চাকরি ছেড়ে বিশ্বভ্রমণ, গাড়িতেই ৩ বছর
ভ্রমণ সবার জন্য আনন্দদায়ক। সবাই চায় বিশ্বভ্রমণ করতে। তবে সময় ও সাধ্যে হাতের নাগালে না থাকায় অনেকেই বিশ্বভ্রমণের ইচ্ছা মনেই যত্ন করে রাখেন। কেউ আবার অতিরিক্ত পরিশ্রম করে অর্থ জমান ভ্রমণের জন্য।
ভ্রমণের নেশায় কতজনই না কত কিছু করেন! তবে কখনও কি শুনেছেন, ভ্রমণের জন্য কেউ চাকরি ছেড়ে গাড়িতেই পার করেছেন বছরের পর বছর। হাতে পর্যাপ্ত অর্থ না থাকা স্বত্বেও স্বামী-স্ত্রী ঘুরে বেড়ানোর নেশায় মত্ত হয়ে এমনই কাণ্ড ঘটান ২০১৯ সালে।
বলছি, ইংল্যান্ডের বাসিন্দা রস ও সারা ব্যারেটকে নিয়ে। দীর্ঘদিন লিভ ইন সম্পর্কে থাকার পর ২০১৯ সালে বিয়ে করেন তারা। বিয়ের আগেই মা-বাবা বনে যান এই দম্পতি। যখন তারা বিয়ে করেন তখন তাদের ছেলে রিলির বয়স ২ বছর। ছেলেকে নিয়েই হানিমুনে যাওয়ার পরিকল্পনা করেন তারা।
দীর্ঘদিন ধরেই তারা দুজনই বিশ্বভ্রমণের স্বপ্ন বুনে আসছিলেন। শুধু সময়ের অপেক্ষা ছিলো। তবে বিশ্বভ্রমণে যেতে চাইলেও তো আর যাওয়া সম্ভব নয়, এজন্য প্রয়োজন অনেক অর্থ ও ছুটির।
এরপর হঠাৎ নেওয়া সিদ্ধান্তেই রস ও সারা দম্পতি বিশ্বভ্রমণের সিদ্ধান্ত নিলেন। এজন্য দুজনই চাকরি ছাড়লেন। নিজেদের কটেজ ২ বছরের জন্য ৮০০ পাউন্ডে ভাড়া দিয়ে বেড়িয়ে পড়েন তারা। সঙ্গে ২ বছরের ছেলে ও পোষ্য কুকুর।
প্লেন, গাড়ি কিংবা হোটেল এসবের জন্য অর্থ নষ্ট করেননি তারা। ২০১৪ সালে কেনা একটি ক্যাম্পার ভ্যানে চড়েই তারা বেড়িয়ে পড়েন বিশ্বভ্রমণে। তাদের যাত্রা শুরু হয় ২০১৯ সালে। ফ্রান্স, জার্মানি, সুইজারল্যান্ড, ইটালি, স্পেন, টার্কি ও বুলগেরিয়া ঘোরেন তারা।
এই যাযাবর জীবন তারা দুজনই উপভোগ করছিলেন। একে একে কেটে যায় ৩ বছর। ক্যাম্পার ভ্যানেই তারা কাটিয়ে দিয়েছেন কয়েকটি বছর। বর্তমানে তার ছেলের বয় ৫ বছর। বিশ্বভ্রমণের মধ্য দিয়েই প্রাথমিক শিক্ষা অর্জন করেছে তাদের ছেলে।
এ বিষয়ে রস জানান, ‘প্রতিদিনই ঘুম ভেঙে দেখতেম নতুন নতুন স্থনের দৃশ্য। যা খুবই রোমাঞ্চকর। গাড়ির দরজা ঠেলে নিচে পাপ রাখলেই নতুন জায়গার মাটি। বিষয়গুলো সত্যিই প্রকাশ করার মতো নয়। জামা কাপড়, বিছানা, সবই ভ্যানেই থাকতো।’
সারা বলেন, ‘রান্নাবান্না, খাওয়া দাওয়া কিংবা গোসল সুযোগ বুঝে ক্যাম্পারভ্যানের বাইরেই সম্পন্ন করতাম। যদিও মহামারির সময় এভাবে ঘুরতে অসুবিধা হয়েছিল। তবে ভূমধ্যসাগরের তীরে বসে রান্না করা, রোদ পোহানো কিংবা সমুদ্রভ্রমণ করার আনন্দ তো আর কখনো ঘরে বসে পাওয়া যাবে না।’
তারা জানান, ইতালিতে লকডাউন শুরু হতেই তারা ক্যাম্পারভ্যানে পাড়ি দেন বুলগেরিয়াতে। সেখান থেকে সাইবেরিয়া, ক্রোশিয়া, স্লোভানিয়া হয়ে আবারও ইটালিতে ফেরেন। এরপর যান ফ্রান্সে। তারা বিবাহবার্ষিকী পালন করেন লেক অ্যানেসিতে।
চলতি বছরের জুন মাসে ইংল্যান্ডে নিজেদের বাড়িতে ফেরেন রস ও সারা। রস ও সারার এই অ্যাডভেঞ্চার ভ্রমণকে অনেকেই হলিউডের সুপারহিট ফিল্ম সিরিজ ইন্দিয়ানা জোনস্-এর সঙ্গে তুলনা করছেন।
শুধু তারাই প্রথম দম্পতি নন, যারা চাকরি ছেড়ে বিশ্বভ্রমণে বেড়িয়েছেন। মুম্বাইয়ের আরেক দম্পতি সন্দীপা ও চেতন চাকরি ছেড়ে এমনকি বসত বাড়ি বিক্রি করে রাস্তায় বেরিয়ে পড়েছিলেন ২০১৩ সালে। ২ বছরেরও বেশি সময় ধরে তারা দেশের ১১টি রাজ্য ও ৮টি দেশ ঘুরেছিলেন।
সূত্র: মেট্রো
জেএমএস/জেআইএম