দেশের সর্বোচ্চ বিন্দু ‘সাকা হাফংয়ে’ পৌঁছাবেন যেভাবে
দেশের সবচেয়ে উঁচু পর্বত কোনটি? এক মুহূর্ত চিন্তা না করেই নিশ্চয়ই আপনি উত্তর দেবেন, তাজিন ডং। তবে জানলে অবাক হবেন, তাজিং ডং কিংবা কেওক্রাডং কোনোটিই দেশের সর্বোচ্চ চূড়ার পাহাড় নয়।
বান্দরবানের গহীনে বাংলাদেশ-বার্মা সীমান্তের মদক রেঞ্জে অবস্থিত সাকা হাফং দেশের সর্বোচ্চ বিন্দু হিসেবে বিবেচিত। এই পর্বত মদক তং, ক্লাংময়, ত্লাংময়, বর্ডার হুম ইত্যাদি নামে পরিচিত।
সমুদ্রপৃষ্ট থেকে এই পর্বতের অবস্থান ৩ হাজার ৪৮৭ ফুট উঁচুতে। দানব আকৃতির এই পাহাড় দেশের সর্বোচ্চ বিন্দু হিসেবে সবার কাছেই কমবেশি পরিচিত। বিশেষ করে অ্যাডভেঞ্চারপ্রিয়দের কাছে স্থানটি খুবই আকর্ষণীয়। দেশের সর্বোচ্চ বিন্দুতে আরোহণ করে সৌন্দর্য উপভোগ করার ইচ্ছা তো সবার মনেই আছে।
যদিও জাতীয়ভাবেও সাকা হাফং এখনো দেশের সর্বোচ্চ চূড়ার স্বীকৃতি পায়নি। তবুও সীমান্তের কঠিন পরিস্থিতি, কষ্টসাধ্য পথ, জোঁক, সাপ, ভালুকসহ নানা বন্যপ্রাণীর আক্রমণ উপেক্ষা করেও প্রতিবছর অসংখ্য পর্যটকরা ছুটে যান সাকা হাফংয়ে।
আবার অনেকেরই জানা নেই, কীভাবে সেখানে পৌঁছাবেন কিংবা কী কী সঙ্গে নিয়ে যাবেন, কোথায় থাকবেন, খাবেন কী এমন হাজারো প্রশ্ন পর্যটকের মনে রয়েছে। তাই যারা শীতের এই সূচনালগ্নে পাহাড় ট্রেকিংয়ে যাওয়ার পরিকল্পনা করছেন, তাদের জন্য সাকা হাফং হতে পারে উপযুক্ত স্থান।
দেশের সর্বোচ্চ এই বিন্দুতে পৌঁছানোর জনপ্রিয় এক রুট হলো থানচি থেকে ইঞ্জিনচালিত নৌকায় তিন্দু ও বড় পাথর হয়ে রেমাক্রি বাজার পৌঁছাতে হবে।
সেখানে পৌঁছেই নৌকা থেকে নেমেই শুরু মূল অভিযান। রেমাক্রি থেকে নাফাকুম, জিনা পাড়া, আমিয়াকুম, সাতভাই কুম, হাজরাই পাড়া, নেফিউ পাড়া হয়ে সাকা হাফং এর চূড়ায় পৌঁছাতে হবে।
যথেষ্ট কষ্টসাধ্য হলেও যখন আপনি সেখানে পৌঁছাবেন শরীরের সব ক্লান্তি মুহূর্তেই দূর হয়ে যাবে। আপনি যে পথ ধরেই সেখানে পৌঁছানোর চেষ্টা করুন না কেন সময় লাগবে অন্তত ৫-৬ দিনের বেশি। তাই সাকা হাফং অভিযানের প্রস্তুতিও ভালো করে নেওয়া প্রয়োজন।
পাহাড়ি রাস্তা, ক্ষুদ্র নৃ-গোষ্ঠিদের বসতবাড়ি ও জীবনধারণ, ছোট-বড় ঝরনা, প্রকৃতি, বন্যপ্রাণী, জঙ্গল, পাহাড় সবকিছুরই দেখা পাবেন পুরো অভিযানে।
অল্প-স্বল্প ট্রেকিংয়ের অভিজ্ঞতা না থাকলে ও শারীরিকভাবে ফিট না হলে বড় অভিযানে যাওয়া উচিত নয়। তাই দেশের সর্বোচ্চ বিন্দুতে পৌঁছাতে সাহস ও শক্তি দুটোই থাকা জরুরি।
সাকা হাফং ভ্রমণে সঙ্গে যা যা রাখা জরুরি
সাকা হাফং অভিযানকালে অবশ্যই সঙ্গে জিপিএস ডিভাইস, ভালো ব্যাকপ্যাক, গ্রিপ করা জুতা, গামছা, ব্যাটারিসহ উন্নতমানের টর্চ-লাইট, শুকনো খাবার, পানির বোতল, ফ্লাক্স, টুথপেস্ট, টুথব্রাশ, হালকা পোশাক, শীতের কাপড় নিন।
এ ছাড়াও প্রয়োজনীয় ওষুধ, ফার্স্ট এইড বক্স, প্রচুর খাবার স্যালাইন, টয়লেট পেপার, ৭০ ফুট দৈর্ঘ্যের শক্ত দড়ি, পলিথিন ব্যাগ, প্লেট, গ্লাস, চামচ, ছোট ছুরি, গ্যাস লাইট, ক্যামেরা, উন্নতমানের পাওয়ার ব্যাংক ইত্যাদি সঙ্গে নিতে ভুলবেন না।
আর যারা পাহাড়ি গ্রামে রাত্রিযাপন না করে ক্যাম্পিং করতে চান তারা অবশ্যই সঙ্গে তাবু বা স্লিপিং ব্যাগ রাখুন। যেহেতু বান্দরবানের পাহাড়ি গ্রামগুলোতে কোনো হোটেল বা রিসোর্ট নেই তাই পাহাড়ি গ্রামগুলোতেই রাত্রিযাপনের ব্যবস্থা করতে হবে।
গাইডের সহযোগিতায় কিংবা গ্রাম প্রধানকে অনুরোধ করে যে কোনো গ্রামে খুব স্বাচ্ছন্দে কাটিয়ে দিতে পারেন একটি রাত। টাকা দিলে তারাই খাবারের ব্যবস্থা করে দেবে।
জেএমএস/জেআইএম