সূর্যাস্ত-সূর্যোদয় না দেখা কুয়াকাটা ভ্রমণ
নৈসর্গিক লীলাভূমি, প্রত্নতাত্ত্বিক ও ঐতিহাসিক স্থাপনার প্রতি আমার গভীর টান শৈশব-কৈশোর থেকেই। তাই স্কুলজীবন থেকেই ছুটে যেতাম প্রাচীন মসজিদ, মন্দির কিংবা অন্য কোনো প্রাচীন স্থাপনার খবর পেলে। বেড়ে ওঠার সাথে সাথে বুঝতে পারলাম পুরোনো স্থাপনা দেখার সুগভীর আগ্রহই নয়, আসলে ঘুরে বেড়ানোর একটা তাড়না আমার ভেতরে কাজ করছে।
কয়েক মাস ধরে ভাবছিলাম দূরে কোথাও ঘুরতে যেতে হবে। আরও ভাবছিলাম কবে ফ্রি হবো, একটু ফ্রি হলে ভাবতাম আরও একটু ফ্রি হয়ে নেই। এমন করে তো অনেক বছর পার করে দিলাম। একদম ফ্রি হবো এবং ব্যস্ততা কমবে, এমন সময় হয়তো জীবনে আর আসবে না বলে এমনটা উপলব্ধি করি। এমন উপলব্ধি থেকে সিদ্ধান্ত নেই, এখন থেকে শত ব্যস্ততা থাকলেও মাঝেমধ্যে কোথাও না কোথাও ঘুরতে যাবো।
হুট করে গত (২০১৯ সালের আগস্ট মাস) ঈদুল আজহার কয়েক দিন আগে সিদ্ধান্ত নেই ঈদের ছুটিতে কুয়াকাটা ঘুরতে যাবো। অফিসে ঈদের ছুটি হলো ৮ আগস্ট। ওইদিন রাতেই ঢাকা থেকে বাড়ির উদ্দেশে যাত্রা করলাম। ৯ আগস্ট বাড়িতে পৌঁছার কথা থাকলেও ঈদযাত্রায় রাস্তার চিরাচরিত দুর্ভোগ ও বিড়ম্বনায় পড়ে বাড়িতে পৌঁছতে দুপুর ২টারও বেশি বাজলো। চেয়েছিলাম সকাল সকাল বাড়িতে পৌঁছে সবার সাথে দেখা করে কুয়াকাটা রওনা হবো। কিন্তু তা আর হলো না। দীর্ঘ ১৮ ঘণ্টার যাত্রার ধকলে শরীরজুড়ে ক্লান্তি নেমে এলো।
পরে সিদ্ধান্ত বদল করলাম। পরদিন অর্থাৎ ১০ আগস্ট কুয়াকাটা যাবো। সকাল ৮টায় আমাদের বোথলার হাট (পিরোজপুর জেলার ভান্ডারিয়া থানার মধ্যে পড়েছে) থেকে রওনা হলাম। বোথলা থেকে রূপাতলী এসে পৌঁছলাম ১১টায়। সেখান থেকে কুয়াকাটার বাসের টিকিট সংগ্রহ করলাম। টিকিটের মূল্য ২৪০ টাকা। এখানে একটু বলে রাখি, কেউ যদি কুয়াকাটা স্থলপথে ভ্রমণ করতে চান তাহলে দেশের যেকোনো স্থান থেকে বরিশালের রূপাতলী বাসস্ট্যান্ডে আসতে হবে।
বরিশাল থেকে কুয়াকাটা পৌঁছতে বেলা প্রায় ১টা বেজে গেল। বাস থেকে নেমেই শুনতে পেলাম সমুদ্রের গর্জন। আহা! কী যে ছন্দময় সে গর্জন! এ গর্জন শুনে যেন আমার শত জনমের ক্লান্তি দূর হয়ে গেল। প্রথমে দুপুরের খাবার খেয়ে নিলাম। কুয়াকাটা সমুদ্রসৈকতের কাছেই বেশ কিছু ভালো মানের খাবারের হোটেল রয়েছে। এখানকার হোটেলগুলোয় বিভিন্ন মানের খাবারের ব্যবস্থা আছে।
