ভিমরুলির ভাসমান বাজারে যেভাবে যাবেন
ভাসমান পেয়ারা বাজারের জন্য বিখ্যাত বরিশালের ঝালকাঠি, পিরোজপুর ও স্বরূপকাঠির বিভিন্ন জায়গা। এর মধ্যে জনপ্রিয় হলো ভিমরুলি, আটঘর, কুড়িয়ানা বাজার। পেয়ারা বেচাকেনার জন্য ঝালকাঠির ভিমরুলিতে জমে ওঠে সবচেয়ে বড় ভাসমান পেয়ারা বাজার। সারি সারি ভাসমান নৌকায় সবুজ-হলুদ পেয়ারার ছড়াছড়ি। এখানে আছে অসংখ্য পেয়ারার বাগান। চাষিরা সরাসরি বাগান থেকে পেয়ারা এনে বিভিন্ন অঞ্চলের পাইকারদের কাছে বিক্রি করেন।
ভাসমান পেয়ারা বাজার: বরিশাল-ঝালকাঠি-পিরোজপুর জেলার সীমান্তবর্তী কিছু এলাকা নিয়ে ঐতিহ্যবাহী পেয়ারার বাগান। আটঘর, কুড়িয়ানা, ডুমুরিয়া, বেতরা, ডালুহার, সদর এলাকার প্রায় ২৪ হাজার একর জমিতে পেয়ারার চাষ হয়। এখন আমড়া বাগানও করছেন অনেকে। মাঝেমধ্যে সুপারি বাগান। পেয়ারার উৎপাদন বেশি হয় জুলাই থেকে সেপ্টেম্বর পর্যন্ত। বর্ষাকালেই মূলত উৎপাদন বেশি। পানিতে ডুবে থাকলেও পেয়ারার তেমন ক্ষতি হয় না। বর্ষা মৌসুমে প্রায় প্রতিদিনই দেশি-বিদেশি প্রচুর পর্যটক আসেন। প্রতিদিন দেশের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে পেয়ারা ও আমড়া কেনার জন্য ক্রেতা আসেন। পেয়ারার দাম কম-বেশি হয়। মণপ্রতি ৭০০-১৬০০ টাকা পর্যন্ত হয়।
ভাসমান এই বাজার দেখে নৌকায় চড়ে পেয়ারা বাগান দেখার উদ্দেশ্যে রওনা দিলাম। ৩০০ টাকা দিয়ে ২ ঘণ্টার জন্য ছোট একটি ডিঙি ভাড়া করলাম। যেতে যেতেই পেয়ারা-আমড়া নিয়ে বাজারে যাওয়ার বিভিন্ন নৌকা দেখলাম। ভিমরুলি বাজারের কাছাকাছি বাদুর ও চামচিকার আবাস দেখলাম। এখানে রাতের বেলা বিভিন্ন পাখির কিচিরমিচির শব্দ হয়। ছোট ছোট খাল বেয়ে পেয়ারা ও আমড়া বাগানে প্রবেশ করলাম। বাগান থেকে পেয়ারা নিজ হাতে ছিঁড়ে খেতে দারুণ লাগল। দুই ঘণ্টার নৌকা ভ্রমণ ও মাঝির সঙ্গে বিভিন্ন কথা-বার্তায় কেটে গেল। এসব এলাকায় পানি আর পানি। পানি ছাড়া স্থলপথে পণ্য পরিবহন কষ্টসাধ্য ও ব্যয়বহুল। ফলে পণ্য পরিবহনের জন্য বিকল্প পথ খুব কম।
পেয়ারা বাগান: ভিমরুলিতে প্রতিদিন পেয়ারা বাজার বসে। প্রতি বছরের জুলাই, আগস্ট, সেপ্টেম্বর মৌসুমে কয়েকশ কোটি টাকার পেয়ারা উৎপাদন ও কেনাবেচা হয়। কুড়িয়ানা ও আটঘরে প্রতিদিন কম পরিমাণে পেয়ারা বেচাকেনা হয়।
