৩৬৫ বছর ধরে টিকে আছে পঞ্চগড়ের শাহী মসজিদ
আজাহার ইসলাম
মুঘল আমলের স্থাপত্যশৈলীর অন্যতম এক নিদর্শন মির্জাপুর শাহী মসজিদ। পঞ্চগড় জেলা শহর থেকে ১৮ কিলোমিটার দূরে আটোয়ারী উপজেলার মির্জাপুর গ্রামে অবস্থিত মসজিদটি।
আনুমানিক ৩৬৫ বছর পূর্বে স্থাপিত মসজিদটির নির্মাণ শৈলীর নিপুণতা ও দৃষ্টিনন্দন কারুকার্য এখনও দর্শনার্থীদের নজর কাড়ে। ইসলামিক টেরাকোটা, ফুল ও লতাপাতার কারুকার্য খোদাই করা আছে মসজিদটির দেওয়াল জুড়ে।
মসজিদের সামনে আয়তকার টেরাকোটার কারুকার্যগুলো একটির সঙ্গে আরেকটির মিল নেই। মসজিদের দৈর্ঘ্য ৪০ ফুট ও প্রস্থ ২৫ ফুট। একই সারিতে আছে ৩টি গম্বুজ। এর চারকোণায় আছে ৪টি মিনার। সামনে আছে ৩টি দরজা।
সদর দরজা ও মাঝখানের গম্বুজের সামনের দিকে দু’পাশে আছে ২টি ছোট মিনার। মসজিদের ভেতরের অংশে খোদাই করা আছে ফুল, লতা-পাতা ও কুরআনের আয়াত সংবলিত ক্যালিগ্রাফি। এসব খোদাই করা কারুকার্য বিভিন্ন রঙে সাজানো।
মসজিদের মনোমুগ্ধকর দৃশ্য ইবাদতে মশগুল ধর্মপ্রাণ মুসলিমদের হৃদয়ের তৃষ্ণা মেটায়। এ ধরনের কারুকার্যমণ্ডিত নকশা ইরানের মসজিদ ও প্রাচীন অট্টালিকায় বিদ্যমান আছে।
মসজিদের সামনে আছে একটি খোলা স্থান। এর একপাশে আছে সুসজ্জিত পাকা তোরণ। এর উভয় পাশেই আছে আকর্ষণীয় নকশা ও খাঁজ কাঁটা স্তম্ভ। তার মাঝে চ্যাপ্টা গম্বুজ তোরণের সৌন্দর্য বাড়িয়েছে।
সুসজ্জিত গম্বুজের উপরে ক্ষুদ্র আকৃতির চূড়া তোরণটিকে ১৬ কলা রূপ দিয়েছে। এ মসজিদের পাশেই আছে একটি নূরানী মাদ্রাসা। সামনের দিকে আছে প্রাচীন আমলের একটি অব্যবহৃত কূপ।
এছাড়াও তোরণের সামনের দিকে আছে একটি পুকুর। যেখানে শিশু-কিশোর ও এলাকাবাসীরা গোসল করতে পারে। মসজিদটির নামকরণ নিয়েও আছে নানা ইতিহাস।
স্থানীয়দের মতে, মালিক উদ্দিন নামে মির্জাপুর গ্রামের এক ব্যক্তির উদ্যোগেই মসজিদটি নির্মিত হয়। এই মালিক উদ্দিন মির্জাপুর গ্রামের প্রতিষ্ঠাতা। তার বন্ধু মোহাম্মদ নামের এক ব্যক্তি মসজিদটির নির্মাণ কাজ সম্পন্ন করেন।
প্রত্নতত্ত্ববিদদের ধারণা অনুযায়ী, মুঘল শাসক শাহ সুজার শাসনামলে (১৬৫৬ সাল) মসজিদটি নির্মাণ করা হয়। মসজিদের নির্মাণ সম্পর্কে পারস্য ভাষায় লিখিত মধ্যবর্তী দরজার উপরে একটি ফলক আছে।
ফলকের ভাষা ও লিপি অনুযায়ী ধারণা করা হয়, মুঘল সম্রাট শাহ আলমের রাজত্বকালে এর নির্মাণ কাজ সম্পন্ন হয়। কেউ মনে করেন, মুঘল শাহজাদা আজমের সময়কালে (১৬৭৯ সাল) নির্মিত ঢাকা হাইকোর্ট প্রাঙ্গণের মসজিদের সঙ্গে এই মসজিদের নির্মাণশৈলীর সাদৃশ্য আছে।
এলাকাবাসীরা জানান, মসজিদটি নির্মাণের দীর্ঘ প্রায় ৩৬৫ বছর পার হলেও কোথাও উল্লেযোগ্য ত্রুটি চোখে পড়েনি। একসময় প্রবল ভূমিকম্পে মসজিদটির বেশ কিছু অংশ ভেঙে যায়।
তখন মির্জাপুর গ্রামের বাসিন্দা মালিক উদ্দীন মসজিদটি সংস্কারের জন্য ইরান থেকে কারিগর নিয়ে আসেন। তখন থেকে আর সংস্কার হয়নি। বর্তমানে মসজিদটির দেওয়ালে ও গম্বুজে কিছুটা ফাটল ধরেছে। এছাড়া ভেতরের বিভিন্ন জায়গায় পলেস্তারাও অল্প অল্প খসে পড়েছে।
মির্জাপুর শাহী মসজিদের নিপুন কারুকার্য, সোন্দর্য্য, ইতিহাস ও ঐতিহ্য ভ্রমণপিপাসুদের মনের তৃষ্ণা মেটায়। তবে ঐতিহ্যবাহী এ মসজিদটির তত্ত্বাবধায়নে এলাকাবাসীর পাশাপাশি সরকারের দৃষ্টিপাত জরুরি।
জেএমএস/এএসএম