প্রত্নতাত্ত্বিক নিদর্শন নিয়ে কাজ করছেন এলিজা
জি এম আদল
প্রাকৃতিক সৌন্দর্যের এক অপূর্ব লীলাভূমি বাংলাদেশ। যেখানে ইতিহাস-ঐতিহ্যের সংমিশ্রণে পর্যটনের রয়েছে অপার সম্ভাবনা। পৃথিবীর অন্যান্য দেশে পর্যটন অন্যতম একটি অর্থনৈতিক শিল্প খাত। বাংলাদেশের ট্যুরিজমে প্রচুর সম্ভাবনা থাকলেও প্রচার-প্রসারের অভাবে পিছিয়ে আছে বাংলাদেশ। সম্ভাবনাময় এ খাতকে এগিয়ে নিতে সরকারের পাশাপাশি বেসরকারি উদ্যোগের প্রয়োজন।
দেশের এ পর্যটনকে এগিয়ে নিতে অনেকেই নানাভাবে কাজ করছেন। এলিজা বিনতে এলাহী তাদের মধ্যে অন্যতম। তিনি পেশায় একজন শিক্ষক। নিজেকে ‘ঐতিহ্য পর্যটক’ হিসেবে পরিচয় দিতে স্বাচ্ছন্দ বোধ করেন। তিনি ইডেন মহিলা কলেজ থেকে ইংরেজি সাহিত্যে মাস্টার্স করেন। পরে এআইইউবি থেকে হিউম্যান রিসোর্স ম্যানেজমেন্ট বিভাগ থেকে এমবিএ করেন।
এমনকি নেদারল্যান্ডসের দি হেগ ইউনিভার্সিটি অব অ্যাপ্লায়েড সায়েন্সেসে কমিউনিকেশন ম্যানেজমেন্ট বিভাগের অধীনে বাংলাদেশের হেরিটেজ ট্যুরিজমের ওপর গবেষণা করেছেন। তার গবেষণার বিষয় ছিল ‘বাংলাদেশের পর্যটনশিল্প বিকাশে হেরিটেজ ট্যুরিজমের গুরুত্ব’। দেশের ৬৪ জেলার প্রত্নতাত্ত্বিক স্থাপনাগুলো ঘুরে দেখছেন। এগুলোর তথ্য সংগ্রহের কাজ করছেন। দেশের প্রত্নতাত্ত্বিক নিদর্শন নিয়েই তার মূল ভাবনা।
২০১৬ সালের ১৭ মে ‘আমার ঐতিহ্যের বাংলাদেশ, হেরিটেজের বাংলাদেশ’ স্লোগানকে ধারণ করে এলিজা হেরিটেজ ভ্রমণ শুরু করেন। ‘কোয়েস্ট : অ্যা হেরিটেজ জার্নি অব বাংলাদেশ’ প্রকল্পের আওতায় দেশের ৬৪ জেলার প্রত্নতাত্ত্বিক স্থাপনাগুলো ঘুরে দেখেন। বাংলাদেশ ছাড়াও বিশ্বের ৪৬টিরও বেশি দেশের প্রত্নতাত্ত্বিক নিদর্শন দেখতে ভ্রমণ করেছেন। সে অভিজ্ঞতা নিয়ে ‘এলিজা’স ট্রাভেল ডায়েরি’ ও ‘এলিজা’স ট্রাভেল ডায়েরি-২’ নামে দুটি বইও লিখেছেন।
ভ্রমণ বিষয়ে আগ্রহ সম্পর্কে এলিজা বলেন, ‘আমার ঘুরে বেড়ানোর অধ্যায়টা শুরু হয় ১৯৯৯ সালে। সবচেয়ে বেশি ঘুরেছি মায়ের সঙ্গে। তবে ইংরেজি সাহিত্য পড়তে গিয়ে গ্রিক, ইজিপসিয়ান সভ্যতা ও স্থাপনা সর্ম্পকে জানা। তা থেকেই হেরিটেজ ট্যুরিজমের প্রতি বিশেষ আগ্রহ তৈরি হয়।’
দেশে হেরিটেজ ট্যুরিজমের সমস্যা ও সম্ভাবনা সম্পর্কে তিনি বলেন, ‘আমাদের দেশ বৈচিত্র্যময়। বৈচিত্র্য ও প্রাচীনত্ব থেকেই আমরা প্রচুর সমৃদ্ধ। হেরিটেজ ট্যুরিজমে ইউরোপের মতোই সমৃদ্ধ সম্ভার রয়েছে আমাদের। তবে দুঃখের ব্যাপার, এখনো দেশে হেরিটেজ ট্যুরিজম ধারণাটাই ঠিকমত গড়ে ওঠেনি। শুধু প্রত্নতাত্ত্বিক নিদর্শন নয়; এর পেছনের ইতিহাস-ঐতিহ্যও ট্যুরিজমের অংশ হতে পারে। এ বিষয়ে প্রচার-প্রসারসহ পর্যটনের সঙ্গে হেরিটেজ ট্যুরিজমের সমন্বয়ের বেশ অভাব রয়েছে।’
এলিজা তার কাজের স্বীকৃতি স্বরূপ পেয়েছেন ‘প্রথম আলো ভিএসও স্বেচ্ছাসেবা সম্মাননা ২০১৯’। তিনি স্বপ্ন দেখেন, বাংলাদেশে হেরিটেজ ট্যুরিজম অনেক দূর এগিয়ে যাবে। প্রতিনিয়ত বিদেশি পর্যটক আসবে এ দেশের হেরিটেজ ট্যুরিজম দেখতে। এমনকি সমৃদ্ধ হবে দেশের হেরিটেজ ট্যুরিজম শিল্প ও অর্থনীতি।
লেখক: ফিচার লেখক।
এসইউ/এমএস