ভিডিও EN
  1. Home/
  2. ভ্রমণ

সুলতান সুলেমানের সাম্রাজ্যে সারাদিন

সিরাজুজ্জামান | ইস্তাম্বুল থেকে ফিরে | প্রকাশিত: ০৫:১১ পিএম, ১৬ জুন ২০২২

একজন দিগ্বিজয়ী শাসক সুলতান সুলেমানের প্রাসাদ ও তার শাসন ব্যবস্থা সম্পর্কে জানতে অটোমান সাম্রাজ্য ঘুরে আসার বিকল্প নেই। সেই সময়ের সামরিক, রাজনৈতিক ও অর্থনৈতিক শক্তির এক বীর ব্যক্তিত্ব ছিলেন সুলতান সুলেমান। পাশাপাশি তার ক্ষমতায় থাকার লিপ্সা ও নিজের সন্তানকে হত্যার নির্দেশনা অনেক আলোচনা-সমালোচনার জন্ম দিয়েছে।

সুলতান সুলেমানের শাসন অনেক বিস্তার লাভ করে। ফলে এশিয়া ছাড়া ইউরোপ, আফ্রিকা বিস্তীর্ণ অঞ্চল পর্যন্ত ছড়িয়ে পড়ে। এ ইতিহাস এখনো বহুলভাবে চর্চিত। এসব কারণে তাকে নিয়ে অনেক সিনেমা, নাটক তৈরি হয়েছে। তুরস্কের ইস্তাম্বুলে তার প্রাসাদ দেখতে প্রতিদিন হাজার হাজার পর্যটক ভিড় করেন। সেই সময়েও এমন আধুনিক ও উন্নত জীবনযাত্রা দেখে দর্শনার্থীদের চোখ কপালে ওঠে। সেখানে ভ্রমণে গেলে দেখা মেলে সেই সময়ও তারা কত উন্নত ও আধুনিক জীবনযাপন করেছেন।

সুলতান সুলেমান ১৪৯৪ সালের ৬ নভেম্বর তুরস্কে জন্ম নেন। তার পিতা সেলিম খান (প্রথম) মারা গেলে তিনি ১৫২০ সালের ৩০ সেপ্টেম্বর বিশাল রাজ্যের দায়িত্ব নেন। ১৫৬৬ সালে মৃত্যুর আগ পর্যন্ত উসমানীয় সাম্রাজ্য শাসন করেন। তিনি ছিলেন উসমানীয় সাম্রাজ্যের দশম এবং সবচেয়ে দীর্ঘকালব্যাপী শাসনরত প্রভাবশালী সুলতান। পশ্চিমা বিশ্বে তিনি ‘সুলেমান দ্য ম্যাগনিফিসেন্ট’, তুরস্কে ‘কানুনি সুলতান’ এবং আরব বিশ্বে ‘সুলেমান আল মুহতাশাম’ নামে পরিচিত।

সুলতান সুলেমানের সাম্রাজ্যে সারাদিন

তুর্কি সম্রাটদের অগুনতি রাজপ্রাসাদের মধ্যে সবচেয়ে বড় ছিল সুলতান সুলেমানের প্রাসাদ। দীর্ঘতম সময় প্রায় ৪০০ বছর ধরে অটোমান সুলতানদের বাসস্থান এবং দরবার ছিল সেখানে। যা তোপকাপি প্রাসাদ নামেও পরিচিত। সেখানে আছে অনেকগুলো আলাদা আলাদা কারুকাজমণ্ডিত অট্টালিকা। তুর্কি শব্দ তোপের অর্থ হলো কামান আর কাপি শব্দের অর্থ হলো গেট বা দরজা। রোমান আমল থেকেই ইস্তাম্বুল ছিল দুর্ভেদ্য দেয়াল ঘেরা নগরী। নগর দেওয়ালের কিছুদুর পর পর ছিল পর্যবেক্ষণ টাওয়ার আর চলাচলের জন্য থাকত গেট বা দরজা। কামান নিয়ে গেটের উপরে এবং পাশে সব সময় প্রস্তুত থাকত প্রহরী।

সুলতান সুলেমানের সাম্রাজ্যে সারাদিন

সেসব দৃশ্য দেখতে হাজার হাজার পর্যটকরা সেখানে যান। গোল্ডেন হর্নের শেষ সীমায় সাগর কিনারে পাহাড়ের উপর অবস্থিতি এটি। এ রাজ প্রাসাদ থেকে বসফরাস প্রণালি এবং মারমারা সাগরের অনেকদূর পর্যন্ত চোখে পড়ে। যা এ প্রাসাদের সৌন্দর্য ও অবস্থানকে গৌরবমণ্ডিত করেছে।

