দিল্লি থেকে বাসেই যাওয়া যাবে লন্ডন
বাসে চড়েই দিল্লি থেকে পাড়ি দিতে পারবেন লন্ডনে। পথে পড়বে ১৮টি দেশ আর সময় লাগবে ৭০ দিন। যারা বিশ্ব ভ্রমণের স্বপ্ন দেখেন তাদের জন্য এই ট্রিপ হতে পারে আদর্শ। কারণ এক বাসে চড়েই তারা ১৮টি দেশ ভ্রমণ করতে পারবেন।
এই ভ্রমণের সুযোগ নিয়ে এসেছে হরিয়ানার অ্যাডভেঞ্চারস ওভারল্যান্ড নামক একটি বেসরকারি সংস্থা। এই সংস্থার তরফে জানানো হয়েছে, আগামী সেপ্টেম্বর থেকে চালু হতে পারে দিল্লি টু লন্ডন বাস পরিষেবা। জানা গেছে, ভারত-মিয়ানমার সীমান্ত শান্ত থাকলে দ্রুত চালু হবে এই বাস পরিষেবা।
এই ভ্রমণে পাড়ি দিতে হবে প্রায় ২০ হাজার কিলোমিটার পথ। সময় লাগবে ৭০ দিন। পথে পড়বে ১৮টি দেশ। দিল্লি থেকে কলকাতা হয়ে প্রথমে মিয়ানমার পৌঁছাবে বাস।
এরপর একে একে বাসটি অতিক্রম করবে থাইল্যান্ড, লাওস, চিন, কিরঘিজস্তান, উজবেকিস্তান, কাজাখস্তান, রাশিয়া, লাতভিয়া, পোল্যান্ড, চেক প্রজাতন্ত্র, জার্মানি, নেদারল্যান্ডস, বেলজিয়াম ও ফ্রান্স। এরপরই পৌঁছে যাবে লন্ডন।
ইতিহাস থেকে জানা যায়, এই বাস যাত্রা এবারই প্রথম নয়। ভারত থেকে লন্ডন পর্যন্ত বাস পরিষেবা প্রথম চালু হয়েছিল ১৯৫৭ সালে। ব্রিটেনের একটি সংস্থা এই পরিষেবা চালু করেছিল।
তখন ১১টি রুট দিয়ে যাতায়ত করত বাসটি। এই দীর্ঘ পথ অতিক্রম করা বাসটির নাম ছিল ‘আলবার্ট’। এটি একটি বিলাসবহুল ডাবল ডেকার ছিল। যার নাম দেওয়া হয়েছিল অ্যালবার্ট।
কলকাতা থেকে লন্ডন পর্যন্ত যাওয়ার জন্য ভাড়া ছিল ৮৫ পাউন্ড। ভারতীয় মুদ্রায় সাত হাজার ৮৮৯ রুপির সমান ছিল। যা বাস যাত্রার ক্ষেত্রে খুবই ব্যয়বহুল ছিল।
কলকাতা থেকে দিল্লি হয়ে লন্ডন পৌঁছাত বাস। ‘হিপ্পি রুট’ নামে জনপ্রিয় ছিল ওই বাস রুট। বেশ কয়েক বছর চলেছিল এই পরিষেবা।
তবে তারপরই বাসটি দুর্ঘটনার সম্মুখীন হয় ও পরে বাসটির পরিষেবা বন্ধ হয়ে যায়। পরবর্তী সময়ে এটি মেরামত করে একটি বিলাসবহুল বাসে রূপান্তর করা হয়।
এরপর ব্রিটিশ পর্যটক অ্যান্ডি স্টুয়ার্ট ১৯৬৮ সালের মে মাসে বাসটি ক্রয় করেন। তিনি এটি নিজের ভ্রাম্যমাণ বাড়ি ও গাড়ি হিসেবে গড়ে তোলেন। তিনি বাসে চড়ে আস্ট্রেলিয়ার সিডনি থেকে লন্ডনে নিজ বাড়ি যাওয়ার পরিকল্পনা করেন।
এই দীর্ঘ পথ তিনি একা না গিয়ে সঙ্গে কয়েকজন যাত্রী নেন। পরিকল্পনা অনুযায়ী তিনি ১৩ জন যাত্রী নিয়ে সিডনি থেকে রওনা দিয়ে ভারত হয়ে লন্ডনে পৌঁছান। তখন ওই পরিষেবাও জনপ্রিয়তা পেয়েছিল।
দীর্ঘ পথ পাড়ি দিতে বাসের যাত্রীরা বিরক্ত হত না কারণ সেখানে সময় কাটানোর বেশ ভালো ব্যবস্থা ছিল। ডাবল ডেকার বাসের নিচের ডেকে খাওয়ার জায়গা ও পড়ার জায়গা ছিল। একাকি ঘুমানোর জন্যও ছিল পৃথক স্লিপিং বাংক। ঠান্ডা আবহাওয়ায় বাসের ভেতরে হিটারেও ব্যবস্থা ছিল।
১৯৭৬ সাল পর্যন্ত সেই পরিষেবা ঠিক থাকলেও ইরানের রাজনৈতিক সমস্যা ও ভারত-পাকিস্তানের সম্পর্কের টানাপোড়েনে বাস পরিষেবা বন্ধ করে দেওয়া হয়। দীর্ঘ সময় পর ২০১২ সালে বাসটি অস্ট্রেলিয়ায় ফিরিয়ে আনা হয়েছিল। তবে তখন আর ব্যবহার উপযোগী ছিল না।
এবার নতুন করে দীর্ঘদিন পর আবার হরিয়ানার অ্যাডভেঞ্চারস ওভারল্যান্ড সংস্থা এই পরিষেবা চালু করছে। তবে এবার অন্য রুটে চলবে লন্ডনগামী বাস।
সংস্থা থেকে জানানো হয়েছে, এই বাসে ২০ জনের সিট ও প্রত্যেকের জন্য পৃথক কেবিনের ব্যবস্থা রাখা হয়েছে। যারা এই বাস পরিষেবা গ্রহণ করতে ইচ্ছুক, মাথাপিছু ১৫ লাখ টাকা ব্যয় করতে হবে তাদেরকে।
এই টাকার মধ্যে প্রত্যেক দেশের ভিসাসহ বিদেশ ভ্রমণের জন্য যাবতীয় জরুরি নথির ব্যবস্থা করে দেবে সংস্থাটি। দিল্লি টু লন্ডন বাস পরিষেবা বেশ জনপ্রিয়তা অর্জন করবে বলে আশাবাদী সংস্থাটি।
সূত্র: টাইমস অব ইন্ডিয়া/ জি নিউজ
জেএমএস/এমএস