ভিডিও EN
  1. Home/
  2. ভ্রমণ

নীলগিরিতে কখনো রোদ কখনো বৃষ্টি

ভ্রমণ ডেস্ক | প্রকাশিত: ০১:৫০ পিএম, ০৭ জুন ২০২২

মো. মারুফ মজুমদার

কবি পাহাড়ের অপার্থিব সৌন্দর্যের বর্ণনা দিতে গিয়ে বলেছেন, ‘এসো বন্ধু, দেখে যাও–সেই স্বর্গভূমি। পাহাড় ছুঁয়েছে আকাশ এখানে, আকাশ ছুঁয়েছে ভূমি’। পাহাড়ের বুকে বর্ষায় মেঘের পরশে প্রকৃতি হয়ে ওঠে ভীষণ কাব্যময়। নিঃসন্দেহে মেঘের উদ্দাম নৃত্য সবাইকে মুগ্ধ করে। কখনো রোদ কখনো বৃষ্টি। আকাশে মেঘের গর্জন, সেইসাথে রংধনুর হাসিমাখা আলোক রশ্মি। বাতাসের সাথে তাল, লয় আর ছন্দ মিলিয়ে প্রকৃতির এই বৈচিত্র্যময় পরিবর্তনের দৃশ্যগুলো ভীষণভাবে কাছে টানে। কিছুটা সময় যান্ত্রিকতা থেকে দূরে প্রকৃতির অতি সন্নিকটে মেঘের রাজ্যে মেঘের সাথে আলিঙ্গন। বলছিলাম নাঙ্গলকোট স্টুডেন্ট অ্যাসোসিয়েশন চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের (এনএসএসিইউ) বার্ষিক শিক্ষা সফরে বান্দরবানের মেঘের বাড়ি খ্যাত নীলগিরিতে ভ্রমণের কথা।

দিনটি ছিল শুক্রবার (৩ জুন)। শুরুতেই চট্টগ্রামের বিপ্লব উদ্যান থেকে ভোর সাড়ে ৬টায় পূরবীর গাড়ি ছাড়ে বান্দরবানের উদ্দেশে। বান্দরবান যাওয়ার রাস্তায় কমপক্ষে ১০-১২টি জায়গায় উন্নয়ন কাজ চলায় এবং নিরাপত্তাজনিত কারণে আর্মি চেকপোস্টসহ আমাদের দুই ঘণ্টার বেশি সময় লেগেছিল বান্দরবান বাসস্ট্যান্ড পৌঁছতে। তারপর সেখান থেকে চান্দের গাড়ি নিয়ে যাওয়া হয় নীলগিরি। ৪৫ জনের জন্য তিনটি চান্দের গাড়ি ঠিক করে দেওয়া হয়। পাহাড়ের আঁকাবাঁকা পিচঢালা রাস্তা দিয়ে চান্দের গাড়ি যাওয়ার সময় অসম্ভব সুন্দর প্রকৃতির দৃশ্য অবলোকন করতে ভুল হয়নি। গাড়ির দুরন্ত গতির সাথে বিশুদ্ধ তীব্র বাতাস থেকেও কেউ বাদ যাননি। মনে হচ্ছে আস্তে আস্তে দুর্লভ মেঘের রাজ্যে প্রবেশ করছি।

পাহাড়ি রাস্তার দু’ধারে বাহারি ধরনের পাহাড়ি, ঘর-বাড়ি, দোকানপাট এবং কিছু পর্যটন স্পট আছে। যা দর্শনার্থীদের মন হরণ করার মতো অবস্থা সৃষ্টি করে। প্রায় দেড় ঘণ্টা পর বহুল কাঙ্ক্ষিত নীলগিরি তথা মেঘের রাজ্যে পৌঁছলাম। তবে চান্দের গাড়িতে ভ্রমণে যে তীব্র অনুভূতি সৃষ্টি হয় তা অনস্বীকার্য। তবে দুর্ঘটনা থেকে রক্ষা পেতে সর্তক হওয়া জরুরি। নীলগিরির প্রবেশমুখে টিকিট কেটে মূল স্পটে পৌঁছানোর পর মনে হবে, যেন পাহাড় ও মেঘের মাঝখানে ২ হাজার ফুট উপরে আপনার ভ্রমণে আক্ষেপ তৈরি করতে বাধা হয়ে দাঁড়িয়ে আছে। প্রবেশ পরবর্তী সবাই অনিন্দ্য সুন্দর স্পটে অসাধারণ মুহূর্তগুলো ক্যামেরাবন্দি করতে তৎপর হয়েছেন। এরমধ্যে সবার সম্মিলিত অংশগ্রহণে গ্রুপ ফটো, সিনিয়র-জুনিয়র ফটো এবং ব্যক্তিগত ছবি তোলা তো সবার আগে সম্পন্ন হয়েছে।

