হাতিরঝিলে দেখতে পাবেন হাতির পাল
শীত কি গ্রীষ্ম—সব সময়ই হাতিরঝিলে পর্যটকদের আনাগোনা লেগেই থাকে। শহরের কর্মব্যস্ত মানুষও একটু অবসর কাটাতে ছুটে আসেন হাতিরঝিলে। এবার সময় কাটানোর সেই হাতিরঝিলে গড়ে উঠেছে হাতির পালের ভাস্কর্য। হাতিরঝিলের এই হাতির পাল দেখে মানুষ অনুভব করছে হাতিরঝিলের আসল সৌন্দর্য। দৃষ্টিনন্দন হাতির পালের দেখে মেলে পুলিশ প্লাজার পেছনে এবং এফডিসির দিকে।
জানা যায়, হাতিরঝিল বর্তমানে রাজধানীর একটি ব্যস্ততম পর্যটন এলাকা। এটি মূল জনসাধারণের চলাচলের জন্য তৈরি করা হয়েছে। প্রকল্প এলাকাটি উদ্বোধন ও জনসাধারণের জন্য উন্মুক্ত করা হয় ২০১৩ সালের ২ জানুয়ারি। এটি চালু হওয়ার ফলে তেজগাঁও, গুলশান, বাড্ডা, রামপুরা, মৌচাক, ফার্মগেট, কারওয়ান বাজার ও মগবাজারের বাসিন্দাসহ এ পথে চলাচলকারীরা বিশেষ সুবিধা পান।
সূত্র জানায়, হাতিরঝিল প্রকল্পটি বাস্তবায়ন ও তদারকি করছে বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর ‘স্পেশ্যাল ওয়ার্কস অরগানাইজেশন (এসডব্লিউও)’। এ প্রকল্পের অন্যতম মূল লক্ষ্য হচ্ছে বৃষ্টির পানি সংরক্ষণ, জলাবদ্ধতা ও বন্যা প্রতিরোধ, ময়লা পানি নিষ্কাশন ব্যবস্থার উন্নয়ন, রাজধানীর যানজট নিরসন এবং সৌন্দর্য বৃদ্ধি করা।
জনশ্রুতি আছে, ভাওয়ালের রাজার এস্টেটে হাতিরঝিলসহ তেজগাঁও এলাকায় অনেক ভূ-সম্পত্তি ছিল। এস্টেটের হাতির পাল এখানকার ঝিলে গোসল করতে বা পানি খেতে বিচরণ করত। ফলে কালের পরিক্রমায় এ এলাকার নাম হয় হাতিরঝিল। তবে এ হাতিরঝিল এলাকা একসময় নোংরা-আবর্জনায় পরিপূর্ণ ছিল। পরে সরকারের উদ্যোগে ঝিলটি হয়েছে দৃষ্টিনন্দন এবং জনসাধারণের জন্য উপকারী।
এতদিন হাতিরঝিলে হাতির কোনো আদল বা স্মৃতিচিহ্ন দেখা যায়নি। গাছপালা, ফুল, স্বচ্ছ জল, নৌযান, আলোর ফোয়ারা ছিল দর্শনার্থীদের আনন্দের বিষয়। এবার সবচেয়ে আনন্দের বিষয় হচ্ছে, সম্প্রতি হাতিরঝিলের গুলশান পুলিশ প্লাজার পেছনে এবং এফডিসির দিকে হাতির পালের ভাস্কর্য দেখা যাচ্ছে। হাতির পালের ভাস্কর্যের কাজ শেষ হওয়ার পর প্রতিদিন মানুষ তা দেখতে ছুটে আসে। তারা আত্মীয়-পরিজন নিয়ে হাতির সঙ্গে ছবি তুলছেন।
এতে হাতিরঝিলের প্রকৃত সৌন্দর্য উপলব্ধি করা যাচ্ছে বলে মনে করছেন অনেকেই। বনশ্রী থেকে ঘুরতে আসা মমিন উদ্দিন বলেন, ‘হাতিরঝিলের সৌন্দর্য এমনিতেই মন কেড়ে নেয়। যাতায়াতে সময় বাঁচানোর পাশাপাশি রাজধানীর মানুষ অবসরে স্বস্তির নিশ্বাস ফেলতে পারে। এবার সেই সৌন্দর্যে যুক্ত হয়েছে হাতির পাল। এবার যেন পরিপূর্ণতা পেল।’
মহানগর প্রকল্পের বাসিন্দা বাদল খান বলেন, ‘কিছুদিন হয় হাতির পাল উন্মুক্ত করা হয়েছে। পুলিশ প্লাজা এবং এফডিসির দিকে এ হাতির পাল দেখতে পাওয়া যায়। এতে হাতিরঝিলের সৌন্দর্য বেড়েছে। আসা-যাওয়ার পথে অনেকেই ছবি তুলে নিচ্ছেন। কেউ কেউ ঘুরে ঘুরে দেখছেন। আমিও হাতির এ ভাস্কর্য দেখে আনন্দ পেয়েছি।’
উল্লেখ্য, হাতিরঝিল প্রকল্পটি যুক্তরাষ্ট্রের এনভায়রনমেন্টাল ডিজাইন রিসার্চ অ্যাসোসিয়েশনের (এডরা) ‘পরিসর পরিকল্পনা’ ক্যাটাগরিতে ‘গ্রেট প্লেস অ্যাওয়ার্ড ২০২০’ লাভ করেছে। যা নগর পরিবেশ আর গণপরিসর সৃষ্টিশীলতার ক্ষেত্রে একটি আন্তর্জাতিক সম্মাননা।
এসইউ/জেআইএম