গ্রামের মোড়ে মোড়ে আছে বইঘর
বিস্ময়কর এক গ্রাম। যেখানে বই খুঁজতে আপনাকে যেতে হবে না লাইব্রেরিতে। পুরো গ্রামজুড়েই ছড়িয়ে ছিটিয়ে রাখা আছে বই। অর্থাৎ গ্রামটির প্রতি মোড়ে মোড়ে রাখা আছে বুকশেলফ। আর সেখানেই থরে থরে সাজানো আছে বই।
বলছি ভারতের কেরালার কোল্লাম জেলার কোত্তারাক্কারা শহর থেকে পাঁচ কিলোমিটার দূরের ছোট্ট এক গ্রাম পেরুমকুলামের কথা।
এই গ্রামের পথে-প্রান্তরে হাঁটতে হাঁটতে আপনি পেয়ে যাবেন বইঘর। সেখানে বসে বই থেকে শুরু করে খবরের কাগজ সবই পড়তে পারবেন। ২০১৭ সালে গ্রামটি ‘বই গ্রাম’ হিসেবে খ্যাতি অর্জন করেছে।
বই পড়ার সংস্কৃতি জাগিয়ে তোলার প্রচেষ্টায় ১৯৪৮ সালে শুরু হয় বই গ্রামের কার্যক্রম। সদ্য স্বাধীন ভারত যখন মহাত্মা গান্ধীর হত্যাকাণ্ডে শোক প্রকাশ করেছিল, তখন কেরালার এই গ্রামের একদল যুবক ১০০ বই সংগ্রহের কাজে নেমে পড়েছিল।
পেরুমকুলমের বাসিন্দা কৃষ্ণা পিল্লাই নামের এক যুবক ও তার বন্ধুরা মিলে বইগুলো সংগ্রহ করেন। তারা সেই বইগুলো রাখেন পিল্লাই পরিবারেরই একটি ঘরে। এভাবেই গ্রামটিতে প্রথম গ্রন্থাগার স্থাপিত হয়। গ্রন্থাগারের নাম দেওয়া হয় ‘বাপুজি মেমোরিয়াল লাইব্রেরি’।
গ্রন্থাগারটি ১৯৫৭ সালে একটি নিজস্ব ভবন পেয়েছিল। যা ২০০৮ সালে ক্ষতিগ্রস্ত হওয়ার পর গ্রামবাসীরা সবাই মিলে পুনর্নির্মাণ করেছিলেন। ২০১৬ সালে গ্রন্থাগারটি আবারও সংস্কার করা হয়।
পেরুমকুলামের এক বাসিন্দা যার নাম রাজীব (৫৫), তিনিই গ্রন্থাগারের সভাপতি। ১৯৯৭ সাল থেকে তিনি গ্রন্থাগারের সঙ্গে যুক্ত আছেন। গ্রন্থাগারটি প্রতি বছর ৩২ হাজার রুপি রাষ্ট্রীয় ভাতা পায়।
১০০ বই নিয়ে শুরু হওয়া এই লাইব্রেরিতে আজ প্রায় ৮০০০ বই রয়েছে। তবে গ্রামটি কীভাবে বই গ্রাম হিসেবে গড়ে উঠল? চলুন তবে জেনে নেওয়া যাক সেই কাহিনি-
২০১৬ সালের দিকে বর্তমান প্রজন্ম ঠিক করল, পুরো পেরুমকুলমকেই গ্রন্থাগার হিসেবে গড়ে তোলা হবে। তবে কীভাবে তা সম্ভব? গ্রামের রাস্তার মোড়ে মোড়ে ছোটো ছোটো বইঘর গড়ে তোলার সিদ্ধান্ত নেওয়া হলো।
আসলে রাস্তার পাশে গড়ে তোলা হয় ছোট ছোট বুকসেলফ। ওই বুকসেলফের দরজা খুলেই বই নেওয়া যায়। আবার বন্ধ করে দিলেই ভেতরে নিরাপদ বই।
কাঠের বাক্সের আকারের বুকসেলফ বৃষ্টিতে ভিজে যাতে বই না ভেজে তারও ব্যবস্থা করা হয় উপযুক্ত আচ্ছাদনের মাধ্যমে।
পেরুমকুলমের পথের পাশের একেকটি বইঘরে থাকে ৫০টি করে বই। পথ-গ্রন্থাগার থেকে বই নিয়ে পড়ার এক অভিনব নিয়মও আছে।
এসব বইঘর থেকে বই নিয়ে পড়তে কোনো চার্জ গুনতে হয় না। তবে এই বইঘরে একটি বই রাখার মাধ্যমেই কেবল আপনি বই নিয়ে পড়তে পারবেন।।
সূত্র: দ্য হিন্দু/ইন্ডিয়ান এক্সপ্রেস
জেএমএস/এমএস