কক্সবাজার সৈকতে এক মায়াবী সন্ধ্যায়
সালটা ২০১০-২০১১ হবে। তখন ইউনিভার্সিটিতে পড়ি। ক্লাসে যাওয়ার পথে দীর্ঘ জ্যামে আটকে পড়লাম। একদিকে জ্যাম, অন্যদিকে যান্ত্রিক নগরীর শব্দ দূষণ। শেষে ক্যাম্পাসে পৌঁছে ফ্রেস হয়ে ক্লাসে চলে গেলাম। হঠাৎ ক্লাস চলতে চলতে মনে হলো, না আর ভালো লাগছে না যান্ত্রিক শহর। একটু রিফ্রেশমেন্ট দরকার, যাওয়া যাক কক্সবাজার। সমুদ্রের ঠান্ডা গর্জন শুনলে মনটা হয়তো ফুরফুরে হবে।
ক্লাসের প্রতি মনোযোগ কম দিয়ে চার বন্ধুকে বললাম বিষয়টা। তারাও রাজি হয়ে গেল সাথে সাথে। বাস কাউন্টারে ফোন দিয়ে সেদিন রাতের ৪টি টিকিট বুক করে ফেললাম। অফ সিজন, তাই টিকিট নিয়ে বেগ পেতে হলো না। ক্লাস শেষ করে বাসায় গিয়ে কিছু কাপড় নিয়ে সোজা চলে গেলাম বাস কাউন্টারে। ইতোমধ্যে বন্ধুরাও চলে এলো সেখানে। টিকিট কেটে রাতের খাবার খেয়ে ৭টার মধ্যে রওনা হয়ে গেলাম। পৌঁছলাম ভোরে।
নাস্তা খেয়ে হোটেল ঠিক করলাম। প্ল্যান ছিল এক রুমেই থাকবো। খরচও কমবে এবং প্রতি মুহূর্তে প্রাণ খুলে আড্ডা দেওয়া যাবে। তাই একটি বড় রুম ঠিক করলাম। সেটি ছিল বীচ ভিউ। ক্লান্তি ঝরানোর জন্য ঘণ্টা তিনেক ঘুমিয়ে নিলাম। ঘুম থেকে উঠে চলে গেলাম কলাতলী বীচে সমুদ্রস্নানে। ২ ঘণ্টার মতো পানিতে ঝাপাঝাপি শেষে চলে গেলাম খাবার খেতে। খেলাম মাছ-ভাত-ভর্তা। খুব টেস্ট। খাওয়া পর্ব শেষ করে ফিরে এলাম রুমে। সেখানে কিছুক্ষণ জিরিয়ে বিকেল নাগাদ বেরিয়ে পরলাম কক্সবাজারের বিকেল দর্শনে। বিশাল জলরাশির সঙ্গে মিশেছে নীল আকাশ। ঢেউ আছড়ে পড়ছে সৈকতের বুকে। এ দৃশ্য দেখে যে কারো হৃদয় নিমিষেই জুড়িয়ে যাবে।
এরপর প্রকৃতি পরিবর্তন হতে থাকল। কক্সবাজার সৈকতে নেমে এলো মায়াবী এক সন্ধ্যা। দেখেই এক নিমিষে ভুলে গেলাম গতকালের যান্ত্রিক শহরের সেই দীর্ঘ জ্যামের কথা। রাত পর্যন্ত শহরের এপাশ ওপাশ ঘুরে রাতের খাবার শেষে চলে গেলাম সুগন্ধা বীচে, সমুদ্রের ঢেউ আর গর্জন শুনতে। সে এক অন্যরকম শান্তি। আবারও ফিরে এলাম হোটেলে। ফ্রেস হয়ে শুরু হলো আড্ডাবাজি, কার্ড খেলা এবং শৈশব স্মৃতিচারণ। রাত পেরিয়ে কখন ভোর হতে লাগলো, টের পেলাম না। সিদ্ধান্ত নিলাম একবারে সানরাইজ দেখেই ঘুমাবো। রুমের বারান্দা থেকে দেখা যাবে, তাই কষ্ট করে আর বাইরে বের হতে হলো না। রুমের বারান্দা থেকে সানরাইজ উপভোগ করেই ঘুমালাম।
পরদিন একটু দেরি করে ঘুম থেকে উঠে নাস্তা করতে বেরিয়ে পড়লাম। এরপর কিছুক্ষণ হেঁটে হেঁটে বাজার ঘুরে আবারও নেমে পড়লাম লাবনী বীচে গোসল করতে। পানিতে ঝাপাঝাপির পর চলে গেলাম এক সুইমিং পুলে। সেখানে কিছুক্ষণ থাকার পর আবারও চলে এলাম রুমে। দুপুরের শেষভাগে ফের বেরিয়ে পড়লাম। লাঞ্চ করে একটি জীপ ভাড়া করে চলে গেলাম হিমছড়ি ও ইনানী বীচ ভ্রমণে। যাওয়ার পথেই দৃষ্টিনন্দন নৌকার দেখা মিলল। সাগরের উত্তাল ঢেউয়ের সঙ্গে মিতালি করে বেড়ায় এসব নৌকা। সন্ধ্যা পর্যন্ত ঘুরে ফিরে এলাম রুমে।
কিছুক্ষণ জিরিয়ে নিয়ে ৯টার মধ্যে রুম চেকআউট করে বেরিয়ে পড়লাম। রাতের খাবার শেষ করে সাড়ে ১১টার বাসে চড়ে আবারও ফিরে এলাম ব্যস্ত নগরী ঢাকায়। তবে একেবারে রিফ্রেশ হয়ে। ২ দিন ১ রাত চোখের পলকে শেষ হয়ে গেলেও শরীর এবং মন থেকে সব ক্লান্তি দূর করে নতুন এনার্জি নিয়েই ফেরা হয়েছিল।
এসইউ/এএ/পিআর