৫০ টাকায় কায়াকিং
বর্তমানে কায়াকিং বেশ জনপ্রিয় হয়ে উঠেছে। রং-বেরঙের সরু নৌকায় চড়ে নদীতে রোমাঞ্চকর ভ্রমণের অভিজ্ঞতা অর্জন করতে অনেকেই কায়াকিং করছেন। অনেকেই হয়তো জানেন কাপ্তাই লেক বা মহামায়া লেকে কায়াকিংয়ের ব্যবস্থা আছে। তবে হুট করে তো আর সেখানে যাওয়া সম্ভব নয়।
এ ছাড়াও ঢাকার আশেপাশে নারায়ণগঞ্জের আড়াইহাজারেও এর ব্যবস্থা আছে। জানলে অবাক হবেন, ঢাকাতেও এখন করতে পারবেন কায়াকিং। তাও আবার একেবারেই অল্প খরচে। মাত্র ৫০ টাকায় কায়াকিং করতে পারবেন ঢাকাতেই।
কায়াকিং কী?
কায়াক শব্দটি এ দেশে অতটা প্রচলিত নয়। ফাইবার, কাঠ ও পাটের তন্তু দিয়ে তৈরি ১০ ফুট লম্বা সরু নৌকাকে কায়াক বলা হয়। চালাতে হয় বৈঠা দিয়ে। কানাডায় প্রথম শুরু হয় কায়াক চালনা। বিদেশে সমুদ্র, নদীতে কায়াক চালনার প্রতিযোগিতা হয়ে থাকে। তবে এ দেশে বিনোদনের জন্যই কায়াকিং চালু হয়েছে।
কায়াক তৈরি এবং ব্যবহার শুরুর ইতিহাসের দিকে তাকালে দেখা যাবে এর প্রচলন শুরু হয়, কানাডার আলাস্কাতে। সেখানকার জেলেরা মাছ ধরার কাজে এই নৌকা ব্যবহার করত। তখন এ নৌকাগুলোকে বলা হত আইকায়াক। এগুলো তৈরিতে হালকা কাঠের তক্তা এবং সী লায়ন অথবা সীল মাছের চামড়া ব্যবহার করা হত।
প্রত্নতত্ত্ববিদরা ৪০০০ বছর পূর্বে সি কায়াক ব্যবহারের প্রমাণ খুঁজে পেয়েছেন। কাঠের তক্তা ও চামড়ার দ্বারা তৈরি এসব কায়াক ১৯৫০ সালে যখন ফাইবারগ্লাস বোট চালু হয়নি; তার আগ পর্যন্ত বাজার নিয়ন্ত্রণ করত। রোটোমোল্ডেট প্লাস্টিক কায়াক ব্যবহার প্রথম শুরু হয় ১৯৮৪ সালে।
দেশে কায়াকিংয়ের ব্যবস্থা
কায়াকিং আসলে কী? সেটি বোঝানোর জন্য শুরুতে ফ্রি কায়াকিংয়ের ব্যবস্থা করেছিল কাপ্তাই কায়াক ক্লাব। ৪ বছর আগে তারা এ কার্যক্রম শুরু করে। হালকা কিন্তু ব্যাল্যান্সেড নৌকায় কায়াক ক্লাবের নিজস্ব লাইফজ্যাকেট পরে উঠলে, আপনার হাতে ধরিয়ে দেওয়া হবে বৈঠা।
আপনি বনে যাবেন মাঝি! নিজের ইচ্ছেমতো ঘুরতে পারবেন। কায়াক চালাতে বেগ পেতে হয় না একেবারেই। কেবল নৌকা ডানে ও বামে নেওয়ার কৌশল রপ্ত করলেই নির্ভেজাল আনন্দে ঘুরতে পারবেন। বর্তমানে কাপ্তাই, মহামায়া লেকসহ দেশের বিভিন্ন স্থানে কায়াকিংয়ের ব্যবস্থা আছে।
ঢাকায় কায়াকিংয়ের ব্যবস্থা
বর্তমানে ঢাকায় ‘ইয়াস কায়াকিং পয়েন্ট’ খুবই অল্প মূল্যে কায়াকিং করার সুযোগ দিচ্ছে। রাজধানীর ডেমরার কোনাপাড়া বাসস্ট্যান্ড থেকে এক কিলোমিটার দূরে গ্রিন মডেল টাউনে, ঢাকা-সিলেট হাইওয়ের পাশেই পেয়ে যাবেন এই কায়াকিং পয়েন্ট।
কায়াকিং করার জন্য এখানে ২-৩ জনের বসার উপযোগী কায়াক আছে। প্রতি ১৫ মিনিটের জন্য ৫০ টাকা, ৩০ মিনিট ১০০ টাকা, এক ঘণ্টা ১৫০ টাকা খরচ হবে কায়াকিং করতে। এ ছাড়াও ৫০ বছরের বেশি বয়স্করা সকাল ৬-৯টা তিন ঘণ্টা পুরো সম্পূর্ণ ফ্রি কায়াকিং করতে পারবেন সেখানে।
কায়াকিংয়ের পাশাপাশি ওয়াটার বাই-সাইকেলও আছে সেখানে। এজন্য জনপ্রতি গুনতে হবে ১৫ মিনিটে ১০০ টাকা, ৩০ মিনিটে ২০০ টাকা, এক ঘণ্টায় ৩০০ টাকা।
তাছাড়া চাইলেই পাশের কোন টং দোকানে বসে চা খেতে খেতে চারপাশের সৌন্দর্য উপভোগ করতে পারবেন। খাওয়া-দাওয়া করার জন্য কিছু রেস্টুরেন্টও আছে। সেগুলো দুপুরের পরে খোলা থাকে। সব মিলিয়ে অসাধারণ একটা মুহূর্ত কাটিয়ে আসতে পারেন সেখান থেকে। তবে বিকেলে গেলে প্রকৃতি বেশি উপভোগ করতে পারবেন।
কীভাবে যাবেন?
