গরমে ঘুরে আসুন বাঁশের কেল্লা রিসোর্ট
তিতুমীরের বাঁশের কেল্লার কথা সবাই জানি। কিন্তু শমসের গাজীর বাঁশের কেল্লা দেখেছেন কখনো? না দেখলে এখনই ঘুরে আসুন ফেনীর ছাগলনাইয়া থেকে। সম্পূর্ণ বাঁশের তৈরি রিসোর্টটিতে আপনি ইতিহাস আর নান্দনিকতার স্পর্শ পাবেন।
অবস্থান: বাঁশ, খড় আর ছনের নান্দনিক ব্যবহারে গড়ে উঠেছে শমসের গাজীর বাঁশের কেল্লা রিসোর্ট। সম্পূর্ণ বাঁশের তৈরি রিসোর্টটি ফেনীর ছাগলনাইয়ায় ভারত সীমান্তের কাছে চম্পক নগর ও সোনাপুর গ্রামে অবস্থিত। চার একর জমিতে রিসোর্টটি প্রতিষ্ঠিত হয়েছে।
ইতিহাস: রিসোর্টটির পেছনে রয়েছে ঐতিহাসিক তাৎপর্য। শমসের গাজী ছিলেন ব্রিটিশ বিরোধী বিপ্লবী। ত্রিপুরার রোশনাবাদ পরগনার কৃষক বিদ্রোহের নায়ক ছিলেন। ১৭৫৭ সালে ব্রিটিশ শক্তিকে প্রতিহত করতে গিয়ে মৃত্যুবরণ করেন। শমসের গাজী ‘ভাটির বাঘ’ হিসেবে পরিচিত ছিলেন। ঔপনিবেশিক শক্তির হাতে নিহত প্রথম ব্যক্তি।
আরও পড়ুন > পতেঙ্গা সমুদ্রসৈকতে ভ্রমণ করবেন কেন?
নির্মাণের কারণ: এখানে রিসোর্টের বদলে থাকার কথা ছিল শমসের গাজীর রাজপ্রাসাদ। তাকে হত্যার পর শত্রুরা তার প্রাসাদ এবং সমস্ত স্থাপনা মাটির সাথে মিশিয়ে দেয়। শমসের গাজীর দুর্গটি এখন বিলুপ্ত। তবে তার স্মৃতিবিজড়িত কৈয়্যারা দীঘি, গুপ্ত সুড়ঙ্গ রয়েছে।
নির্মাতা: ত্রিপুরার নবাব শমসের গাজীর উত্তরসূরি ওয়াদুদ ভূঞা গড়ে তুলেছেন রিসোর্টটি। তিনি এখন থাকেন খাগড়াছড়িতে। তবে তার জন্ম সোনাপুরেই। এটি থাইল্যান্ড ও জাপানের বিভিন্ন শৈল্পিক রেস্ট হাউসের আদলে গড়া। কানাডার লুই ইউনিভার্সিটির স্থাপত্য প্রকৌশলী ‘সুরান না’ এটি নির্মাণে কাজ করেন। নাম রাখা হয় ‘শমসের গাজীর বাঁশের কেল্লা’।
বৈশিষ্ট্য: রিসোর্টে চেয়ার, টেবিলসহ সব আসবাবই বাঁশের। এর প্রবেশপথে চোখে পড়বে ‘ঐকতান’ নামের একটি ভাস্কর্য। আঙিনায় বাঁশের মাচার ওপর তৈরি পাহাড়ি ঘর। গাছের ফাঁকে ফাঁকে আড্ডা দেওয়ার ছোট বেঞ্চ। রয়েছে দৃষ্টিনন্দন লেক আর সুদৃশ্য ব্রিজ। পায়ে চালিত নৌকা নিয়ে ঘুরতে পারবেন লেকে। লেকের ওপারে হাঁটু গেঁড়ে মাথায় হাত দিয়ে আধশোয়া চিন্তামগ্ন স্ট্যাচু আছে। আছে দু’টি বানর ও খরগোশ। পাশাপাশি ডাইনিং হল, পাঠকক্ষ, মেহমান কক্ষ, চা কর্নার, পানির ফোয়ারাসহ উপভোগ করতে পারবেন ত্রিপুরার নাচ-গান।
আরও পড়ুন > রোমাঞ্চকর কালা পাহাড় ভ্রমণ
থাকা-খাওয়া: এখানে ছুটির দিনে প্রায় ২-৩শ’ পর্যটক ঘুরতে পারবেন। তারা পারিবারিক আবহে কাটাতে পারবেন রাত বা দিন। গরমেও আরাম-আয়াশে থাকতে পারবেন। সবসময় শীতল থাকা পাঁচ কক্ষবিশিষ্ট রিসোর্টের সিঙ্গেল বেড ভাড়া ৩০০০ থেকে ৩৫০০ টাকা। আর ডাবল বেড ভাড়া ৭০০০ টাকা। তবে রিসোর্টের ভেতরে প্রবেশে অনাবাসিকদের খরচ হবে মাত্র ২০ টাকা। থাকার পাশাপাশি পর্যটকদের খাবারের জন্য রয়েছে ঘরোয়া পরিবেশের ক্যান্টিন।
যেভাবে যাবেন: ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কে এসে বারইয়ারহাট নামতে হবে। এরপর রামগড় রোড দিয়ে করেরহাট বাজার পেরিয়ে শুভপুর বাজার। বাজার থেকে সোজা পূর্বদিকে একটি সরু সড়ক বেয়ে প্রায় ৩ কিলোমিটার সড়ক পার হলেই দেখা যাবে বাঁশের কেল্লা।
এসইউ/জেআইএম