‘বিস্ময়কর গ্রাম’ তুরতুক ভ্রমণে যা দেখবেন
লাদাখের সৌন্দর্যে মুগ্ধ বিশ্ববাসী। উত্তর ভারতে এর অবস্থান। তবে জানেন কি, অপূর্ব সুন্দর এই স্থানের দুটি রূপ। একটি সুন্দর ও অপরটি ভয়ানক।
কখনো তুষারপাতের সৌন্দর্য আপনাকে মুগ্ধ করবে, তো আবার কখনো আগ্নেয়াস্ত্রের গর্জন। প্রতিবছর বিশ্বের লাখ লাখ পর্যটক ভিড় জমান লাদাখের অপরূপ সৌন্দর্য উপভোগের জন্য।
পাথুরে রাস্তা ও ধূসর পাহাড়ে ঘেরা জম্মু-কাশ্মীর রাজ্যের লাদাখ অঞ্চল। সেখানকার পরিবেশ মানুষ বসবাসের জন্য প্রতিকূল। তবে এই ধূসর পরিবেশ পার হলেই দেখা মিলবে সবুজের। ওই স্থানের নাম তুরতুক।
সমুদ্রপৃষ্ঠ থেকে প্রায় ৩০০০ মিটার উঁচু স্থানে অবস্থিত তুরতুক গ্রামে সারা বছরই ঠান্ডা। গ্রীষ্মকালে এখানকার সর্বোচ্চ উষ্ণতা ২২ ডিগ্রি সেলসিয়াস হলেও সর্বনিম্ন তাপমাত্রা মাইনাস ১০ ডিগ্রি সেলসিয়াস। তুরতুক বেড়াতে গেলে গ্রীষ্মকালই সেরা।
ভারতের উত্তর-পশ্চিম সীমান্তের শেষ গ্রাম এটি। ধূসর পাহাড়ের প্রেক্ষাপটে নানা রঙের ফুলের অবস্থান প্রকৃতিপ্রেমীকে মুগ্ধ করবে। বিদেশি পর্যটকরা এ গ্রামকে ডাকেন ওয়ান্ডারল্যান্ড নামে। তাই বিস্ময়কর গ্রাম বললেও ভুল হবে না।
এই গ্রামের একদিকে ভারতের নুব্রা। অন্যদিকে পাকিস্তানের বালতিস্তান। শ্যোক নদী বয়ে চলেছে গ্রামটির গা ঘেঁষে। গ্রামটিতে বসবাস করেন প্রায় ৪০০০ বাসিন্দা। এ গ্রাম শেষ হলেই শুরু হয় পাকিস্তান।
এ গ্রামের সবচেয়ে প্রাচীন অংশটির নাম ইউল। এখানে দুটি মসজিদ আছে। এ ছাড়াও এখানে লোকজনের ভিড়, সবুজ অরণ্য সবই বেশি।
সবুজ পাহাড় ঘেরা এই গ্রামে ঝরনা, ছোটো স্রোতা নদী আছে চারদিকে। তুরতুক গ্রামের শিক্ষা এবং সংস্কৃতির কেন্দ্র চুতাং, শ্যোক নদীর তীরে অবস্থিত।
গ্রামটির চারদিকে অসংখ্য ফুল দেখতে পাবেন। বাইরের পাহাড় সাদা বরফে আচ্ছন্ন থাকলেও ভেতরে কিন্তু সবুজ। এই গ্রামে সবজি ও ফল-মূল চাষ হয়।
সেখানকার প্রাকৃতিক সৌন্দর্য যেমন আপনাকে মুগ্ধ করবে, ঠিক তেমনই জিভে জল আনবে লোভনীয় সব খাবার। আমিষ-নিরামিষ সব ধরনের মসলাদার খাবারই পাবেন এখানে।
তুরতুক গ্রামের বাড়িগুলো পাথরের তৈরি। গ্রামে দারিদ্র্যের ছাপ স্পষ্ট। তাদের প্রধান ভরসা পর্যটক। দরিদ্র্য গ্রাম হলেও পর্যটকদের জন্য যাবতীয় সুযোগ-সুবিধা আছে সেখানে।
তবে দিনের মাত্র কয়েক ঘণ্টাই বিদ্যুৎ থাকে। তাই যখন বিদ্যুৎ থাকবে তখনই মোবাইল ফোন, ক্যামেরা সহ দরকারি জিনিস চার্জ দিয়ে নিতে হবে।
কোথায় থাকবেন তুরতুকে?
এই গ্রামে থাকার জন্য হোমস্টে পাবেন। নিরিবিলি সময় কাটানোর আদর্শ স্থান হলো ভারত-পাকিস্তান সীমান্তের এই গ্রাম। ২০১০ সাল থেকেই এ গ্রামের দরজা পর্যটকদের জন্য খুলে দেওয়া হয়।
তুরতুক ভ্রমণে দেখতে পাবেন- জাতীয় হিমঘর, পোলো গ্রাউন্ড, ব্রোকপা দুর্গ, ওয়াটার মিল, মসজিদ, বৌদ্ধ মঠ, প্রাচীন বালতিক স্থাপত্য, পাহাড়ি ঝরনা, পাহাড় ও নদী। তুরতুকের পশমের পোশাক, হস্তশিল্পের নানা জিনিস না কিনলে ঠকবেন।
নদী পেরিয়ে যে অংশ থেকে কারাকোরাম পর্বতমালার চূড়া দেখা যায় সেটির নাম ফারোল। গ্রামের প্রায় সব গেস্ট হাউজ বা হোমস্টে সেখানেই পাবেন।
তুরতুক গ্রাম একটি স্পর্শকাতর স্থান। তাই এখানে প্রবেশ করতে হলে অভ্যন্তরীণ অনুমতির প্রয়োজন হয়। ভারতীয়দের জন্য প্রয়োজন হয় ইনার লাইন পারমিট ও বিদেশিদের লাগবে লাদাখ প্রোটেক্টেড এরিয়া পারমিট।
কীভাবে যাবেন?
লাদাখ বিমানবন্দর থেকে তুরতুকের দূরত্ব প্রায় ২০৫ কিলোমিটার। সেখান থেকে ট্যাক্সি কিংবা বাসে চেপে এই ওয়ান্ডারল্যান্ডে পৌঁছাতে পারবেন। গাড়ি ভাড়া করে নিজেও চালিয়ে নিয়ে যেতে পারেন।
তবে গ্রামে কোনো পেট্রোল পাম্প নেই। তাই নুব্রা, ডিসকিট ইত্যাদি স্থান থেকেই গাড়িতে তেল ভরে নেবেন। এরপর পায়ে হেঁটে তুরতুক ঘোরার মজাই আলাদা।
মোটামুটি তুরতুক ঘুরতে গেলে চারদিন হাতে রাখুন। তুরতুক ছাড়াও ঘুরে দেখতে পারবেন নুব্রা, ডিসকিট, হুন্ডার।
এ গ্রামের বিভিন্ন স্থানে ভারতীয় সেনাবাহিনীররা টহল দেন। স্থান ও সময় বিশেষে তাদের নির্দেশ মেনে চলুন। সঙ্গে নিজেরাই খাওয়ার পানি বহন করুন।
অতীতে এ গ্রাম ছিল পাকিস্তান অধিকৃত কাশ্মীরের অংশ। ভারত-পাক যুদ্ধের পর গ্রাম দখল করে নেয় ভারত। ফলে তুরতুকে ইন্দো-পাক সংস্কৃতির ছাপ সুস্পষ্ট।
সূত্র: বিবিসি/হিন্দুস্তান টাইমস
জেএমএস/এএসএম