>> খিলগাঁও হাড়ভাঙ্গা মোড় থেকে নন্দীপাড়া ব্রিজ ৪০ টাকা ভাড়া পড়বে। এরপর নন্দীপাড়া থেকে মানিকদিয়া ক্লাব যেতেও লাগবে ৪০ টাকা। মানিকদিয়া থেকে ওয়াপদা রোড ইয়াস কায়াকিং পয়েন্ট ২০ টাকা রিকশা ভাড়া পড়বে। বৌদ্ধ মন্দির থেকে লোকাল সিএনজি চালিত অটো রিকশা ২৫ টাকায় মানিকদিয়া ক্লাব তারপর অটোতে ১০ টাকায় কায়াকিং পয়েন্ট। এ ছাড়াও মুগদা মান্ডা দিয়ে গ্রিন মডেল টাউন; তারপর হেঁটে কোনাপাড়া রোডে ইয়াস কায়াকিং পয়েন্ট।
>> স্টাফ কোয়ার্টার থেকে বাস অথবা লেগুনা ৫ টাকায় কোনাপাড়া, কোনাপাড়া থেকে ২০ টাকা রিকশা ভাড়া অথবা ১০ টাকায় অটোতে ইয়াস কায়াকিং পয়েন্ট।
>> গুলিস্তান থেকে আসিয়ান বাসে ২৫ টাকায় কোনাপাড়া বাসস্ট্যান্ডে; তারপর সেখান থেকে অটো বা রিকশায় ইয়াস কায়াকিং পয়েন্ট যেতে পারবেন।
>> ধানমন্ডি থেকে ঠিকানা অথবা মৌমিতা বাসে করে মাতুয়াইল মেডিকেল/মাদ্রাসা রোড/ সাইনবোর্ড যেকোনো বাসস্ট্যান্ডে নেমে রিকশা নিলে ৪০ টাকা ভাড়া পড়বে। এরপর কোনাপাড়া বাসস্ট্যান্ড তারপর অটোতে করে বা রিকশায় গ্রিন মডেল টাউন ইয়াস কায়াকিং পয়েন্টে যেতে পারবেন।
>> নারায়ণগঞ্জ চাষড়া থেকে সাইনবোর্ড নামার পর হাইওয়ে ক্রস করে রিকশায় ৪০ টাকায় কোনাপাড়া বাসস্ট্যান্ডে। তারপর কোনাপাড়া বাসস্ট্যান্ড থেকে অটোতে করে ১০ টাকায় ইয়াস কায়াকিং পয়েন্ট।
>> মিরপুর/ ফার্মগেট থেকে শিখর বাসে করে যাত্রাবাড়ি যেতে লাগবে ৩০ টাকা। এরপর যাত্রাবাড়ি থেকে কোনাপাড়া বাসস্ট্যান্ডে লেগুনাতে ভাড়া পড়বে ১০ টাকা। কোনাপাড়া বাসস্ট্যান্ড থেকে রিকশায় ২০ টাকা/অটোতে ১০ টাকায় ইয়াস কায়াকিং পয়েন্ট যেতে পারবেন।
>> উওরা থেকে আসমানী বাসে স্টাফ কোয়ার্টার যেতে লাগবে ৪০ টাকা। স্টাফ কোয়ার্টার থেকে কোনাপাড়া বাসস্ট্যান্ডে পৌঁছে যাবেন ৫ টাকায়। কোনাপাড়া বাসস্ট্যান্ড থেকে রিকশা/অটোতে ইয়াস কায়াকিং পয়েন্ট পৌঁছাতে বেশিক্ষণ লাগবে না।
জেএমএস/এমএস