পর্যটকদের দৃষ্টি কাড়বে ‘ফুলকলির সমাধিসৌধ’
পার্বত্য চট্টগ্রামের ভূ-প্রাকৃতিক গঠনের কারণে এখানে যোগাযোগব্যবস্থা একসময় বেশ নাজুক ছিল। পাহাড়বেষ্টিত ভৌগলিক গঠন এ অঞ্চলকে স্বতন্ত্র বৈশিষ্ট্য দিয়েছে। প্রশাসনিক কার্যক্রমে অন্যতম বড় বাধা ছিল দুর্গম যোগাযোগব্যবস্থা। এখানকার ইতিহাসের সাথে হাতির সম্পর্ক অভিন্ন। ওই সময়ে হাতির ভূমিকা ছিল অনস্বীকার্য। ভৌগলিক গঠনের কারণে পিছিয়ে পড়া এ জনপদে তিন দশক আগেও প্রত্যন্ত এলাকায় প্রশাসনিক কাজে হাতির পিঠে চড়ে চলাচল করতেন জেলা প্রশাসকরা।
১৯৮৩ সালে খাগড়াছড়ি জেলা ঘোষণার পর থেকেই জেলা প্রশাসকরা প্রশাসনিক কাজে হাতি ব্যবহার করতেন। হাতির পিঠে চড়ে জেলা প্রশাসকরা সরকারি কাজ করতেন। তারই ধারাবাহিকতায় ৯০ দশকে খাগড়াছড়ির তৎকালীন জেলা প্রশাসক খোরশেদ আনসার খাঁন পোষ্যহাতি ‘ফুলকলি’র পিঠে চড়ে প্রত্যন্ত এলাকায় যেতেন।
১৯৯০ সালে তার সর্বশেষ হাতি ফুলকলি অন্য একটি বন্যহাতির আক্রমণে মারা যায়। ফুলকলির (হাতি) মৃত্যুর পর খোরশেদ আনসার খাঁন পরম মমতায় ফুলকলিকে খাগড়াছড়ি-চট্টগ্রাম আঞ্চলিক সড়কের গোলাবাড়ি ইউনিয়ন পরিষদের সামনে সমাধিস্থ করেন।
খাগড়াছড়ির বিভিন্ন প্রকাশনায় জেলা প্রশাসকের হাতি ‘ফুলকলি’র কবরের কথা উল্লেখ থাকলেও ইট দিয়ে ঘেরা সেই সমাধিস্থল সংরক্ষণের অভাবে জরাজীর্ণ এবং পরিত্যক্ত হয়ে পড়েছিল। উদ্যোগের অভাবে ঝোপঝাড়-জঙ্গলে ঢেকে গিয়েছিল সেই সমাধিস্থল। খাগড়াছড়িতে বেড়াতে আসা পর্যটকদের কাছে ‘ফুলকলি’র ইতিহাস অজানা থেকে যায়। দীর্ঘদিন পর হলেও ‘ফুলকলি’র কবর সংরক্ষণের উদ্যোগ নিয়েছে খাগড়াছড়ির জেলা প্রশাসক প্রতাপ চন্দ্র বিশ্বাস।
ফুলকলির স্মৃতিকে ধরে রাখতে এবং পার্বত্য চট্টগ্রামের যোগাযোগমাধ্যম হিসেবে হাতি ব্যবহারের ঐতিহ্য পর্যটক ও স্থানীয়দের কাছে তুলে ধরতে খাগড়াছড়ি-চট্টগ্রাম আঞ্চলিক সড়কের গোলাবাড়ি ইউনিয়ন পরিষদের সামনে ‘ফুলকলির সমাধিসৌধ’ গড়ে তোলা হচ্ছে।
জেলা প্রশাসনের অর্থায়নে নির্মিত সমাধিসৌধের নির্মাণ কাজ আগামী নভেম্বরের মধ্যে শেষ হবে। এর পরই তা পর্যটকদের জন্য উন্মুক্ত করা হবে। নান্দনিক নির্মাণশৈলীর কারণে ফুলকলির ইতিহাস পাঠের পাশাপাশি পর্যটকরা মুগ্ধ হবেন বলে মনে করছেন সংশ্লিষ্টরা।
গত ২ সেপ্টেম্বর ফুলকলির সমাধিসৌধের নির্মাণকাজের উদ্বোধন করেন ভারত প্রত্যাগত শরণার্থী বিষয়ক টাস্কফোর্সের চেয়ারম্যান (প্রতিমন্ত্রীর পদমর্যাদা) কুজেন্দ্র লাল ত্রিপুরা এমপি। ফুলকলির সমাধিসৌধ নির্মাণে কারিগরি সহায়তা দিচ্ছে গণর্পূত বিভাগ।
মুজিবুর রহমান ভুইয়া/এসইউ/এএ/জেআইএম