সন্দ্বীপে পর্যটনের অপার সম্ভাবনা
সৌন্দর্যের লীলাভূমি সন্দ্বীপে রয়েছে পর্যটনের অপার সম্ভাবনা। পশ্চিমে মেঘনা নদী আর পূর্বে সন্দ্বীপ চ্যানেলের উত্তাল ঢেউ ও দুরন্ত বাতাসে প্রাণ জুড়ায়। বৃত্তাকারের দীর্ঘ ৪১ কিলোমিটার সমুদ্রসৈকত আর পূর্বে গুপ্তছড়া ঘাটে আছে ম্যানগ্রোভ বন। প্রকৃতিপ্রেমীদের জন্য রয়েছে অপরূপ নিসর্গ।
এখানকার প্রাকৃতিক স্থানগুলোকে ঘিরে পর্যটন শিল্পের অপার সম্ভাবনা দেখা দিয়েছে। সন্দ্বীপের পশ্চিমে রহমতপুর পুরাতন স্টিমার ঘাট এলাকায় মেঘনা নদীর তীরজুড়ে প্রাকৃতিক সৌন্দর্যমণ্ডিত স্থান প্রকৃতিপ্রেমীর আকর্ষণের কেন্দ্রবিন্দু হয়ে উঠতে পারে। এ এলাকায় মেঘনা নদীর তীর ঘিরে পর্যটন শিল্পের বিকাশ ঘটানো গেলে স্থানীয়ভাবে কর্মসংস্থান সৃষ্টিসহ অর্থনৈতিক উন্নয়ন ঘটবে বলে আশা করা যায়।
সন্দ্বীপে যেমন রয়েছে নৈসর্গিক রূপ, তেমনি রয়েছে নদী, পুকুর ও বিলে দেশীয় বিভিন্ন প্রজাতির সুস্বাদু মাছের ছড়াছড়ি। এছাড়া এখানে দেশি হাঁস-মুরগি পাওয়া যায়। গরু-মহিষের দুধ, দই ও খেজুর রস পাওয়া যায়। রয়েছে নানা রকম শাক-সবজি ও ফসলের ক্ষেত। মাঝ দরিয়ায় অপূর্ব সবুজের বেষ্টনি দর্শনার্থীর মন কেড়ে নেয়। নদীর বুকে অথৈ জলের মাঝে ছোট ছোট দ্বীপ-বন বাতাসের দোলায় কেঁপে ওঠে।
এসব বনে পাখির মেলা। বক, চিল, মাছরাঙা, পানকৌড়ি, বালিহাঁস, ময়না, টিয়া, ঘুঘুসহ আরও কত রকমের পাখি রয়েছে! এখানে শীতকালে অতিথি পাখির কলকাকলিতে মুখর হয়ে ওঠে। জেলেদের সাথে পাল্লা দিয়ে পাখিরাও মাছ শিকার করে। দলবেঁধে পাখিদের ওড়াউড়ি মন কেড়ে নেয়। চট্টগ্রাম শহর থেকে সড়কপথে কুমিরা-গুপ্তছড়া ঘাটে এসে স্পিড বোটে কয়েক মিনিটের পথ। সন্ধ্যার আগ মুহূর্তে আকাশের রংধনু নদীর বুকজুড়ে মিতালী গড়ে তোলে। মনোমুগ্ধকর দৃশ্য দেখে প্রাণ জুড়ায়।
সন্দ্বীপে বসে উপভোগ করা যায় সূর্যোদয় আর সূর্যাস্তের অপরূপ দৃশ্য। দেখা যায় মেঘনার ঐতিহ্যবাহী রূপালি ইলিশ কিংবা অন্য মাছ ধরার মনোরম দৃশ্য। যার জন্য দিন দিন আকৃষ্ট হচ্ছেন পর্যটকরা। তবে নিরাপত্তাসহ সরকারি হোটেল-মোটেলের কোন সুযোগ-সুবিধা না থাকায় পর্যটকদের পোহাতে হচ্ছে নানা বিড়ম্বনা। যথাযথ উদ্যোগ ও পরিকল্পনার অভাবে এ উপকূলের সম্ভাবনাময় পর্যটনের বিকাশ ঘটছে না। প্রয়োজনীয় অবকাঠামোসহ সুযোগ-সুবিধা দিলে সন্দ্বীপকে পর্যটন এলাকা হিসেবে গড়ে তোলা যায়।
স্থানীয়দের দাবি, সন্দ্বীপকে যদি পর্যটন এলাকা হিসেবে গড়ে তোলা হয় তাহলে বদলে যাবে এ অঞ্চলের মানুষের ভাগ্য। পর্যটন শিল্পের বিকাশ ঘটলে তৈরি হবে নতুন কর্মসংস্থান। অর্থনৈতিক উন্নয়নেও এগিয়ে যাবে এ অঞ্চল, এমনটাই মনে করেন সচেতন মহল। সরকার যদি সন্দ্বীপকে পর্যটন স্পট করার উদ্যোগ নেয় তাহলে এ এলাকায় প্রচুর মানুষের সমাগম হবে এবং দেশের অর্থনীতিও লাভবান হবে।
কালাপানিয়া ইউনিয়নের চেয়ারম্যান আলীমুর রাজী টিটু বলেন, ‘সন্দ্বীপ পর্যটন এলাকা অনেক আগে হওয়ার কথা ছিল। আমাদের সাংসদ অনেক দিন ধরে চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছেন। আশা করছি অচিরেই সন্দ্বীপ পর্যটন এলাকা হিসেবে গড়ে উঠবে।’
পর্যটন কর্পোরেশনের মহাব্যবস্থাপক জাকির হোসেন সিকদার বলেন, ‘আমরা সন্দ্বীপের বিভিন্ন স্পট ঘুরে দেখেছি। সন্দ্বীপ পর্যটকদের জন্য আকর্ষণীয় একটি জায়গা। পর্যটন খাতকে এগিয়ে নেওয়ার জন্য দ্রুততম সময়ের মধ্যে সন্দ্বীপে হোটেল-মোটেল নির্মাণ করা হবে।’
সন্দ্বীপের সংসদ সদস্য মাহফুজুর রহমান মিতা বলেন, ‘সন্দ্বীপকে পর্যটন এলাকা হিসেবে গড়ে তুলতে সংসদে উপস্থাপন করেছি। সন্দ্বীপে এখন অনেকগুলো উন্নয়ন দৃশ্যমান। সাবমেরিন ক্যাবলের মাধ্যমে বিদ্যুৎ এসেছে। ব্লক বেড়িবাঁধ, আরসিসি জেটি হচ্ছে। যাতায়াতের জন্য উন্নতমানের জাহাজ দেওয়ার চেষ্টা চলছে। পর্যটন এলাকা হিসেবে গড়ে উঠতে এখন আর বাধা নেই।’
এসইউ/এমএস