যশোরের সাগরদাঁড়িতে যা যা দেখবেন
শাহরিয়ার সজীব
সাগরদাঁড়ি; সবুজের মায়ায় ঘেরা ছোট্ট একটি গ্রাম। কপোতাক্ষের তীর ঘেঁষে বহুকাল ধরে দাঁড়িয়ে আছে শ্যামল মায়ের গ্রাম। বাংলা সনেটের জনক মাইকেল মধুসূদন দত্তের জন্মভূমি। এমন কোথাও যদি ঘুরতে যেতে চান, যেখানে সৌন্দর্য, সাহিত্য এবং ইতিহাসের সমাহার থাকবে; তাহলে সাগরদাঁড়ি গ্রাম থাকবে পছন্দের তালিকার শীর্ষে। গ্রামটি যশোর জেলার কেশবপুর থানার অন্তর্গত। মহাকবি মাইকেল মধুসূদন দত্তের বাবা রাজনারায়ণ দত্ত ছিলেন তৎকালীন জমিদার। বিশাল জায়গাজুড়ে থাকা জমিদার বাড়িটি এখনো তার জৌলুসের জানান দিয়ে যাচ্ছে। সাগড়দাঁড়িতে অবস্থিত এ বাড়িতেই মাইকেল মধুসূদন দত্তের ছেলেবেলা কাটে। বাড়ির পূর্বপাশ দিয়ে বয়ে চলেছে বিখ্যাত কপোতাক্ষ নদ, যার মন ভোলানো সৌন্দর্যে মুগ্ধ না হয়ে পারবেন না। এ নদের কালোজলে যখন বিকেলের সূর্যের স্নিগ্ধ আলো পড়ে; তখন আপনার চোখ সেই দৃশ্যে বিমোহিত হবে।
ভ্রমণপিপাসুরা এখানে এলে দেখতে পাবেন গ্রামের শুরুতেই একটি প্রাচীন মসজিদ অবস্থিত। সেখান থেকে কিছুটা পথ পেরিয়ে এলেই পড়বে পদ্মপুকুরসহ জমিদার বাড়ি। এখন পুরো বাড়িটি ঘিরেই তৈরি করা হয়েছে পুরাতত্ত্ব জাদুঘর। এখানে দেখতে পাবেন কবির নিজহাতে লেখা ঈশ্বরচন্দ্র বিদ্যাসাগরসহ বিভিন্ন গুণীজনের কাছে পাঠানো চিঠিপত্র এবং তৎকালীন জমিদারদের ব্যবহার্য দ্রব্যাদি। যেগুলো প্রমাণ করে যে, তারা তখন কতটা সমৃদ্ধ ছিলেন। বাড়ির ঠিক মাঝখানে রয়েছে একটি দুর্গামন্দির। প্রতিবছর খুব জাঁকজমক করে দুর্গা পূজা করা হতো। বিশাল পদ্মপুকুরের পাশেই অবস্থিত কাছারিঘর। এখানে মাইকেল মধুসূদন দত্তের বাবা রাজনারায়ণ দত্ত জমিদারি পরিচালনা করতেন। পরবর্তীতে এ কাছারিঘরকে লাইব্রেরিতে রূপান্তর করা হয়। লাইব্রেরিতে মহাকবি মাইকেল মধুসূদন দত্তের লেখা বেশ কিছু বই রয়েছে।
বাড়ির দক্ষিণপাশে মাইকেল গবেষকদের পৃষ্ঠপোষকতায় গড়ে উঠেছে আরও একটি জাদুঘর। যেখানে শোভা পেয়েছে মাইকেল মধুসূদন দত্তের জীবনের দুর্লভ আলোকচিত্রসমূহ, নিজহাতে লেখা ডায়েরির খণ্ডাংশ, অর্থ সাহায্য চেয়ে কবির লেখা চিঠি এবং কবির পরবর্তী প্রজন্মের ইতিহাস। কবির বাড়ির আশেপাশে গড়ে উঠেছে তার বিশালাকার কিছু মূর্তি এবং মার্বেলপাথর খচিত কিছু কবিতা। পুরো জমিদার বাড়িটি বিভিন্ন ফুল এবং পাতাবাহার গাছে সুসজ্জিত রয়েছে। সেখানে ঘুরতে ঘুরতে দেখতে পাবেন বিদায় ঘাট; যেখান থেকে তিনি পরিবারের কাছ থেকে বিদায় নিয়ে পাড়ি জমান ফ্রান্সে। কপোতাক্ষ নদের দুইপাশ দিয়ে বসানো হয়েছে বিভিন্ন প্রাণিমূর্তি। যেগুলো শিশুদের বিনোদনের একটি মাধ্যম হয়ে উঠেছে।
প্রতিবছর মাইকেল মধুসূদন দত্তের জন্মদিনে বিশাল জাঁকজমক মেলা বসে। তখন দেশ-বিদেশের লাখো পর্যটকের পদধ্বনিতে মুখরিত থাকে চারিদিক। মেলায় পুতুল নাচ, সার্কাস, জাদুখেলাসহ নানাভাবে তাদের মনোরঞ্জনের আয়োজন করা হয়। হরেক রকম খাবাবের বিরাট পসরা সাজানো হয় মেলার সময়। এ মেলা সাধারণত সাত দিন ধরে উদযাপিত হয়। যেখানে প্রতিদিনই আয়োজন করা হয় মনোজ্ঞ সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানের। দেশের বিখ্যাত সংগীতশিল্পী, নৃত্যশিল্পী, আবৃত্তিশিল্পীসহ উপস্থিত থাকেন দেশের বরেণ্য ব্যক্তিবর্গ।
তাছাড়া বাংলার ঐতিহ্য হস্তশিল্পের একটি বিরাট অংশ এখানে দেখতে পাবেন। অনেক প্রজাতির জীবজন্তুর সমাহার নিয়ে তৈরি করা হয়েছে একটি চিড়িয়াখানা। রয়েছে কপোতাক্ষ পার্ক, যা ভ্রমণের আনন্দকে দ্বিগুণ করে তুলবে। ভ্রমণের এত আনন্দ কিভাবে একসাথে পেতে পারেন, তা এখানে না এলে বুঝতেই পারবেন না। প্রকৃতির মায়ায় ঘেরা এ গ্রাম খুব সহজেই আপনার মনে জায়গা করে নেবে। তাই আপনার কোথাও ভ্রমণের পরিকল্পনা থাকলে দেরি না করে ঘুরে আসতে পারেন সাগরদাঁড়ি থেকে।
লেখক: প্রথম বর্ষ, সমাজকর্ম বিভাগ, জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়।
এসইউ/এএ/এমএস