আমি হোটেলে ঢুকে পছন্দের খাবার খুঁজতে লাগলাম। দেখলাম বাহারি সামুদ্রিক মাছ রান্না হয়েছে। সামুদ্রিক মাছের প্রতি আমার ভীষণ লোভ আছে। তাই সামুদ্রিক মাছ বেছে নিলাম। বড় সাইজের সামুদ্রিক ট্যাংরা। আমার প্লেটের এ মাথা থেকে ও মাথাজুড়ে। খাবার খেয়ে সৈকতের একটু উপরের দিকে দাঁড়ালাম। দাঁড়াতেই বাইক এবং ভ্যানগাড়ির চালকরা এসে আমাকে ঘিরে ধরলো। আমি রাখাইন পল্লি ঘুরতে যাবো। ভ্যান চালকদের চেয়ে এখানে বাইক চালকদের দাপট বেশি। বাইক চালকদের প্রতাপে ভ্যান চালকরা কিছুটা অসহায়ও বলা চলে।
এক বাইক চালক আমাকে তার বাইকে ওঠানোর জন্য রীতিমতো টানাটানি শুরু করলেন। ‘আমাকে যা খুশি ভাড়া দিয়েন। চলেন ভাই আমার সঙ্গে চলেন। আমি এক টানে আপনাকে নিয়ে যাবো আর নিয়ে আসবো।’ বলে আমাকে তার বাইকে এক প্রকার জোর করে ওঠানোর জন্য চেষ্টা-তদবির করলেন।
এদিকে আমি ভ্যান চালকদের সাথে কথা বলতে চেষ্টা করলাম। কিন্তু বাইকের চালক যেন আমাকে কথা বলার সুযোগই দিচ্ছে না। এবার আমি বিনয়ের সাথে বাইক চালকে বললাম, ‘ভাই, আমি বাইকে যেতে ইচ্ছুক নই। আমি বাইকে চড়তে একদম পছন্দ করি না। আমি ভ্যানে চড়ে রাখাইন পল্লি যাবো।’
এবার বাইক চালক বুঝতে পারলেন তিনি আমাকে বাইকের যাত্রী করতে পারবেন না কোনোভাবেই। তারপরও নাছোড়বান্দা। আবারও বললেন, ‘আমি সুন্দরভাবে বাইক চালাবো। আপনার কোনো সমস্যা হবে না। ভ্যানের চেয়ে দ্রুত এবং আরামে রাখাইন পল্লি যেতে পারবেন। কোনো সমস্যা হলে আমাকে বলবেন।’ এমন সব যুক্তি আমার সামনে উপস্থাপন করলেন। এদিকে প্রখর রোদে আমি ঘেমে একাকার হয়ে গেছি।
এবার বাইক চালককে অনেকটা বিরক্ত হয়ে বললাম, ‘ভাই, বাইকে চড়ার আমার এক তিক্ত অভিজ্ঞতা আছে। পারতপক্ষে আমি বাইকে চড়ি না। এখানে যেহেতু ভ্যানগাড়ি পেয়েছি, তাই আমি আর বাইকে যাবো না।’ আমার এ কথা শুনে বাইক চালক কিছুটা মন খারাপ করে চলে গেলেন।
এরপর দুই-তিনজন ভ্যান চালক আমার দিকে এগিয়ে এলেন। তবে এর মধ্যে যিনি প্রথম এগিয়ে এলেন তাকে আমি ডাকলাম।
তিনি আমাকে বললেন, ‘আমি আপনাকে রাখাইন পল্লি নিয়ে যাবো আর ঘুরিয়ে নিয়ে আসবো, সেখানে আপনি যতো সময় থাকেন তাতে কোনো সমস্যা নেই। এতে আমাকে তিনশ টাকা দেবেন।’ আমি বললাম, ‘আপনাকে আড়াইশ টাকা দেবো।’ ভ্যান চালক কিছুক্ষণ ভেবে তাতেই রাজি হয়ে গেলেন।
আমি ভ্যানে উঠলাম। ইলেকট্রিক মেশিন চালিত ভ্যান। আমি ভ্যানে উঠতেই সাই করে দিলো এক টান। কুয়াকাটার চৌরাস্তার ঢাল থেকে ভ্যান গাড়িটি যেন পানির স্রোতের বেগে ছুটে চললো। আমি ভ্যান চালকের পিঠে হাত রেখে বললাম, ‘ভাই আস্তে আস্তে চালান। এত জোরে চালানো ভালো নয়। তাছাড়া আপনি এতো জোরে চালাচ্ছেন যে, আমি রাস্তার দুই পাশের কিছুই দেখতে পাচ্ছি না। আমি এ এলাকায় নতুন এসেছি। সব কিছু মন ভরে দেখতে চাই।’ এরপর ভ্যান চালক আস্তে আস্তে চালাতে শুরু করে। আমি চারপাশের প্রাকৃতিক সৌন্দর্য দেখতে লাগলাম। সেই সাথে ভ্যান চালকের নানামুখী গল্পে মজে গেলাম।
