জাফলং গিয়ে ভারতের ডাউকি দর্শন
খাসিয়া জৈন্তিয়া পাহাড়ের পাদদেশে অবস্থিত জাফলং। পিয়াইন নদী তীরের সাজানো সব পাথর জাফলংয়ের প্রধান আকর্ষণ। বর্ষা ও শীতকালে জাফলংয়ের সৌন্দর্য বেড়ে যায় দ্বিগুন। বর্ষাকালে বৃষ্টিস্নাত গাছপালা আর খরস্রোতা নদীর সৌন্দর্য হয় দেখার মতো।
একইসঙ্গে সীমান্তের ওপারে ভারতের পাহাড় টিলা, ডাউকি পাহাড়ের দুরন্ত ঝরনা, ঝুলন্ত ডাউকি ব্রিজ, পিয়াইন নদীর স্বচ্ছ পানি, উঁচু পাহাড়ের গহীন অরণ্য সবকিছুই দেখতে পাবেন জাফলং গেলে।
বিগত কয়েক বছর ধরে জাফলং দেশের দ্বিতীয় বৃহত্তম পর্যটন নগরী হিসেবে খ্যাতি পেয়েছে। দেশ ও বিদেশের ভ্রমণপিপাসুদের কাছে জনপ্রিয় এক পর্যটন নগরী হয়ে উঠেছে সিলেট।
সিলেটের সীমান্তবর্তী এলাকায় জাফলং অবস্থিত। এর অপর পাশে ভারতের ডাউকি অঞ্চলের অবস্থান। সবচেয়ে অবাক করা বিষয় হলো, আপনি জাফলং গিয়েই ভারতের ডাউকি অঞ্চলের পাহাড়, নদীর সৌন্দর্য উপভোগ করতে পারবেন।
জাফলংয়ের বাংলাদেশ সীমান্তে দাঁড়ালেই আপনি দেখতে পাবেন ভারত সীমান্তে থাকা ডাউকির উঁচু উঁচু পাহাড়। এসব পাহাড় থেকে নেমে আসা ঝরনা পর্যটকদের অন্যতম আকর্ষণ।
এছাড়াও ভারতের ডাউকি বন্দরের ঝুলন্ত সেতুর সৌন্দর্যও মুগ্ধ করবে আপনাকে। একইসঙ্গে সীমান্তঘেঁষা ডাউকি নদীর স্বচ্ছ পানি দেখার লোভ সামলাতে পারেন না পর্যটকরা।
মৌসুমী বায়ুপ্রবাহের ফলে ভারত সীমান্তে প্রবল বৃষ্টিপাত হওয়ায় নদীর স্রোত বেড়ে যায়। তখন ডাউকি পূর্ণযৌবনা হয়ে ওঠে। ডাউকি নদীর পানির স্বচ্ছতাও জাফলংয়ের অন্যতম আকর্ষণ।
জাফলং থেকে দৃশ্যমান ভারতের ডাউকি শহরের দৃশ্য এক কথায় অসাধারণ। ডাউকি ভারতের মেঘালয় রাজ্যের পশ্চিম জৈন্তিয়া পাহাড় জেলায় অবস্থিত একটি শহর।
এই শহরটি এক বিশাল পাহাড়ের উপর অবস্থিত। খাড়া পাহাড়ের খাঁজে খাঁজে অসাধারণ সব বাড়ি তৈরি করে বসবাস করেন ডাউকিবাসীরা। দেখলেই চোখ জুড়িয়ে যায়।
রংবেরঙের বহুতলা ভবন গড়ে উঠেছে বিশাল পাহাড়ের গায়ে। বাংলাদেশের জাফলং থেকে খুবই সুন্দর দেখায় ডাউকি পাহাড়শ্রেণি। একইসঙ্গে রাতে ডাউকি শহরের দৃশ্য এক অন্যরকম অনুভুতি দেবে আপনাকে।
জাফলং ভ্রমণে গেলে আরও ঘুরে আসতে পারেন লালাখাল, বিছানাকান্দি, রাতারগুল সোয়াম্প ফরেস্ট, তামাবিল ও জৈন্তাপুর।
কীভাবে যাবেন?
জাফলং ভ্রমণকালে প্রথমে আপনাকে সিলেট শহরে যেতে হবে। দেশের সব স্থান থেকেই বাস, টেন বা প্লেনে করেও সিলেট শহরে যেতে পারবেন। সেখান থেকে জাফলং যেতে হবে।
এরপর সিলেট থেকে প্রায় সব ধরনের যানবাহনেই জাফলং যেতে পারবেন। লোকাল বাসে যেতে হলে শহরের শিবগঞ্জ যেতে হবে। জনপ্রতি ভাড়া পড়বে ৮০ টাকা। সিএনজি বা অটোরিকশায় ১২০০-২০০০ টাকায় জাফলং পৌঁছাতে পারবেন।
অন্যদিকে মাইক্রোবাস যাওয়া-আসার জন্য রিজার্ভ নিলে ভাড়া পড়বে প্রায় ৩০০০-৫০০০ টাকা। তবে সিলেট নগরীর যে কোনো অটোরিকশা বা সিএনজি স্ট্যান্ড থেকে সহজেই জাফলং যাতে পারবেন।
দলগতভাবে গেলে মাইক্রোবাস রিজার্ভ করে গেলে সুবিধাও পাবেন আবার খরচও কমে আসবে প্রত্যেকের। পাশাপাশি চলতি পথে আশেপাশের দর্শনীয় স্থানগুলোতেও ঢুঁ মেরে আসতে পারবেন। তবে মাইক্রোবাস রিজার্ভ করার ক্ষেত্রে অবশ্যই দরদাম করে নিতে হবে।
কোথায় থাকবেন?
জাফলংয়ে থাকার জন্য তেমন ভালো কোনো ব্যবস্থা নেয়। থাকতে হলে গেস্ট হাউজ, রেস্ট হাউজ, জেলা পরিষদের বাংলোতে আগে থেকেই বুকিং দিতে হয়।
এ কারণে পর্যটকরা সারাদিন জাফলং ঘুরে রাতে আবার সিলেটে ফিরে আসেন। সেখানে আপনি সাধ্যের মধ্যে যে কোনো হোটেলে রাত্রিযাপন করতে পারবেন।
জেএমএস/জিকেএস