লেকের মাঝে বিস্ময়কর রিসোর্ট
ইসতিয়াক আহমেদ
হালকা বৃষ্টি ভেজা আবহাওয়াই রাঙামাটির পাহাড়ি রাস্তায় ভোর হলো। রাত ১১টার বাস আমাদেরকে যখন নামিয়ে দিলো রাঙ্গামাটির তখন সকাল প্রায় সাড়ে ৫টা। রাঙামাটি নেমেই সবাই ফ্রেশ হয়ে পেট পুজো সেরে নিলাম। আর এ যাত্রায় বসে পড়লাম দোয়েল চত্ত্বরের কাশপিয়া রেস্টুরেন্টে।
চেক ইনের সময়টা হাতে থাকায় খাওয়া শেষে রিসোর্টের বোট সার্ভিসকে কল দিলাম। সেইসঙ্গে ধরলাম আমান পার্কের পথ। সেখান থেকেই আমাদের পিক আপ করবে রিসোর্টের নৌকা।
ওই নৌকায় চড়ে লেক ঘুরিয়ে আমাদের নিয়ে যাওয়া হবে রিসোর্টে। নৌকার ছাদে উঠে সবাই চারপাশের সৌন্দর্য উপভোগ করলাম। রাঙামাটির রুপ গিলতে গিলতে রিসোর্টে যাবার পালা এবার।
‘ডিভাইন লেক আইল্যান্ড রিসোর্ট’ দেশের প্রথম রিসোর্ট যার চারপাশে শুধু পানি আর পানি। প্রাকৃতিক ও আধুনিকতার মিশ্রণে গড়ে ওঠা এক অসাধারণ স্থাপনা এই রিসোর্ট। ডিভাইন লেক রিসোর্টে যেতে হলে ঢাকা থেকে আসার সময় নামতে হবে রাঙামাটির দোয়েল চত্ত্বরে। সেখানকার আমিন পার্ক বা আসাম বস্তি ব্রিজ থেকেই এদের পিক আপ পয়েন্ট।
প্রায় ৬ একর জায়গা নিয়ে গড়ে উঠেছে এই রিসোর্ট। ৪ একরে গড়ে তোলা হয়েছে এই রিসোর্ট আর বাকি ২ একর শুধু শুষ্ক মৌসুমে দৃশ্যমান থাকে। বর্ষায় ডুবে যায় পানিতে। নানা প্রজাতির অসংখ্য ফলোজ ও বনোজ গাছে ঘেরা এই রিসোর্টে দেখা পাবেন নানান প্রজারিত পাখি ও সরীসৃপের।
আলাদা আলাদা প্রায় ৬টি সিটিং এরিয়া, ৭ টি ব্যাম্বু কটেজ, একটি ব্যাম্বু ডুপ্লেক্স কটেজসহ আরও দুটি ফাইভ পারশন এসি কটেজ ও ২টি থ্রি পারসন এসি কটেজ আছে। আমরা ৯ জনের জন্য মূলত একটি ফাইভ পারসন এসি কটেজ আর ২টি ব্যাম্বু কটেজ আগেই বুক করে রেখেছিলাম।
রিসোর্টে ঢুকতেই নয়ন জুড়িয়ে গেল। সিঁড়ি বেয়ে ব্যাম্বু কটেজে ঢুকেই পাবেন ফ্লোরিং বেড। সঙ্গে লাগোয়া লেক ভিউ ব্যালকনি। এটাচ বাথরুমও পেয়ে যাবেন। গরম ও ঠান্ডা উভয় প্রকার পানির ব্যবস্থা আছে সেখানে। আর সব থেকে বড় পাওয়া হলো, সুন্দর লাইটিং ও কারেন্ট চলে গেলেও সোলার এর কানেকশন আছে সেখানে।
ডিভাইন আইল্যান্ড রিসোর্টের ডাইনিং এরিয়া একটু বেশিই সুন্দর। চারপাশে খোলামেলা এই স্থানে খাবার খাওয়ার পাশাপাশি আড্ডা দেওয়ার জন্যও সেরা। এখানে মূলত কমপ্লিমেন্টারি ব্রেকফাস্ট শুধু পাবেন। তাই লাঞ্চ, ইভিনিং স্ন্যাকস ও ডিনার এর জন্য আগে অর্ডার দিতে হবে এখানে।
আমাদের আইটেম ছিল ফিস ফ্রাই, চিকেন চিলি কারি, সাদা ভাত, সবজি, ডাল ও আলু ভর্তা। এই প্যাকেজে ৩৫০ টাকা জনপ্রতি। যদিও খাবারের দাম কিছুটা বেশি, তবে তা কিন্তু তারা পূরণ করে দেয় খাবারের স্বাদ দিয়ে। প্রায় প্রতিটি খাবারই সুস্বাদু।
এই রিসোর্ট জুড়ে আরও আছে অসংখ্য ফলজ গাছ। এই রিসোর্টের অতিথিরা চাইলে গাছ থেকে আম-কাঁঠাল পেরেও খেতে পারবেন। এখানে যদি চান তবে করতে পারবেন কায়াকিংও। প্রতিঘণ্টা ৩০০ টাকা করে দু’জন বা তিনজনের যে কোনো বোট নিয়ে বেড়িয়ে পরতে পারেন কাপ্তাই লেকের স্বচ্ছ পানিতে।
ডিভাইন লেক আইল্যান্ড রিসোর্ট মূলত ফ্রেন্ডস অ্যান্ড ফ্যামিলি নিয়ে দল বেঁধে ঘুরতে যাওয়ার জন্য সেরা এক স্থান। আড্ডা দেওয়ার মতো একাধিক সিটিং এরিয়া থাকায়, সন্ধ্যায় দল বল বেঁধে আড্ডা দিতে দিতে কখন রাত গভীর হয়ে যাবে টেরই পাবেন না। আমাদের ডিনারে আয়োজন ছিল বারবিকিউয়ের।
রাত বাড়ার সাথে সাথে অসাধারণ চাঁদের আলো, আর লিলুয়া বাতাসে বসে আড্ডা দিতে দিতে কখন যে অনেক রাত পেরিয়ে যাবে টেরই পাবেন না। সামনে বিশাল লেক ও পেছনে লেক ঘেরা পাহাড়। ভরা পূর্ণিমায় আকাশ জুড়ে ওঠা অস্থির এক চাঁদের আলোয় লিলুয়া বাতাসে অস্থির এক স্বর্গীয় অনুভূতি পাবেন এই রিসোর্টে গেলে।
ডিভাইন লেক আইল্যান্ড রিসোর্টে ব্যাম্বো কটজে (নন এসি) ২ জনের এক রুমের ভাড়া পড়বে ৫০০০ টাকা, ব্যাম্বো ডুপ্লেক্সে (নন এসি) ৪ জনের জন্য এক রুমের ভাড়া ৮০০০ টাকা।
এসি ফ্যামিলি কটেজে ৫ জনের জন্য ৩ বেড আছে, সঙ্গে বাইরে বাথটাব ও লেকভিউ বারান্দাও পাবেন ভাড়া ৭০০০ টাকা। রিসোর্ট বুকিং দেওয়ার জন্য ০১৮৮৮০৮০২০৭ নম্বরে কল দিতে পারেন।
জেএমএস/এমএস