ভ্যান চালকের নাম ফজলুল হক। কথা বলে জানা গেল, তিনি আগে কৃষি কাজ করতেন। ভীষণ অভাব অনটনে তার দিন কাটতো। গত তিন বছর ধরে তিনি কুয়াকাটার সী বিচে ভ্যান চালাচ্ছেন। তার ছেলেকে মোটরসাইকেল কিনে দিয়েছেন। তিনিও সী বিচে পর্যটকদের ভ্রমণ করাতে মোটরসাইকেল চালান। এখন তাদের অভাবের দিন নেই। জানা গেল, তাদের মত অনেকেই ভ্যান-মোটরসাইকেল চালিয়ে স্বচ্ছল জীবনযাপন করছেন।
রাখাইন পল্লি পৌঁছাতে পৌঁছাতে আড়াইটা থেকে তিনটা বেজে গেল। মিঠাপানির কূপ ও মিশ্রিপাড়া বৌদ্ধ মন্দির পরিদর্শন করি। বৌদ্ধ মন্দির পরিদর্শনের সময় সানসে বাবুর সাথে আমার কথা হয়। বৌদ্ধ মন্দির ও মিঠা পানির কূপ কাছাকাছি। রাখাইন পল্লি প্রবেশের পূর্বে গেটের কিছু আগেই মিশ্রিপাড়া বৌদ্ধ মন্দির ও মিঠাপানির কূপ। মিশ্রিপাড়া পটুয়াখালীর মহীপুর থানায় অবস্থিত। আমি মিশ্রিপাড়া বৌদ্ধ মন্দির ও মিঠাপানির কূপের বিভিন্ন তথ্য জানতে চাইলাম। কিন্তু মন্দিরের তত্ত্বাবধায়ক আমাকে তেমন কোনো তথ্য দিতে পারলেন না। আমি সুসেনের কাছে জানতে চাইলাম, বৌদ্ধ মন্দির ও মিঠাপানির কূপের ইতিহাস নিয়ে কোনো বইপত্র আছে কি-না। সুসেন জানালেন এ নিয়ে একটি বই আছে। কিন্তু বইটি এখন নেই। ডিসেম্বর-জানুয়ারির দিকে বইটি পাওয়া যায়। মিশ্রিপাড়া বৌদ্ধ মন্দির ও মিঠাপানির কূপ পরিদর্শন শেষে রাখাইন পল্লি প্রবেশ করলাম। রাখাইন পল্লি ঘুরতে ঘুরতে বিকেল প্রায় পাঁচটার বেশি বেজে গেল। মিঠাপানির কূপ ও রাখাইন পল্লি ভ্রমণের সঙ্গী ছিলেন ভ্যান চালক ফজলুল হক। ফজলুল হক অভিজ্ঞ ভ্রমণ গাইড হিসেবে দায়িত্ব পালন করেছেন।
রাখাইন পল্লি থেকে বের হয়ে পল্লির গেটের চায়ের দোকান থেকে চা খেয়ে আমরা আবার কুয়াকাটার উদ্দেশে রওনা দিলাম। ভ্যান চালক ফজলুল হকের সাথে যথারীতি গল্প শুরু করলাম। আমাদের ভ্যান কুয়াকাটার দিকে ছুটে চলছে। আমি ফজলুল হকের কাছে জানতে চাইলাম, আমরা সী বিচে গিয়ে কি সূর্যাস্ত দেখতে পাবো? ফজলুল হক আকাশের দিকে তাকিয়ে জানালেন, আমাদের হাতে যে সময় আছে তাতে আমরা সূর্যাস্ত দেখতে পাওয়ার কথা। কিন্তু আকাশে মেঘ দেখা যাচ্ছে। আকাশ পরিষ্কার না থাকলে সূর্যাস্ত দেখা যাবে না। সূর্যাস্ত দেখার জন্য ফজলুল হক জোরে ভ্যান চালানো শুরু করলেন। কিন্তু আমরা সী বিচের কিছু আগে পৌঁছতে বুঝতে পারলাম সূর্যাস্ত বোধহয় আর দেখা সম্ভব হচ্ছে না। আমি বিষণ্ন মনে জানতে চাইলাম। ভ্যান চালক ফজলুকে ভাড়া মিটিয়ে দেওয়ার সময় আবারও বললো, ‘আজকে কি বাড়ি চলে যাবেন?’ আমি বললাম, ‘আমি আসলে থাকার জন্য আসিনি। থাকার কোনো প্রস্তুতিও সে কারণে আমার নেই। তাছাড়া থাকতে গেলে যে পরিমাণ টাকার প্রয়োজন; সে টাকাও আমার কাছে নেই। আমার এখানের হোটেল এবং এর ভাড়া সম্পর্কেও ধারণা নেই।’
আমার কথা শুনে ফজলুল হক বললেন, ‘একটা কথা বলতাম, যদি অনুমতি দিতেন।’ ফজলুল হকের এমন বিনয় আমাকে মুগ্ধ করেছে। আমি গায়ে হাত বুলিয়ে বললাম, ‘আচ্ছা বলেন।’ ফজলুল হক বললেন, ‘এতক্ষণ আপনার সাথে থেকে আমার ভালো লেগেছে। আপনি দিলখোলা মানুষ। তাই বলতে সাহস পাচ্ছি। আপনি যদি থাকতে চান, তাহলে আমি আমার পরিচিত একটা রিসোর্টে নিয়ে যেতে পারি। আমি বললে ওরা হয়তো কিছু টাকা কম রাখবে। তাছাড়া আপনি সাংবাদিক মানুষ। এ পরিচয় দিলে আরও কম রাখবে বলে আমার ধারণা।’
আমি ফজলুল হককে বললাম, ‘এখন তো সন্ধ্যা গড়িয়ে রাত নেমে এলো। রিসোর্টে গিয়ে যদি ওদের সাথে দরদামে বনিবনা না হয়, তাহলে আমার বাড়ি ফিরতে তো সমস্যা হয়ে যাবে। আর বেশি দেরি হয়ে গেলে তো বাড়ি যাওয়ার গাড়িও পাব না। তখন তো মহা সমস্যায় পড়ে যাবো।’ ফজলুল হক হেসে বললেন, ‘ওরকমের সমস্যা হলে আপনি আমার বাড়িতে থাকবেন। তাছাড়া আপনাকে যে রিসোর্ট দেখাতে নিয়ে যাবো; সেখানে যেতে আসতে সময় খুব একটা লাগবে না। রিসোর্টে ভাড়ার বনিবনা না হলে অল্প সময়ের মধ্যে চৌরাস্তা বাসস্ট্যান্ডে এসে আপনি বাড়ি যাওয়ার জন্য গাড়ি পাবেন। কোনো টেনশন নিয়েন না।’
আমি ফজলুল হকের উপর ভরসা রেখে বললাম, ‘চলেন।’ ফজলুল হক আমাকে নিয়ে রিসোর্টের দিকে রওনা হলেন। আমি যেতে যেতে বললাম, ‘এ এলাকার হোটেলগুলো নিরাপদ তো? আমার কিন্তু ভাই এ এলাকা সম্পর্কে কোন আইডিয়া নেই।’ ফজলুল হক দৃঢ়কণ্ঠে বললেন, ‘সমস্যা হবে এমন জায়গায় আমি ফজলু আপনাকে নিয়ে যাবো? এতক্ষণ আমাকে আপনার সাথে রেখে আমার সম্পর্কে এই ধারণা হলো?’ আমি ফজলুল হকের পিঠে হাত বুলিয়ে বললাম, ‘আরে না ফজলু ভাই। আপনি ওমন করে বলছেন কেন? এ এলাকা আমার কাছে একদম নতুন তো, তাই বললাম।’ ফজলুল হক আমাকে সব রকমের অভয় দিয়ে বললেন, ‘কোনো সমস্যা হলে আমাকে ফোন দেবেন। আমার ফোন নম্বর রাখেন। কারো বাপের ব্যাটার ক্ষমতা নেই যে ফজলুর মেহমানের কোনো ক্ষতি করবে!’