সুলতান সুলেমানের সাম্রাজ্যে সারাদিন

সাত লাখ বর্গমিটার এলাকা নিয়ে গড়ে ওঠা এ প্রাসাদে ছিল টাকশাল, স্কুল, লাইব্রেরি, মসজিদ, রাষ্ট্রীয় কোষাগার, উজির-নাজিরদের বাসস্থান প্রভৃতি। এ প্রাসাদের প্রধান চার চত্বর বা কোর্ট ইয়ার্ড। ইম্পেরিয়াল বা রাজকীয় গেট দিয়ে ঢুকলে প্রথম যে চত্বর পড়বে, তা ছিল সবার জন্য উন্মুক্ত। এখানে ছিল প্রাসাদরক্ষীদের বসবাসের স্থান, টাকশাল ইত্যাদি।

সুলতান সুলেমানের সাম্রাজ্যে সারাদিন

সুলতানাহমেত স্কোয়ার দুটি অংশ নিয়ে গঠিত-হায়া সোফিয়া এবং নীল মসজিদের মধ্যবর্তী অঞ্চলের একটি অংশ এবং হিপ্পোড্রোম- যেখানে অনেক প্রাচীন অথচ অত্যাধুনিক স্থাপনা। এ ছাড়াও মিশরীয় স্মারকস্তম্ভ এবং সার্পেন্ট কলাম, যা এখানে আনা হয়েছিল বাইজেন্টাইন আমলে। সেইসাথে জার্মান ফাউন্টেন, যা শহর এবং সুলতান আব্দুল হামিদ-২ কায়সার উইলহেমকে উপস্থাপন করা হয়েছে।

সুলতান সুলেমানের সাম্রাজ্যে সারাদিন

১৯২৩ সালে অটোমান সাম্রাজ্যের অবসানের একবছর পর একটি সরকারি ডিক্রি তোপকাপিকে একটি জাদুঘরে রূপান্তরিত করে। তুরস্কের সংস্কৃতি ও পর্যটন মন্ত্রণালয় এখন তোপকাপি প্রাসাদ জাদুঘর পরিচালনা করে। প্রাসাদ কমপ্লেক্সে শতাধিক কক্ষ এবং চেম্বার রয়েছে। শুধু সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণগুলোয় জনসাধারণ প্রবেশ করতে পারেন। যার মধ্যে অটোমান ইম্পেরিয়াল হেরেম এবং ট্রেজারি রয়েছে, যার নাম হ্যাজিন। যেখানে স্পুনমেকারের ডায়মন্ড এবং তোপকাপি ড্যাগার প্রদর্শন করা হয়েছে। জাদুঘরের সংগ্রহে আছে অটোমান পোশাক, অস্ত্র, বর্ম, ধর্মীয় নিদর্শন এবং আলোকিত পাণ্ডুলিপি, যেমন তোপকাপি পাণ্ডুলিপি।

সুলতান সুলেমানের সাম্রাজ্যে সারাদিন

সেখানে আছে বিচার স্তম্ভ বা জাস্টিস টাওয়ার। প্রত্নতাত্ত্বিক সামগ্রী এমনকি সম্রাটের লাইব্রেরি। সেই লাইব্রেরিতে থরে থরে সাজানো সেই যুগের বই। সেই সময়ের সৈনিকরা কী ধরনের পোশাক ব্যবহার করতেন, তা-ও আছে। বিশেষ উৎসবের সময় সুলেমান কোথায় বসতেন, সেই আসনসহ কক্ষও আছে। প্রাসাদের প্রথম চত্বর থেকে ডানে মারমারা সাগর এবং সোজা দেখা যায় বসফরাস প্রণালি এবং আধুনিক ইস্তাম্বুল নগরী। এসব দেখতে দেখতে প্রাসাদের ছাদে গেলে মনটা আরও উৎফুল্ল হয়ে যাবে। কারণ এর এক পাশে সাগর, অন্যপাশে পাহাড়ের ওপর সুদৃশ্য নগরী। এসব দেখতে দেখতে সারাদিন কেটে যায় পর্যটকদের।

এইচএস/এসইউ/জেআইএম

আরও পড়ুন