজার ও চট্টগ্রামের পতেঙ্গা সমুদ্র সৈকত বোঝানো হলেও ধীরে ধীরে জনপ্রিয় হচ্ছে এই পারকি সমুদ্রসৈকতও।
২০২১ সালের মার্চের ২১ তারিখে আমরা ৩ বন্ধু মিলে পরিকল্পনা করি পারকি সমুদ্রসৈকতে যাওয়ার। অবশেষে রওনা দিলাম পারকি সমুদ্র সৈকতের উদ্দেশ্যে। চট্টগ্রাম শহর থেকে মাত্র এক থেকে দেড় ঘণ্টার পথ দূরত্বে এই সুন্দর সমুদ্রসৈকতটি অবস্থিত। একদিকে সারি সারি ঝাউবনের সবুজের সমারোহ, আরেকদিকে নীলাভ সমুদ্রের বিস্তৃত জলরাশি আপনাকে স্বাগত জানাবে।
আর সমুদ্র তীরের মৃদুমন্দ বাতাস আপনার মনকে আনন্দে পরিপূর্ণ করে দেবে নিমেষেই। পারকি সমুদ্রসৈকতে যাওয়ার পথে দেখা মিলে অন্যরকম এক দৃশ্য। আঁকা-বাকা পথ ধরে ছোট ছোট পাহাড়ের দেখা মেলে। পারকি সৈকতে যাওয়ার পথে কর্ণফুলী নদীর উপর প্রমোদতরীর আদলে নির্মিত নতুন ঝুলন্ত ব্রিজ চোখে পড়বে।
বিচে ঢোকার পথে সরু রাস্তার দু’পাশে আছে সারি সারি গাছ, সবুজ প্রান্তর আর মাছের ঘের। এই সৈকতেও কক্সবাজার সমুদ্রসৈকতের মতো অসংখ্য ঝাউ গাছ আর ঝাউবন দেখতে পাবেন। ঝাউবন ঘেঁষে উত্তর দিক বরাবর হেঁটে গেলে দেখতে পাবেন বঙ্গোপসাগর ও কর্ণফুলী নদীর মোহনা।
আমাদের ভ্রমণের প্রথম ধাপ শুরু হয় ফেনী জেলার মহীপাল নামক স্থান থেকে। আমরা প্রথমে চট্টগ্রামগামী বাস স্টার লাইনে উঠলাম। তারপর বাস আমাদের কে চট্টগ্রামের বাস স্টেশন অলংকার নামক স্থানে নামিয়ে দেয়।
তারপর আমরা সিএনজি যোগে চট্টগ্রাম শাহ আমানত সেতু বা তৃতীয় কর্ণফুলী সেতু পর্যন্ত গেলাম। সেখানে গিয়ে একটু বিশ্রাম নিতে নিতে কর্ণফুলী টানেলের দৃশ্যটা দেখলাম।
এরপর বটতলী মোহসেন আউলিয়ার মাজারের উদ্দেশ্যে ছেড়ে যাওয়া একটি বাসে উঠলাম। তবে আপনারা যারা নতুন যাবেন, অবশ্যই খেয়াল রাখবেন যেন বাস কন্ডাক্টরের `বৈলতলী' উচ্চারণের সঙ্গে ‘বটতলী’কে গুলিয়ে না ফেলেন। দুটি কিন্তু দুই জায়গা।
পারকি বিচে যেতে হলে আপনাকে বটতলী মোহসেন আউলিয়া মাজারগামী বাসে উঠতে হবে। প্রাচীন মাজারটি চট্টগ্রামের আনোয়ারা উপজেলায় অবস্থিত।
বাসে উঠে কন্ডাকটরকে বললাম আমাদেরকে যেন ‘সেন্টার’ নামক স্থানে নামিয়ে দেওয়া হয়। স্থানটির প্রকৃত নাম হলো মালখান বাজার। তবে এটি সেন্টার নামেই পরিচিত। এ স্থান পর্যন্ত আসতে বাসে জনপ্রতি ২৫-৩০ টাকা করে খরচ হয়। সেন্টারে নেমে বিচে যাওয়ার জন্য অনেকগুলো সিএনজি চোখে পড়বে।
