পার্কের ভেতর হীরার খনি!
রুপকথার গল্পে হয়তো আপনি এমন জায়গার কথা শুনে থাকবেন, যেখানকার মাটি খুঁড়তেই মেলে নানা রঙের হীরা। বাস্তবে এমন দৃশ্যের দেখা পাওয়া সত্যিই সৌভাগ্যের বটে। সত্যিই কী এমন কোনো স্থান আছে?
অবিশ্বাস্য হলেও সত্যিই যে, যুক্তরাষ্ট্রের আরকানসাসের ক্রেটার অব ডায়মন্ড স্টেট নামক এই পার্কে গেলে আপনিও মাটি খুঁড়ে পেতে পারেন হীরা। বিশ্বব্যাপী এটি ‘ডায়মন্ডস স্টেট পার্ক’ নামেও পরিচিত।
আরকানসাসের পাইক কাউন্টিতে মারফ্রিজবোরো শহরে প্রায় ৯১১ একর ধরে গড়ে উঠেছে এই হীরার পার্ক। তার মধ্যে সাড়ে ৩৭ একর জুড়েই আছে‘হিরার খনি’।
জানলে আরও অবাক হবেন, এটিই দুনিয়ার একমাত্র হীরার খনি, যেখানে ঢুকতে কোনো সরকারি অনুমতিপত্রের প্রয়োজন পড়ে না। অর্থাৎ ছোট থেকে বড় সবাই এই পার্কে টিকিট কেটে ঢুকতে পারেন। এমনকি এই পার্কে আগত দর্শনার্থীরা হীরা খুঁজতে মাটি খোঁড়াখুঁড়িও করতে পারেন।
তবে পার্ক কর্তৃপক্ষের শর্ত একটাই, এজন্য অবশ্যই টিকিট কাটতে হবে। টিকিট কেটে ভেতরে যারাই হীরার খনি দেখতে যান, তাদের অনেকেই সৌভাগ্যবশত মাটির খুঁড়তেই পেয়ে যান হীরা। ওই পার্কে প্রতিদিনই গড়ে অন্তত ২টি করে হীরা খুঁজে পান আমজনতা।
হীরা খনি বলতে যা বোঝায়, স্থানটি আসলে তেমন নয়। প্রাকৃতিক ভাবে একটি পাইপের আকারে গর্ত তৈরি হয় পার্কের স্থনে। তাও আবার প্রায় সাড়ে ৯ কোটি বছরের ক্ষয়িষ্ণু আগ্নেয়গিরির অংশ হিসেবে তৈরি হয়ঢ পাইপটি। বারবার অগ্ন্যুৎপাতের জেরে পাইপের আকারে গর্তের চেহারা নিয়েছে।
১৯০৬ সাল থেকে সেখানে হীরার সন্ধান চালু হয়। তখন স্থানটির মালিকানা ছিল জন হাডলসটন নামক এক ব্যক্তির কাছে। ১৯৭২ সালে একে স্টেট পার্কের মর্যাদা দেয় আরকানসাস ডিপার্টমেন্ট অব পার্কস অ্যান্ড ট্যুরিজম।
এই পার্কের ইতিহাস অনুযায়ী, ১৯০৬ সালের আগস্ট মাসে ২৪৩ একর খামারবাড়ির জমিতে দু’টি অদ্ভুত স্ফটিক খুঁজে পান হাডলসটন। পরের মাসে লিটল রক নামে এক বিনিয়োগকারী গোষ্ঠীর কাছে ওই ২৪৩ একরের একাংশ বিক্রি করে দেন হাডলসটন ও তার স্ত্রী সারা।
জমি কেনার পর এর মান পরীক্ষা করান লিটল রক গোষ্ঠীর কর্ণধার স্যামুয়েল এফ রেবার্ন। তারপর থেকে বহুবার হীরার সন্ধানে ওই জমিতে বাণিজ্যিকভাবে খননকাজ শুরু হয়। ১৯০৭ সাল থেকে ১৯৩২ সালের মধ্যে জমির উপরিস্তরে ক্ষয়ের পর প্রায়শই ৩০ ক্যারেট বা তার বেশি ওজনের হীরা পাওয়া যেত।
এরপর এই স্থান থেকে হীরা পাওয়ার খবর ছড়িয়ে পড়ে মারফ্রিজবোরো শহরে। পরবর্তী সময়ে উৎসুক জনতার ভিড় বাড়তে থাকে। হীরার টানে স্থানটি পর্যটকদের কাছে আকর্ষণের কেন্দ্রবিন্দু হয়ে ওঠে।
১৯৫১ সালে পর্যটকদের ভিড়ের ফায়দা তুলতে এগিয়ে এসেছিলেন লেখক তথা প্রোমোটার হাওয়ার্ড এ মিলার ও তার স্ত্রী মোডিয়ান। দেশজুড়ে তারা প্রচারণা শুরু করেন।
এরপর থেকেই ভিড় বাড়তে থাকে। ১৯৫৬ সালে ওই গর্ত থেকে ৩৪.২৫ ক্যারাট বা ৬.৮৫০ গ্রামের নীল রঙের হীরা খুঁজে পান জন পোলক। এরপরই নানা মুনির নানা কথা ছড়িয়ে পড়ে।
ডায়মন্ডস স্টেট পার্কে মূলত সাদা, পিঙ্গল ও হলদেটে এই তিন রঙের হীরা পাওয়া যায়। ১৯৭২ সালের পর থেকে এখনো পর্যন্ত সেখানে ৩৩ হাজার ১০০ হীরা খুঁজে পাওয়া গেছে।
২০২১ সালের অক্টোবর মাসে এক নারী ৪.৩৮ ক্যারেট ওজনের একটি হলুদ হীরা খুঁজে পান এই পার্কে। রেন রেডবার্গ ও তার স্বামী মাইকেল মাটি খুঁড়তে খুঁড়তে পেয়ে যান এই অমূল্য রতন।
এর আগে ২০১৭ সালের মার্ট মাসে কালেল ল্যাংফোর্ড নামের এক কিশোর আধা ঘণ্টা খোঁড়াখুঁড়ির পর ৭. ৪৪ ক্যারেটের একটি হীরা খুঁজে পান। বিগত ৪০ বছরে সেখানে পাওয়া দ্বিতীয় ভারী হীরা ছিল এটি। ১৪ বছরের কালেল তার সফরের স্মৃতিচিহ্ন হিসেবে হীরাটি সঙ্গে নিয়ে যান।
টিকিট কেটে পার্কে ঢোকার পর নিজেদের যন্ত্রপাতি নিয়েই চাইলে দর্শনার্থীরা খোঁড়াখুঁড়ি করতে পারেন। আবার সেগুলো ভাড়া নেওয়ারও সুযোগ আছে। তবে ব্যাটারি বা মোটরচালিত যন্ত্র নিয়ে ঢোকা নিষিদ্ধ।
পার্কে হীরার খনি ছাড়াও পিকনিক করার ব্যবস্থা আছে। তাঁবু খাটিয়ে সময় কাটানোর জন্য ৪৭টি নির্দিষ্ট জায়গারও ব্যবস্থা করেছে পার্ক কর্তৃপক্ষ। আছে গিফট শপ ও ওয়াটার পার্ক। চাইলে সেখানে নিরিবিলি সময় কাটাতেও যেতে পারেন।
সূত্র: আরকানসাস/সিএনএন
জেএমএস/জিকেএস