বাড়বকুণ্ড ট্রেইলে যা যা দেখবেন
ইসতিয়াক আহমেদ
বাংলাদেশের একমাত্র গরম পানির কূপ। যেখানে কি না পানিতেও আগুন জ্বলে। এমনকি সেখানে দুধ পড়লেই হয়ে যায় দই। আছে শত শত বছরের পুরোনো সব মন্দির। এছাড়াও বাড়বকুণ্ড ট্রেইলে আছে ঝিরিপথ, পাহাড় ও ঝরনা। বলছিলাম চট্রগ্রামের বাড়বকুণ্ড ট্রেইলের কথা।
এইতো কিছু দিন আগেই ঘুরে আসলাম বাড়বকুণ্ড ট্রেইল থেকে। যদিও ভাগ্য জোরে বেঁচে ফিরেছিলাম হরকাবানের হাত থেকে। আজ বলবো সেই গল্প। আগের পর্বে বলেছি রহস্যময় বাড়বকুণ্ডের অগ্নিকুণ্ডের কথা।
প্রথম পর্বে বাড়বকুণ্ড ট্রেইল সম্পর্কিত বেশ কিছু তথ্য জানানো হয়েছে। আজ শেষ পর্বে জেনে নিন এই স্থানের ইতিহাস ও কীভাবে যাবেন সেখানে-
বাড়বকুণ্ডের অগ্নিকুণ্ড নিয়ে সবচেয়ে জনপ্রিয় জনশ্রুতি হলো, প্রাচীনকালে এখানে দেব-দেবীর উদ্দেশ্যে নরবলি দেওয়া হতো। হঠাৎ একদিন নরবলি দেওয়ার স্থানে আগুন ধরে যায়। সবাই ধারণা করে, নরবলি দেওয়া বন্ধ করার নির্দেশ দিয়েছেন দেবতা।
অনেক চেষ্টার পরও এই আগুন নেভানো যায়নি। যুগ যুগ ধরে এটি যেন মৃত আগ্নেয়গিরির মুখ; যার ভেতর থেকে সর্বদা আগুন বের হচ্ছে। হিন্দু ধর্মাবলম্বীদের মতানুযায়ী, এটি ধর্মীয় আশীর্বাদ। এই মন্দির দেখভাল করা পুরোহিতের মতে, যদিও এটি ৫১ টি সতীপিট বা শক্তি পিটের মধ্যে একটি।
বাড়বকুণ্ড মন্দিরে উঠার সিঁড়ির পাশে আগে ছিল একটি তেঁতুল গাছ। বর্তমানে সেটি নেই। সেখানেই আছে দধি ভৈরব। এটি একটি গোলাকৃতির শিলাখণ্ড। এর উপরের দিকে একটি গর্ত আছে যেখানে দুধ দিলে তা নিমিষেই দইয়ে পরিণত হয়। এই কারণেই একে দধি ভৈরব বলে।
বিখ্যাত অগ্নিকুণ্ড দেখেই বেরিয়ে পড়লাম এবার ঝরনা দেখতে। এই ট্রেইলে মূলত ৩টি ঝরনা আছে। মন্দিরের গেট থেকে থেকে নেমে হাতের বাম দিকে একটি খুম পাবেন। ঠিক তার পাশ ঘেঁষেই যে ঝিরিপথ আছে, তা ধরে ২০-২৫ মিনিট হাঁটলেই প্রথম ঝরনার দেখা মিলবে।
ঝিরিপথ ধরে এগিয়ে গেলেই বাকি ঝরনাগুলো পেয়ে যাবেন। বিশেষ করে শেষ ঝরনার কথা বলতেই হয়, সেটা পর্যন্ত যেতে ধৈর্য থাকার অতি প্রয়োজন। সেটি দেখার পর আপনার শরীরের সারাদিনের ক্লান্তি কেটে যাবে।
যেভাবে যাবেন বাড়বকুণ্ড ট্রেইলে
বাড়বকুণ্ড ট্রেইল অপরিচিত হওয়ার কারণে অনেকেই সেখানে যান না। অথচ এই ট্রেইল খুবই সুন্দর একটি স্থান। ঢাকা থেকে চট্রগ্রামগামী বাসে যেতে হবে সেখানে। বাস থেকে নেমে বাড়বকুণ্ড স্টেশনে পৌঁছাতে পারবেন।
সেখান থেকে মাত্র ৫-৭ মিনিট পায়ে হাঁটার পথ পেরিয়ে শুরু পাহাড়ি ট্রেকিংয়ের পথ। বাড়বকুণ্ড বাজারে কিছু হালকা মানের হোটেল আছে সেখানে সকাল বা দুপুরের খাবার খেয়ে নিতে পারেন।
ফেরার পথে চট্রগ্রাম থেকে বাসে বা ট্রেনে ফিরতে পারেন। বাড়বকুণ্ড বাজার থেকে ১৭ নম্বর গাড়িতে ৪০-৫০ ভাড়ায় পৌঁছে যাবেন অলংকার মোড় বাস স্ট্যান্ডে।
বাড়বকুণ্ডর পথে চলতে সতর্কতা
>> ট্রেকিংয়ের এই পথে হাঁটতে গেলে জোঁকের দেখা মিলতে পারে। তাই সঙ্গে লবণ বা সরিষার তেল নিতে পারেন।
>> বর্ষায় টেইলের পথ ভয়ংকর হয়ে ওঠ। পাহাড়ি ঝিরিগুলো হয়ে উঠতে পারে মরণ ফাঁদ।
>> বর্ষায় পাহাড় ধ্বসের পাশাপাশি ঝিরিগুলোতে ফ্লাস ফ্লাড বা হরকাবান হয়ে থাকে।
>> হরকাবানে প্রচুর পানির স্রোতে বড় বড় পাথরের বোল্ডা ও গাছপালাও ভেসে যেতে পারে।
>> পাহাড়ি পথে ছোট ছোট খুম ও ঝরনাগুলোও বিপজ্জনক।
>> মনে রাখবেন পাহাড়ি ঝিরির সামান্য হাঁটু পানিও ডেকে আনতে পারে বিপদ।
>> পর্যাপ্ত প্রস্তুতি ছাড়া বর্ষায় পাহাড় ও ঝিরিতে যাবেন না।
পাহাড় সুন্দর, তবে পাহাড় ভয়ংকর। এই ট্রিপে পাহাড়ের ভয়ংকর রুপ দেখতে হয়েছে। পাহাড় ধ্বসের সঙ্গেই হরকাবানে আটকা পড়া একজনকে বাঁচাতে গিয়েই আটকা পড়ি আমি নিজেও।
যাইহোক, ঘুরতে বা ট্রেকিংয়ে যেখানেই যাবেন কখনও প্রকৃতি ও পরিবেশের ক্ষতি করবেন না।
জেএমএস/এমএস