সেখান থেকেই আমরা ১৫০ টাকা রিজার্ভে একটি সিএনজি ভাড়া করলাম। সিএনজি আমাদেরকে পৌঁছে দিলো পারকি সমুদ্রসৈকতে। বিচে যাওয়ার আগে খাবারসহ বিভিন্ন প্রয়োজনীয় জিনিস সেন্টার বাজার কিংবা কিছুটা দূরেই চট্টগ্রাম ইউরিয়া ফার্টিলাইজার হাউজিং কলোনি সংলগ্ন বাজার থেকে কিনে নিলাম আমরা।
কারণ সমুদ্রসৈকতের আশপাশে সব জিনিসপত্রের দামই বেশি থাকে। তাছাড়া বিচের বিভিন্ন দোকানে সবকিছু নাও পেতে পারেন। তাই বাজার থেকে কিনেই সঙ্গে নিয়ে যান। সৈকতে পৌঁছেই প্রথমে চোখে পড়বে সারি সারি ঝাউগাছ। চারপাশে সবুজের সমারোহ। সৈকতের পাশে একটা বড় পুকুর আছে।
পুকুরের চারপাশে পার্কের মতো বিভিন্ন খেলাধুলার ব্যবস্থা রাখা আছে। এরপরই ডে দৃশ্য পড়বে তা হলো একটা বিশাল আকৃতির জাহাজ আটকে আছে সৈকতে বালুর মধ্যে। এটি সম্ভবত ২০১৭ সালে ঘূর্ণিঝড়ের সময় পানির স্রোতের কারণে সমুদ্র সৈকতের একদম উপরে চলে আসে। যা আর পরে পানি নেমে যাওয়াতে সাগরে নামানো সম্ভব হয়নি।
আজও জাহাজটি একইভাবে আটকে আছে সমুদ্র সৈকতে। যা এই সৈকতের সৌন্দর্য কিছুটা হলেও নষ্ট করছে। জাহাজের ফলে সৈকতের অনেক বালু সরে যাচ্ছে। সৈকতে পৌঁছানোর কিছুক্ষণ পর আমরা পোশাক পরিবর্তন করে সৈকতে নামলাম। তবে পানি বালি ও কাদাময় হওয়ায় গোসল করা হলো না আমাদের। পানিতে নেমে সমুদ্রের ঢেউগুলো উপভোগ করলাম শুধু।
তবে ঝাউবনের জন্য এই সমুদ্র সৈকতের দৃশ্য বেশ রোমাঞ্চকর বটে। এরপর আমরা জাহাজটির কাছে গেলাম। কিছুক্ষণ জাহাজটির চারপাশ ঘুরে আমরা সৈকতের পানি থেকে উঠে ঝাউবনে গাছের ছায়াতে গিয়ে বিশ্রাম নিলাম। আহ! কি শীতল বাতাস। সঙ্গে সমুদ্রের পানির ঢেউয়ের শব্দ। সব কিছু মিলে অসাধারণ এক মনোরম দৃশ্য।
সবশেষ আমরা সৈকত সংলগ্ন পুকুরের পাশের পার্ক ঘুরে দেখলাম। এরপর বিকেলের শেষ প্রান্তে আমরা আবার সিএনজিতে উঠে গেলাম চট্টগ্রাম শহরের উদ্দেশ্যে। এরপর ফিরতি বাসে উঠে বসলাম। এভাবেই একবুক প্রশান্তি নিয়ে পারকি সমুদ্রসৈকত ভ্রমণ শেষ হলো আমাদের।
লেখক: ব্যবস্থাপনা বিভাগের তৃতীয় বর্ষের শিক্ষার্থী, ফেনী সরকারি কলেজ।
জেএমএস/জেআইএম