কথা বলতে বলতে আমাদের ভ্যান একটি রিসোর্টের সামনে এসে থামলো। কুয়াকাটা চৌরাস্তা থেকে একটু ভেতরে দক্ষিণ দিকে রিসোর্টের অবস্থান। ভ্যানে আসতে দশ মিনিটের মত লেগেছে। তবে পথে যেতে যেতে আমার মনে হচ্ছিল, আমার গন্তব্য সুখকর না-ও হতে পারে। কারণ সী বিচ থেকে বেশ ভেতরে মনে হচ্ছিল। যেতে যেতে কয়েকবার ফজলুল হককে প্রশ্নও করলাম, ‘ভাই আর কত ভেতরে নিয়ে যাবেন?’ তবে রিসোর্টের সামনে ভ্যান থামতেই গেট দেখে আমার মন ভরে গেল। ভেতরে ঢুকে রিসোর্টের পরিবেশ দেখে আমি যারপরনাই মুগ্ধ।
রিসোর্টের নাম ইলিশ পার্ক অ্যান্ড রিসোর্ট (বর্তমান নাম ‘ইলিশ পার্ক ইকো রিসোর্ট’)। রিসোর্টের নামটিও আমার পছন্দ হয়েছে। কারণ ইলিশের প্রতি রয়েছে আমার আজন্ম দুর্বলতা। পার্কের মধ্যেও রয়েছে ইলিশের আবহ। এক পাশে ইলিশ আকৃতিতে নির্মিত হয়েছে একটি কটেজ। তবে সেটি ডবল। আমি সিঙ্গেল কটেজ নেবো বলে সেটি নিয়ে দরদাম করিনি। আমি ‘সাম্পান’ কটেজে উঠলাম। আমি একজন লেখক ও সাংবাদিক এই পরিচয় জানতে পেরে কটেজের ম্যানেজার ও তত্ত্বাবধায়ক আমার জন্য বেশ আলাদা খাতির যত্ন করেছেন। শীতাতপ নিয়ন্ত্রিত ছোট্ট কটেজটি আমার বেশ ভালো লেগেছে।
ফ্রেশ হয়ে কিছুক্ষণ বিশ্রাম নিয়ে দেখি রাতের খাবারের সময় হয়েছে। আমি রাতের খাবার খেতে সী বিচের কাছে যাই। কারণ ওখানকার হোটেলগুলোয় বিভিন্ন ধরনের সামুদ্রিক মাছ পাওয়া যায়। সামুদ্রিক মাছ আমার ভীষণ পছন্দের। রাতের খাবার খেয়ে আমি সী বিচের কাছে গিয়ে দাঁড়াই। রাতের আঁধারমাখা সমুদ্রের গর্জন আমাকে বিমোহিত করে। দিনের চেয়ে রাতের আঁধারের সমুদ্রের গর্জন আমার কাছে আরও মনোমুগ্ধকর মনে হলো।
সী বিচ থেকে কটেজে ফিরতে আমার রাত সাড়ে দশটা বেজে গেল। কটেজে ঢুকেই ঘুমের প্রস্তুতি নিলাম। কারণ তাড়াতাড়ি ঘুম থেকে না জাগতে পারলে সকালের সূর্যোদয় দেখতে পাবো না। তাই সকাল সকাল ঘুমিয়ে পড়লাম। ভোররাতে আমার ঘুম ভেঙে গেল। তখনই আমি বিছানা ছেড়ে ফ্রেশ হয়ে সী বিচের দিকে রওনা হলাম।
