একসঙ্গে প্রকৃতি ও প্রাণীর দেখা মিলবে যেখানে
মাসুমা মুসরাত শৈলী
যানজটের ধুলিমাখা শহর ছেড়ে প্রকৃতির মাঝে হারিয়ে যেতে কার না মন চায়! সবুজ অরণ্য, পাখি, প্রাণী, লেকসহ প্রকৃতির সব সৌন্দর্য দেখতে অনেকেই দেশের বিভিন্ন স্থানে ঘুরতে যান। তবে কর্মব্যস্ত জীবনে অনেকেরই দু’দণ্ড অবকাশ নেই।
এমন ব্যক্তিরা সাপ্তাহিক ছুটির দিনটিতে আশেপাশের বিভিন্ন স্থানে ঘুরতে যাওয়ার পরিকল্পনা করেন। আপনিও যদি তাদের দলে হন, তাহলে দেরি না করে পরিবার-পরিজনকে সঙ্গে নিয়ে রাজধানীর ভেতরেই প্রকৃতি ও প্রাণীর সৌন্দর্য উপভোগ করতে পারবেন।
তেমনই এক স্থান হলো বাংলাদেশের জাতীয় চিড়িয়াখানা। হয়তো আপনি অনেকবারই এ জনপ্রিয় স্থানে ঘুরতে গিয়েছেন। তবে করোনাকালে দীর্ঘদিন বন্ধ থাকায় বর্তমানে সেখানে গেলে অনেক নতুন প্রাণী দেখতে পাবেন। একইসঙ্গে সবুজ অরণ্যে কিছু সময় কাটালে দেখবেন মন ভালো হয়ে যাবে।
চিড়িয়াখানায় প্রথম ঢুকতেই এক সেকেন্ডের জন্য মনে হবে, এ আমি কোনো স্বপ্নের রাজ্যে চলে এসেছি। নজর কাড়বে শুরুতেই মারবেল পাথরে খোদায় করা চিড়িয়াখানার ম্যাপ। শীতল বাতাসের দোলা আর চিরসবুজ ঘেরা পরিবেশ নিমিষেই আপনার মনকে প্রফুল্ল করে তুলবে।
চিড়িয়াখানায় ঢুকতেই প্রথমে যে প্রাণীর দেখা পাবেন, সেটি হলো হরিণ। একটু এগিয়ে যেতেই বানর আর দর্শনার্থীদের খুনসুটি চোখে পড়বে। বিশেষ করে শিশুরা বানরদের খাবার দেয় সে দৃশ্য আপনাদের মুগ্ধ করবে।
একটু এগিয়ে যেতেই দেখবেন অতিথি পাখি। যেনো নিজ মনে ডেকে যাচ্ছে তারা। মনে হবে তারা আপনাকে কিছু বলতে চায়। তাদের কলকাকলিতে মন জুড়িয়ে যাবে। একে একে সব পশু-পাখির দেখা পাওয়া যাবে।
জানা অজানা কত রকমের প্রাণী যে আছে। এতো বড় চত্ত্বর হাঁটতে গেলে তো একটু ক্লান্ত লাগবেই। তবে বসার জন্য পেয়ে যাবেন দু’টো লেক। যার নাম উৎসব দ্বীপ ও নিঝুম দ্বীপ। এই লেকে বসে একটু শীতল হাওয়া আপনার ক্লান্তি দূর করে দেবে।
চিড়িয়াখানায় একে একে আরও দেখা পাবেন, নানা প্রজাতির পশু-পাখি, বানর, আফ্রিকান সিংহ, ইম্পালা, সিনোরাস শকুন, কেশোয়ারা, কুড়াবাজ, বাঘ, শিয়াল, হাতি, জলহস্তী, কচ্ছপ, অজগর, ময়ূরসহ অনেক নাম জানা-অজানা প্রাণী।
করোনাকালে দীর্ঘদিন ধরে বন্ধ ছিলো চিড়িয়াখানা। এ কারণে প্রাণীদের প্রজননও বেড়েছে অনেক। যেমন- করোনাকালে বাঘের দুটি বাচ্চা হয়েছে। যা দেখতে ভিড় করছেন দর্শনার্থীরা। বাচ্চাগুলোর একে অপরের খুনসুটি যেনো এক মনোরম দৃশ্য। বিকেলের দিকে থাকে হাতির ফুটবল খেলা।
চিড়িয়াখানা এক অদ্ভুত ভালো লাগার জায়গা, যেখানে মিলবে সবুজ অরণ্য ও লেক। আর আছে বিভিন্ন প্রজাতির প্রাণী। এছাড়াও পিকনিক স্পট। আরও দেখতে পাবেন যাদুঘর।
কীভাবে যাবেন?
ঢাকা শহরের যে কোনো জায়গা থেকে মিরপুর ১ নম্বরগামী বাসে উঠলে একদম চিড়িয়াখানার সামনে নামাবে। আপনারা চাইলে সিএনজি ও গাড়িতেও যেতে পারেন। সেখানে পার্কিং ব্যবস্থাও আছে।
কোথায় খাবেন?
চিড়িয়াখানার বাইরে বিভিন্ন খাবারের দোকান আছে। অবশ্যই খাওয়ার আগে দরদাম জেনে নিন। চিড়িয়াখানা ভেতরেও খাবারের দোকান পাবেন।
পরিদর্শনের সময়কাল-
গ্রীষ্মকালে (এপ্রিল-অক্টোবর): সকাল ৯টা থেকে বিকেল ৬ টা। শীতকালীন মৌসুমে (নভেম্বর-মার্চ): সকাল ৮টা থেকে বিকেল ৫টা।
সাপ্তাহিক বন্ধ: প্রতি রবিবার সাপ্তাহিক বন্ধ থাকে।
টিকেট মূল্য: ৫০ টাকা, স্টুডেন্ট হলে অর্ধেক ফি। ০-২ বছরের বাচ্চাদের টিকিট লাগে না। জাদুঘরের টিকিট ৫ টাকা।
চিড়িয়াখানাতে দর্শনার্থীদের পশু-পাখি দর্শন ছাড়াও নিঝুম ও উৎসব নামে ২টি পিকনিক স্পট, শিশুদের খেলাধুলা ও বিনোদনের ১টি শিশুপার্ক, পুরুষ ও মহিলাদের জন্য আলাদা নামাজের ব্যবস্থাও রাখা হয়েছে।
এ ছাড়াও এখানে একটি কেন্দ্রীয় মসজিদও আছে। প্রতিবন্ধীদের ঘোরানোর জন্য আছে হুইল চেয়ারের ব্যবস্থা।
জেএমএস/জিকেএস