বাংলার তাজমহল তৈরি করা হয় যেভাবে
ভারতের আগ্রার তাজমহল সম্পর্কে সবারই কমবেশি জানা আছে। তবে জানেন কি বাংলাদেশেও আছে আগ্রার মতোই আরেকটি তাজমহল। বাংলার তাজমহল নামে পরিচিত এটি। ঢাকা থেকে মাত্র ২৫ কিলোমিটার দূরত্বে সোনারগাঁওয়ে অবস্থিত এটি। ভারতের আগ্রায় অবস্থিত তাজমহলের অবিকল প্রতিরূপ এটি।
প্রায় ১৮ বিঘা জিমির উপর নির্মাণ করা হয়েছে এই তাজমহলটি। এর আশেপাশে ৫২ বিঘা আছে পর্যটনের জন্য। অত্যাধুনিক প্রযুক্তি ব্যবহার করে তৈরি করা হয়েছে এই তাজমহলটি। বিদেশি বিভিন্ন উপকরণসহ ১৭২টি ডায়মন্ড ব্যবহার করা হয়েছে বাংলার তাজমহলে।
তাজমহলে ঢুকতেই ১০টি ঝরনা আপনাকে অভ্যর্থনা জানাবে। একেবারেই আগ্রার তাজমহলের অনুরূপভাবেই তৈরি করা হয়েছে এটি। আশেপাশে যেদিকেই তাকাবেন; সেদিকেই দেখবেন ফুলের বাগান। এই বাগানে বসে নিরিবিলি সময় কাটানোর পাশাপাশি আপনি মনোমুগ্ধ হয়ে উপভোগ করতে পারবেন তাজমহলের সৌন্দর্য।
বাংলার তাজমহলের ভেতরে দামিসব পাথর দিয়ে সাজানো। বিভিন্ন স্থানে চকচকে টাইলস বসানো আছে। এই তাজমহলেও আগ্রার মতোই চার কোণে চারটি বড় বড় মিনার আছে। মহলের ভেতরে আছে রাজমনি ফিল্ম সিটি স্টুডিও। সেখানে নাটক, সিনেমার শুটিং করা হয়।
আরও আছে ২৫০ আসনবিশিষ্ট সিনেমা হল ও সেমিনার কক্ষ। আর তাজমহলেরও বাইরে আছে রাজমনি ফিল্ম সিটি রেস্তোরা, খাবারের ছোট-বড় দোকান, আবাসিক হোটেল, হস্তশিল্পের দোকান। জামদানি শাড়িও মিলবে সেখানে।
চলচ্চিত্র নির্মাতা আহসানুল্লাহ মনি ২০০৮ সালে বাংলার তাজমহল নির্মাণ করেন। ডিসেম্বরে সেটি উদ্বোধন করা হয়। এই তাজমহলের প্রকল্পটির জন্য ব্যয় হয়েছে প্রায় ৫০ লাখ টাকা।
কেন তিনি এই তাজমহলটি নির্মাণ করেছিলেন সে বিষয়ে জানান, ‘এ দেশের দরিদ্র মানুষ যারা ইচ্ছে থাকা স্বত্ত্বেও সামর্থ্য না থাকায় ভারতে গিয়ে তাজমহল দেখতে পারেন না; তাদের স্বপ্ন পূরণ করতেই বাংলার তাজমহল নির্মাণ করা হয়েছে।’
১৯৮০ সালে আগ্রার তাজমহল দেখে বিস্মিত হয়ে তখনই এর অবিকল প্রতিরূপ নির্মাণের স্বপ্ন দেখেছিলেন মনি। এরপর ২০০৩ সালে এটির নির্মাণকাজ শুরু করেন। এরপর নির্মাণকাজ সুষ্ঠুভাবে পরিচালনা করতে একে একে ৬ বার আগ্রার তাজমহল পরিদর্শন করেছেন তিনি।
বাংলার তাজমহল তৈরি করতে সময় লেগেছে ২০ বছর। ২২ হাজার শ্রমিকের নিরন্তর প্রচেষ্টায় অবশেষে সমাপ্ত হয় এটি। প্রথম দিকে তাজমহলের এই অবিকল প্রতিরূপ সৃষ্টির ঘটনায় ভারত ক্ষুব্ধ হয়। বাংলাদেশে অবস্থিত ভারতীয় দূতাবাস থেকে জানানো হয়, আহসানুল্লাহ মনিকে প্রকৃত তাজমহলের মেধাস্বত্ব লঙ্ঘন করার দায়ে অভিযুক্ত করা হবে।
আহসানুল্লাহ মনি ও তার স্ত্রী রাজিয়া দু’জনেরই কবর দেওয়া হয়ে এই তাজমহলেই। সবসময়ই দেশি-বিদেশি পর্যটকদের আনাগোনা লেগেই থাকে বাংলার তাজমহলে। বর্তমানে সেখানে সুইমিংপুল ও আইফেল টাওয়ারের প্রতিরূপ তৈরির কাজ চলছে। এই তাজমহলের অবস্থান চেনার জন্য মহাসড়কের বিভিন্ন পয়েন্টে স্থাপন করা হয়েছে নির্দেশনার সাইনবোর্ড।
যেভাবে যাবেন
ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়ক দিয়ে কুমিল্লাগামী যেকোনো গাড়িতে চড়ে মদনপুর বাসস্ট্যান্ডে যেতে হবে। সেখান থেকেসিএনজি বা স্কুটারে জনপ্রতি ২৫-৩০ টাকায় যাওয়া যায় তাজমহলে। প্রতিদিন সকাল ১০-৬টা পর্যন্ত খেলা থাকে বাংলার তাজমহল। সেখানে প্রবেশ ফি ১৫০ টাকা।
জেএমএস/এএসএম