এশিয়ার বৃহত্তম রাবার বাগানে একদিন
ইসতিয়াক আহমেদ
সমুদ্র-পাহাড় এসব দর্শনীয় স্থানে তো সব সময়ই পর্যটকদের আনাগোনা লেগেই থাকে। তবে বেড়ানোর জন্যে এসব স্থানের বাইরেও অনেক দর্শনীয় স্থান আছে।
তেমনই এক স্থান হলো এশিয়ার বৃহত্তম রাবার বাগান। সেখানে গেলে চোখে পড়বে সারি সারি রাবার গাছ। কীভাবে রাবার সংগ্রহ করা হয় তাও সরেজমিনে দেখতে পারবেন।
রাবার বাগানে যেতে হলে ধরতে হবে কার্পাস মহলের পথ। কি নাম শুনেই অবাক লাগছে। এ আবার কোন জায়গা? ১৮৬০ সালের ২০ জুন রাঙ্গামাটি, খাগড়াছড়ি ও বান্দরবান এই তিন পার্বত্য অঞ্চলকে নিয়ে পার্বত্য চট্টগ্রাম জেলা সৃষ্টি হয়।
জেলা সৃষ্টির পূর্বে এর নাম ছিল কার্পাস মহল। পার্বত্য চট্টগ্রাম জেলা থেকে ১৯৮১ সালে বান্দরবান ও ১৯৮৩ সালে খাগড়াছড়ি পৃথক জেলা সৃষ্টি করা হয়।
১৬৬৬ সালে দিল্লীর বাদশা আওরঙ্গজেবের শাসনকালে বাংলার শাসনকর্তা সুবেদার শায়েস্তা খানের পুত্র বুজুর্গ উমেদ আলী খাঁ আরাকান রাজাকে পরাজিত করেন। এরপর তিনি চট্টগ্রাম দখল করে এর নামকরণ করেন ইসলামাবাদ।
শাসনকার্যের সুবিধার জন্য ও শান্তি শৃঙ্খলা রক্ষাকল্পে সমগ্র এলাকাকে ৭টি চাকলায় ভাগ করে এক একটি পরগণার একেকটি নামকরণ করেন। ঐতিহাসিক ‘ইছাপুর পরগণা’ মূলত বর্ধিত আকারে হয়েই বর্তমান ফটিকছড়ি উপজেলা।
ঘোরাঘুরি করতে করতে আমরা এরপর ছুটলাম চট্রগ্রামের ফটিকছড়ির উদ্দেশ্যে। কারণ সেখঅনেই দেখা মিলবে এশিয়া মহাদেশের সবচেয়ে বিশাল আয়তনের রাবার বাগানের।
ঢাকা চিটাগাং হাইওয়ে ধরে চলতে চলতে ফেনী পার হয়ে বারইয়ারহাট এসে বামে মোড় নিয়ে করের হাঁট পেরিয়ে তখনও চলছিলাম আমরা। আপাতত গন্তব্য দাঁতমারা। যা কি না চট্টগ্রাম জেলার ফটিকছড়ি উপজেলার অন্তর্গত একটি ইউনিয়ন।
জনশ্রুতি আছে, কোনো এক সময় একটি পাগলা হাতি বড় একটি গাছে দাঁত দিয়ে আঘাত করেছিল। এরপর ওই গাছকে দাঁতমারা বলা হত। পরবর্তীতে আশেপাশের এলাকাগুলোও দাঁতমারা হিসেবে পরিচিতি লাভ করে। এই দাঁতমারা বিখ্যাত রাবার বাগানের জন্য।
বাংলাদেশ বনশিল্প উন্নয়ন কর্পোরেশনের ১৭টি রাবার বাগানের মধ্যে ৪টি অবস্থিত হেয়াকোতে। হেয়াকো বাজার পার হলেই দেখা পাবেন এশিয়ার সবচেয়ে বড় দাঁতমারা রাবার বাগানের।
প্রায় ৪ হাজার ৬৮৯ একর এলাকা জুড়ে এই রাবার বাগানের অবস্থান। ১৯৭০-১৯৮৮ সালের মধ্যেই গড়ে তোলা হয় এই বাগান। আর ১৯৭৮ সাল থেকে বাগান থেকে রাবার উৎপাদন শুরু হয়।
রৌদ্রোজ্জল দিনে হেয়াকোর রাবার বাগানের উঁচু গাছের সবুজ পাতার ফাঁক দিয়ে সোনালি রোদ উঁকি দিয়ে অকৃত্রিম সৌন্দর্যে ভরিয়ে তোলে চারপাশ। ভিন্ন ভিন্ন ঋতুতে ভিন্ন ভিন্ন সাজে সেজে ওঠে রাবার বাগান।
বর্ষায় চারদিকে সবুজে ভরে ওঠে। আবার বসন্তের পাতা ঝরার সময়ও রাবার বাগানের সৌন্দর্য দেখে আপনি মন্ত্রমুগ্ধ হয়ে পড়বেন!
কীভাবে রাবার বাগানে যাবেন?
ঢাকা থেকে সরাসরি খাগড়াছড়ির বাস পেয়ে যাবেন। সেক্ষেত্রে সরাসরি বাগানের সামনেই নামতে পারবেন। অথবা ঢাকা-চট্রগ্রাম হাইওয়েন বারইয়ারহাট থেকে রামগড়গামী বাসে বা সিএনজিতে চড়ে সহজেই চলে যেতে পারবেন হেয়াকোর নামক স্থানে।
আর সেখানেই অবস্থিত রাবার বাগানগুলো। যদি চান ট্রেনেও যেতে পারেন। তাহলে নামতে হবে ফেনী স্টেশনে। সেখান থেকেও খাগড়াছড়িগামী বাস পাবেন। আর সেই বাসে চড়েই চলে যেতে পারবেন সহজেই।
জেএমএস/জেআইএম