৭০ হাজার মানুষের কঙ্কাল দিয়ে সাজানো এক গির্জা
বিশ্বে কত অদ্ভূত ও বিস্ময়কর দর্শনীয় স্থান আছে; তার কোনো হিসাব নেই। এর কোনোটি প্রাকৃতিক বিস্ময় আবার কোনোটি মানুষের তৈরি। তেমনিই এক বিস্ময়কর ও রহস্যময় স্থান হলো সেডলেক ওসারি। এটি কঙ্কালের গির্জা নামেও পরিচিত।
সেডলেক ওসারি একটি ছোট রোমান ক্যাথোলিক গির্জা। যা চেক প্রজাতন্ত্রেরে সেডলেকে অবস্থিত। এই গির্জাটি দেখতে প্রতিবছর লাখ লাখ দর্শনার্থী ভিড় জমায় সেখানে।
গির্জার ভেতরে থরে থরে সাজানো আছে কঙ্কালের হাড়। মাথার উপরে ঝুলছে বিশালাকার কঙ্কালের ঝাড়বাতি। চারপাশে যেন হাজার হাজার কঙ্কালের মুণ্ডু গির্জায় উপস্থিত সবাইকে দেখছে!
জানা যায়, ৪০-৭০ হাজার মানুষের কঙ্কাল দিয়ে শৈল্পীকভাবে সাজানো হয়েছে গির্জাটি। এই গির্জাটি চেক প্রজাতন্ত্রের অন্যতম পর্যটকদের আকর্ষনীয় স্থান। এই গির্জাটির অন্যতম আকর্ষণ হলো সেখানকার বড় একটি কঙ্কালের ঝাড়বাতি। মানবদেহের ২০৬ ধরনের হাড় ব্যবহার করা হয়েছে এ ঝাড়বাতি তৈরিতে।
গির্জার আরো একটি আকর্ষণ হলো সোয়র্জনেবার্গ পরিবারের এর কুলচিহ্ন। এটিও কঙ্কাল দিয়ে তৈরি। ১২৭৮ সালে হেনরি নামে একজন মঠাধ্যক্ষকে বোহেমিয়ার রাজা আটাকোরা ২ জেরুজালেম পাঠান। সেখান থেকে ফেরার পথে তিনি গলগোথার কিছু মাটি সঙ্গে করে আনেন। পরবর্তীতে তা তিনি মঠের গোরস্তানের চারপাশে ছড়িয়ে দেন।
এই খবর চারপাশে ছড়িয়ে পড়ে এবং পবিত্র স্থান হিসেবে বিবেচিত হয়্ এরপর থেকে সবাই বেঁচে থাকতেই জানায়, মৃত্যুর পর যেন তাদেরকে সেখানে সমাহিত করা হয়। এরপর থেকেই ইউরোপজুড়ে সেলডেক হয়ে ওঠে জনপ্রিয় এক সমাধিক্ষেত্র।
১৪ শতাব্দীতে ব্ল্যাক ডেথের সময় এবং ১৫ শতাব্দীর প্রথম দিকে হাজাইট যুদ্ধের সময় হাজার হাজার মানুষকে এখানে সমাহিত করা হয়। ১৪০০ সালের দিকে এই গির্জার ভিতরে একটি গোথিক গির্জা নির্মাণ করা হয়; যেখানে মৃতদেরকে সমাহিত করা হয়। তাই এর পরিধি অনেক বেড়ে যায়।
১৭০৩ থেকে ১৭১০ সালের এর মধ্যে, একটি নতুন প্রবেশদ্বার তৈরি করা হয় যা সামনের প্রাচীরের বাহ্যিক সাপোর্ট হিসেবে কাজ করে। উপরের চার্চটি পুনঃনির্মিত হয়। চেক বারোক স্টাইলে এই চার্চের স্থাপতি ও ডিজাইনার ছিলেন জ্যান সান্তিনি আইচেল। ১৮৭০ সালে ফ্রান্তি অ্যাক রিন্ত একজন কাঠমিস্ত্রি যিনি এই হাড়গুলো সাজিয়ে রাখার দায়িত্ব পান।
১৭০৩ থেকে ১৭১০ সালের মধ্যে উপরের চার্চটি পুনঃনির্মিত হয়। চেক বারোক স্টাইলে এই চার্চের স্থাপতি ও ডিজাইনার ছিলেন জ্যান সান্তিনি আইচেল। ১৮৭০ সালে ফ্রান্তি অ্যাক রিন্ত নামক কাঠমিস্ত্রি এই হাড়গুলো সাজিয়ে রাখার দায়িত্ব পান।
১৫১১ সালের পর কবর খুঁড়ে কঙ্কাল সংগ্রহের কাজ বর্তায় গির্জার একজন কম দৃষ্টিসম্পন্ন সন্ন্যাসীকে। ১৭০৩ থেকে ১৭১০ সালের এর মধ্যে, একটি নতুন প্রবেশদ্বার তৈরি করা হয়। যা সামনের প্রাচীরের বাইরের খুঁটি হিসেবে হেলান দিয়ে থাকত।
গির্জাটি ইউরোপের মধ্যযুগীয় স্থাপত্যশৈলীর অন্যতম এক নিদর্শন। এই গির্জার গম্বুজের চূড়াতেও আছে সোনালি রঙের মাথার খুলি ও হাড় দিয়ে (ক্রসবোন) নকশা করা। গির্জার চারপাশে অনেকখানি জায়গা জুড়ে আছে কবরস্থান। এ গির্জার মধ্যে সেলফি তোলা নিষিদ্ধ।
সূত্র: অ্যাটলাস অবসকিউর/মেন্টাল ফ্লস
জেএমএস/জিকেএস