নৌকার হাট: পেয়ারার ভাসমান বাজারের ব্রিজ থেকে সামান্য হেঁটে ও অটোতে ভেঙে ভেঙে কুড়িয়ানা এলাম। স্কুলসংলগ্ন বাজার থেকে আটঘরের নৌকা হাটের দিকে রওনা দিলাম। অটোতে যেতে যেতে ভাসমান সবজি বাজার দেখলাম। দারুণ লাগল। ৫-৬ কিলোমিটার যেতেই নৌকা সারি সারি। এটাই আটঘরের নৌকা হাট। একটু দূরেই আটঘরের ছোট্ট বাজার। প্রতি শুক্রবার নৌকার হাট বসে। ৫শ থেকে ২৫০০ টাকা পর্যন্ত প্রতিটি নৌকা বিক্রি হয়। বেশিরভাগ নৌকা ডিঙি বা ছোট। কেউ কেউ নৌকা কিনে যন্ত্রযানে করে নিয়ে যাচ্ছেন। কেউ কেউ পানিতে বৈঠা বেয়েও নিয়ে যান। নৌকার হাট দেখে ছোট ছোট যন্ত্রযানে আটঘর-নহগ্রাম হয়ে বরিশালের চৌরাস্তায় এলাম। আটঘর থেকে প্রায় ২০ কিলোমিটার। ভাড়া ৫০-৬০ টাকা।
যাতায়াত: বরিশাল চৌরাস্তা থেকে নবগ্রাম রোড ধরে আটঘর। অথবা নথুল্লা বাসস্ট্যান্ড থেকে বানারিপাড়ার একটু আগেই রায়েরহাট নেমে যেতে হবে। এরপর অটোতে কুড়িয়ানা ব্রিজ পর্যন্ত। ব্রিজ পার হয়ে কুড়িয়ানা স্কুলসংলগ্ন বাজার থেকে ভিমরুলি বা আটঘর যাওয়া যায়। আটঘর থেকে কুড়িয়ানা। কুড়িয়ানা থেকে অটো ধরে কিছু হেঁটে ভিমরুলি বাজার। ঝালকাঠি শহর থেকে ১৬-১৭ কিলোমিটার দূরের এ বাজার। সিএনজি বা অটোতে যাওয়া যায়।
নৌকা ভাড়া: কুড়িয়ানা বা আটঘর বাজারের কাছেই নৌকা ভাড়া পাওয়া যায়। ৫-৬ ঘণ্টার জন্য কম-বেশি ২ হাজারের মত ভাড়া লাগবে। ছোট-বড় ইঞ্জিন-চালিত নৌকার ভাড়ার রকমফের হয়। একা বা দু’জন গেলে শেয়ারে যেতে হবে। কমসংখ্যক কোনো দলে যোগ দিতে হবে। তবে ভিমরুলি ভাসমান বাজার সংলগ্ন ব্রিজের কাছে ছোট-ছোট ডিঙি নৌকা পাওয়া যায়। সর্বোচ্চ ৪ জন যাওয়া যায়। ভাড়া ঘণ্টাপ্রতি ১৫০-২০০ টাকা। এখানে ইঞ্জিনচালিত নৌকার ভাড়া কুড়িয়ানা বাজারের থেকে তুলনামূলক কম। কেউ ইচ্ছে করলে বানারিপাড়া লঞ্চঘাট থেকেও নৌকা বা লঞ্চ ভাড়া করতে পারেন। খরচ একটু বেশিই হবে। তবে লোকসংখ্যা বেশি হলে পুষিয়ে যাবে। কেননা সড়কপথের ভাড়া কমে যাবে। আর মেইন রোডের কাছেই হবে। বাস বা পরিবহন থেকে নেমেই কাছাকাছি হবে। হাঁটতে হবে না। ঝালকাঠি থেকে গেলেও ভিমরুলি বাজারের কাছাকাছি নামা যাবে।
খাওয়া-থাকা: কুড়িয়ানা, আটঘর বা ভিমরুলি বাজার সংলগ্ন ছোট ছোট খাওয়ার হোটেল পাওয়া যাবে। দেশীয় মাছে রসনাতৃপ্তি ভালো হবে। আর আরামে থাকার জন্য ঝালকাঠি, স্বরূপকাঠি বা বরিশালের যেকোনো একটি স্থান বেছে নিতে পারেন। এসব স্থানে পছন্দমত বাজেটে থাকা ও খাওয়ার ব্যবস্থা আছে।
লেখক: কবি ও প্রাবন্ধিক।
এসইউ/এএ/পিআর