বিস্ময়কর লিলিপুটদের রাজ্য
খুবই সুন্দর সাজানো-গোছানো একটি শহর। সেখানকার ঘর-বাড়ি বিশ্বের অন্যান্য দেশের শহরের তুলনায় খুবই ছোট আর আকর্ষণীয়ও বটে। অনেকটা ইগলুর মতো গোলাকার এই বাড়িগুলো বিশ্ববাসীর নজর কাড়ে।
তার চেয়েও অবাক করা বিষয় হলো, এই শহরে বসবাসরত লিলিপুটরা। অর্থাৎ এই শহরের সব বাসিন্দায় ২-৪.৫ ফুট উচ্চতার মধ্যে। অর্থাৎ তারা সবাই বামুন। অবাক করা বিষয় হলো, একই শহরে এতো বামন দেখতে দলে দলে ভিড় করেন পর্যটকরা।
বলছি, চিনের ‘কিংডম অব দ্যা লিটল পিপল’ অর্থাৎ ছোট ব্যক্তিদের রাজ্যের কথা। আসলেই তাই। বামনরা খুবই সুন্দর করে তাদের এই রাজ্যটি সাজিয়েছে। আর তাইতো দৃষ্টিনন্দন এই স্থানটি ও বামনদের দেখতে প্রতি বছর হাজারও পর্যটক সেখানে ভিড় জমান।
চীনের ইউনান প্রদেশে অবস্থিত এই ‘কিংডম অব লিটল পিপল’। এটি আসলে একটি থিম পার্ক। সেখানে গেলে পর্যটকরা দেখতে পারবেন বামনদেরকে। এই থিম পার্কে বামনরা বিভিন্ন অনুষ্ঠানে অংশগ্রহণ করে। যা দর্শকরা স্বয়ং উপস্থিত থেকেও দেখতে পারেন আর চীনের বিভিন্ন টেলিভিশনে সম্প্রচারিতও হয়।
এই থিম পার্কের ভেতরে তৈরি করা ছোট ছোট নান্দনিক ঘরগুলোতেই বসবাস করেন এসব বামনরা। যেহেতু সমাজে বামনদের গ্রহণযোগ্যতা কম, এমনকি মানুষ তাদের দেখে বিদ্রুপ করে থাকে; এ কারণেই চিনের বিভিন্ন শহর থেকে বামনরা এখানে আসেন অর্থ উপর্জন ও ভালো জীবন ধারণের আশায়।
তেমনই একজন হলেন ২৮ বছর বয়সী ই শাবাও। এখান থেকে ১১০০ মাইল দূরে তার জন্মভূমি। উহানের একটি অটো পার্টস কারখানায় একসময় কাজ করতেন। তবে মানুষের বিদ্রুপ আর গ্রহণযোগ্যতা না পাওয়ার অভিযোগ বুকে নিয়ে পাড়ি দেন এই ছোটদের রাজ্যে।
ই শাবাও বলেন, ‘আমি এখানে টাকার জন্য আসিনি। কারণ উহানের চেয়ে এখানে আমি আরও কম রোজগার করি। তবে আমি নিজে খুশি এখানে এসে। কারণ এখানে আমি স্বাধীন। আমাকে দেখে আর কেউ বিদ্রুপ করে না। আমরা সবাই এক, এটাই আমার ও আমাদের সাম্রাজ্য। যতদিন পার্ক থাকবে; ততদিনই আমি থাকবো এখানে।’
এই থিম পার্কে যুক্ত হওয়া বামন পারফর্মাররা তাদের কাজের উপর নির্ভর করে প্রতি মাসে ১২০-১৭৫ ডলার রোজগার করতে পারেন। পাশাপাশি স্বাধীনভাবে জীবনযাপন করার সুযোগও পান বামনরা। নিজেদের সম্মান খুঁজে পেতেই তারা এখানে আশ্রয় নেন। কারণ এখানে কেউ তাদের উচ্চতা নিয়ে বিদ্রুপ করে না।
বর্তমানে কিংডম অব লিটল পিপলের এই স্থানে বসবাস করেন প্রায় ১৫০ বামন। তবে এই পার্কে যদি কোনো বামন যেতে চান, তবে তার বয়স ১৯-৪৮ এবং উচ্চতা সর্বোচ্চ সাড়ে ৪ ফুট হতে হবে।
চিনের সেন্ট্রাল কুনমিং থেকে প্রায় এক ঘন্টা দূরে অবস্থিত এই পার্কটি প্রজাপতির জন্য উত্সর্গীকৃত। এর পাশে আছে পাহাড়। বামনশিল্পীরা সেখানে থাকেন, নগর জীবন থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ে প্রকৃতির কোলে।
চিনের ধনী রিয়েল এস্টেট বিনিয়োগকারী চেন মিংজিং এই পার্কের প্রতিষ্ঠাতা। ২০০৯ সালের সেপ্টেম্বরে এই পার্কটি উদ্বোধন করা হয়। এই স্থানটি ওয়ার্ল্ড বাটারফ্লাই ইকোলজিকাল পার্ক হিসেবে সংরক্ষিত। বামনদের থিম পার্কের সদস্য একসময় ১০০০ জনে উন্নীত হবে বলে আশাবাদী কর্তৃপক্ষ।
যদিও এই পার্ক নিয়ে অনেক সমালোচনা আছে। লিটল পিপল অব আমেরিকা ও হ্যান্ডিক্যাপ ইন্টারন্যাশনালসহ বেশ কয়েকটি সংস্থা এই পার্কটির বিরুদ্ধে সমালোচনা করেছে। সমালোচকরা দাবি করেন, এই পার্কটি একটি মানব চিড়িয়াখানার সদৃশ। সমাজ থেকে প্রতিবন্ধীদের আলাদা করে দেওয়া হয়েছে।
তবে প্রতিষ্ঠাতা চেন মিংজিংয়ের দাবি, থিম পার্কের অবদানে এই খুদে মানুষগুলো উপার্জন করতে পারছেন। তা না হলে অনেকেই বেকার হয়ে পড়েতেন। কারণ খুদে মানুষরা সবার অবজ্ঞার পাত্র হয়ে থাকেন। এ ছাড়াও এখানে তারা একসঙ্গে বাস করার ফলে, তাদের আত্মমর্যাদা বাড়ছে এবং তারা খুশি থাকছেন।
সূত্র: সিএনএন/প্রাইঅর্গ
জেএমএস/জেআইএম