ধীরে ধীরে রাতের আঁধার সরে চারিদিক পরিষ্কার হচ্ছে। সী বিচে গিয়ে দেখি আকাশে ঘনকালো মেঘ। জেলেরা সমুদ্রে মাছ ধরতে যাওয়ার প্রস্তুতি নিচ্ছেন। একজন জেলের সাথে কথা বলে জানতে পারলাম, আকাশে এখন যে পরিমাণ মেঘ দেখা যাচ্ছে তাতে সূর্যোদয় না-ও দেখা যেতে পারে। আমি সূর্যোদয়ের পূর্ব পর্যন্ত অপেক্ষা করলাম। সূর্যোদয় দেখার জন্য আরও অনেক পর্যটক সী বিচে দাঁড়িয়ে আছেন। এদিকে সূর্যোদয়ের সময় অতিক্রম করেছে কিন্তু সূর্যের দেখা মিলছে না। সূর্যোদয় না দেখতে পারার বেদনাক্রান্ত মন নিয়ে সী বিচ সংলগ্ন হোটেলে সকালের নাস্তা করলাম। এরপর কিছুক্ষণ বিশ্রাম নিয়ে সিদ্ধান্ত নিলাম এবার সী বিচে গিয়ে সাগরের লোনাজলের সাথে মিতালি করে আসি।
সী বিচ থেকে সকাল নয়টার দিকে এলাম। এসে গোসল করে বাড়ি ফেরার প্রস্তুতি নিলাম। এই লেখার শেষে যাদের কথা স্মরণ না করলে চরম অকৃতজ্ঞা বোধে ভুগবো, তারা হচ্ছেন- আমার ভ্রমণসঙ্গী রিসোর্টের সন্ধানদাতা ফজলুল হক, রিসোর্টের ডেপুটি ম্যানেজিং ডিরেক্টর ওয়াদুদ সজীব। সজীব ভাইয়ের সাথে প্রাণবন্ত আড্ডা ও তার আতিথেয়তা আমাকে মুগ্ধ করেছে। সবচেয়ে বেশি ভালো লেগেছে এ কারণে যে, তিনি পুরান ঢাকার মানুষ হয়েও কুয়াকাটার মত মফস্বলে বসবাস করছেন। কথা বলে জানতে পারলাম, তিনি রাজধানী ছেড়েছেন। কুয়াকাটা এসে ব্যবসা করছেন। প্রাকৃতিক মায়াময় নিসর্গের টানেই তিনি কুয়াকাটায় স্থায়ী বসবাসের সিদ্ধান্ত নিয়েছেন। এবার ধন্যবাদ জানাচ্ছি ইলিশ পার্ক অ্যান্ড রিসোর্টের কর্মচারীদের। রিসোর্টের কেয়ারটেকার আল-আমিন ও আবদুল্লাহর যত্ন-আত্তি ভোলার মত নয়।
রিসোর্ট ত্যাগ করার আগে শেষবারের মত ওয়াদুদ সজীব ভাইয়ের সাথে আড্ডা দিয়ে এবং সেলফি তুলে ১১টার দিকে কুয়াকাটা থেকে বিদায় নিলাম। করোনাকালে ভ্রমণ নিষিদ্ধ, তাই গল্পটি আপনাদের সঙ্গে শেয়ার করলাম। পৃথিবী স্বাভাবিক হলে হয়তো আবার কোথাও চলে যাবো ঘুরতে।
এসইউ/এএসএম