সকাল ১১টার পর মেঘ চোখের সামনে কুয়াশার মতো উড়তে শুরু করে। সাথে সাথে শরীরকে অতিক্রম করার সময় মনে হবে, যেন হালকা শিরশিরে অনুভূতি দিয়ে যাচ্ছে। সবার খুব ইচ্ছে করছিল, ইস! হাতের মুঠোয় করে কিংবা পকেটে ভরে এক টুকরো মেঘ বন্দি করে যদি নিয়ে যেতে পারতাম। পাহাড়ের বুকে মেঘের ভেলায় সাঁতার কাটার আগ্রহ জাগাও খুব স্বাভাবিক হয়ে দাঁড়িয়েছে তখন। কিন্তু এ দুর্লভ মেঘগুলোকে শুধু চোখে দেখা এবং অনুভূতিতে করেই রাখা যায়। মজার বিষয় হচ্ছে, নীলগিরিতে আসার সময় সূর্যমামার তপ্ত প্রভাব যেমন পেয়েছি; আসার সময় এর দ্বিগুণ বৃষ্টির সাথে শিরশিরে ঠান্ডা অনুভূতি যেন তিনটি ঋতুর (গ্রীষ্ম, বর্ষা, শীত) স্বাদ দিয়েছে।

দুপুর ঘনিয়ে বিকেলের আগে খাবার শেষে আবার চান্দের গাড়ি করে বান্দরবানের উদ্দেশে রওনা দিলাম। আসার সময় চিম্বুক পাহাড়, শৈলপ্রপাত ঝরনা পরিভ্রমণ করা হয়। অভিজ্ঞতার থলিতে যেন নতুন মাত্রা যোগ হলো। তবে জানিয়ে রাখা ভালো, নীলগিরির সবচেয়ে মজার বিষয় হলো, দিনের বেলা সেখান থেকে খালি চোখে দেশের দ্বিতীয় সর্বোচ্চ পাহাড় কেওক্রাডং এবং প্রাকৃতিক আশ্চর্য বগালেক তার সাথে চোখজুড়ানো পাহাড়ের সারি, পাশাপাশি বঙ্গোপসাগর ও জাহাজ চলাচলের দৃশ্য দেখা যায়। পাহাড়ি এ দুহিতার দৃষ্টিনন্দন আঁকাবাঁকা সর্পিল পথচলা পর্যটককে ভীষণভাবে আকর্ষণ করে। প্রকৃতির ক্যানভাসে আঁকা নয়নাভিরাম এমন দৃশ্য স্মৃতির ফ্রেমে ধরে রাখার জন্য নীলগিরি সত্যিই চমৎকার জায়গা। সূর্যমামা তার দিনান্তের পাঠ শেষে বাড়ি ফিরছে। আমরাও তার পিছু পিছু। বিকেলের আবির আলো লাল পাহাড়কে রাঙিয়ে তুলেছে দ্বিগুণ। বন্ধুর পথে আমরা ফিরছি আপন নীড়ে। সেই পথের বাঁকে বাঁকে খেলা করছে রহস্য রোমাঞ্চের অদ্ভুত জগত। যেন আকাশের তারাগুলো চোখের ইশারায় কথা বলছে। চারদিকে শিয়ালের হুক্কাহুয়া শব্দ, ঝিঁঝিঁর ডাক এবং জোনাকির আলো। গাড়ি ছুটছে যেন সাঁ-সাঁ শব্দে।

যথারীতি বান্দরবান বাস টার্মিনালে পৌঁছে সন্ধ্যার দিকে বাস ছাড়ে চট্টগ্রামের উদ্দেশে। বাস ভ্রমণের সবচেয়ে সুন্দর মুহূর্তটি কাটে তখনই; যখন র্যাফেল ড্র অনুষ্ঠিত হয়। বিনিময়ে পুরস্কার, গান-বাজনা, হই-হুল্লোড় শেষে এনএসএসিইউর বর্তমান সভাপতি মো. মাজেদুল হাসানের সমাপনী বক্তব্যে আনুষ্ঠানিক পরিসমাপ্তি টানা হয়। তিনি বলেন, ‘এই ভ্রমণ যেমন শিক্ষণীয়; তেমনই অ্যাসোসিয়েশনের প্রত্যেক সদস্যের পারস্পরিক সৌহার্দ্যপূর্ণ সম্পর্ক সৃষ্টিতে রাখবে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা।’ তালে তাল মিলিয়ে সাধারণ সম্পাদক জাহিদুল ইসলাম বলেন, ‘এ আয়োজন প্রতিবছর করা হবে।’ অসাধারণ এক সুন্দর মুহূর্ত কাটিয়ে আপন নীড়ে ফিরলেন সবাই। পুঞ্জিভূত হলো নতুন আরেক অভিজ্ঞতা।

লেখক: শিক্ষার্থী, রাজনীতি বিজ্ঞান বিভাগ, চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়।

এসইউ/জেআইএম

আরও পড়ুন