বদলে গেছে পতেঙ্গা সমুদ্রসৈকত
পর্যটকদের তৃষ্ণা মেটাতে নতুন করে সাজানো হয়েছে চট্টগ্রামের পতেঙ্গা সমুদ্রসৈকত। সমুদ্র তীরে হাঁটার জন্য নির্মাণ করা হয়েছে সাড়ে পাঁচ কিলোমিটার ওয়াকওয়ে। তীরজুড়ে ফুলের বাগান। বসানো হয়েছে ছোট ছোট বিশ্রাম চেয়ার এবং রঙ-বেরঙের পাথর। চলছে শিশুদের রাইড নির্মাণকাজ। বসার স্থান, হাঁটার পথ ও সবুজ বাগান করা হয়েছে ফাঁকে ফাঁকে। পতেঙ্গা সমুদ্রসৈকতে দর্শনার্থীদের ভিড় বেড়েছে আগের তুলনায়। রাতের আলো ঝলমল পরিবেশ যেন অপরূপ দৃশ্য। পুরোপুরি বদলে গেছে আগের পরিবেশ। ঘুরে এসে বিস্তারিত জানাচ্ছেন মুহাম্মদ বোরহান উদ্দিন-
একদিকে সমুদ্র তলদেশ দিয়ে নির্মিত হচ্ছে দক্ষিণ এশিয়ার প্রথম টানেল। এ টানেল সন্নিহিত এলাকায় নির্মিত হচ্ছে ১৭ কিলোমিটারব্যাপী সিটি আউটার রিং রোড। আনুষ্ঠানিকভাবে এ রিং রোড খুলে দেওয়া না হলেও সমুদ্রের অপরূপ দৃশ্য উপভোগে ইতোমধ্যে সৌন্দর্যপিপাসুদের ভিড় জমজমাট রূপ নিচ্ছে। বিকেল থেকে গভীর রাত পর্যন্ত নারী-পুরুষ ও শিশুদের উপস্থিতি। এ যেন হাজারও মানুষের মিছিল। দুই ভাগে সৈকতের পাঁচ কিলোমিটারজুড়ে দু’পাশে যতদূর চোখ যায়, কেবল মানুষ আর মানুষ। তাদের কোলাহলে ছাপিয়ে যাচ্ছে ঢেউয়ের গর্জন।
> আরও পড়ুন- বসন্তে রাঙ্গামাটির পাহাড়ি সৌন্দর্য
শুক্রবার সরকারি ছুটির দিন হওয়ায় এদিন ছিল মানুষের উপচেপড়া ভিড়। পরিবার-পরিজন, বন্ধু ও প্রিয় মানুষকে নিয়ে দর্শনার্থীরা চষে বেড়াচ্ছে আধুনিক পতেঙ্গা সমুদ্রসৈকত। কেউ ব্যস্ত সুসজ্জিত বাগানের ফুলের সঙ্গে ছবি তুলতে। কেউ বা বসার আসনে বিশ্রাম নিচ্ছিলেন আয়েশে। অনেকে আবার হাঁটাপথ (ওয়াকওয়ে) ধরে সমুদ্রের সৌন্দর্য উপভোগ করছিলেন। কেউ কেউ একটু নিচে নেমে সমুদ্রের বালুচরে হেঁটে বেড়াচ্ছেন। সমুদ্রের ঢেউয়ের সঙ্গে পানিতে গোসল করছেন মনের আনন্দে। বাগানে ফোটা ফুলের ঘ্রাণে মুগ্ধ হয়ে উপভোগ করছেন সমুদ্রের বিশালতা। স্পীড বোটে চড়ে চক্কর দিচ্ছেন সমুদ্রে। অন্যদিকে দর্শনার্থীদের নিরাপত্তায় ট্যুরিস্ট পুলিশ ও বিচ কমিউনিটি পুলিশকে তৎপর থাকতে দেখা গেছে। বিশেষ করে ছুটির দিনগুলোতে অতিরিক্ত দর্শনার্থীদের বিষয়টি মাথায় রেখে নিরাপত্তা জোরদার করা হয়।
পতেঙ্গা সমুদ্রসৈকতের ৫ কিলোমিটারেরও বেশি ওয়াকওয়েতে একসঙ্গে ৫০ হাজার মানুষ হাঁটতে পারবে। এলাকাটিকে দুটি জোনে ভাগ করা হয়েছে। জোন ওয়ান ও জোন টু। জোন ওয়ান হচ্ছে সমুদ্রসৈকত। জোন টু হচ্ছে পাঁচ কিলোমিটার শেষে রিং রোড। সেখান থেকে আসা-যাওয়ার জন্য ক্যাবল কারের ব্যবস্থা থাকবে। পর্যায়ক্রমে ফাইভ স্টার হোটেল, কনভেনশন হল, শপিং মলসহ সব ধরনের সুযোগ-সুবিধা সম্বলিত এলাকা গড়ে তোলা হবে।
> আরও পড়ুন- সোনারগাঁওয়ে আনন্দ ভ্রমণে একদিন
ইতোমধ্যে জোন ওয়ান জনসাধারণের জন্য বিনোদনের উপযোগী হয়ে উঠেছে। জোন ওয়ানের মধ্যে ৩০ ফিটের সাড়ে পাঁচ কিলোমিটার ওয়াকওয়ে রয়েছে। এছাড়া এ জোনে একটি বিশাল প্লাজা থাকবে। ৭০০ গাড়ি রাখার জন্য পার্কিংয়ের ব্যবস্থা করা হচ্ছে। গাড়ি পার্কিংয়ের রাস্তাটি হবে টানেল এবং বিচ রোডের মাঝামাঝি। এখন বিচের প্রধান সড়ক যেটি আছে, সেটিকে ৮০ ফুট প্রশস্ত করা হচ্ছে। এ রোড দিয়ে মূলত সব গাড়ি প্রবেশ করবে এবং বের হবে। বিচ রক্ষণাবেক্ষণের জন্য টিকিটের ব্যবস্থা করা হবে। বিচ এলাকায় ছোট ও বড়দের জন্য বিভিন্ন রাইড থাকবে। শিশুদের জন্য কিছু সিম্পল রাইড থাকবে।
রাউজান উপজেলা থেকে ঘুরতে আসা মোহাম্মদ কুতুব উদ্দিন, এসএম কপিল উদ্দিন, মোহাম্মদ জিয়াউল হক বলেন, ‘পতেঙ্গা সমুদ্রসৈকতের পরিবর্তন সত্যিই অবিশ্বাস্য। গত একবছর আগেও এর চিত্র ছিল ভিন্ন। নতুন রূপে সজ্জিত এ সৈকতের বাকি অবকাঠামো উন্নয়ন শেষ হলে ভবিষ্যতে কক্সবাজার সমুদ্রসৈকতকেও ছাড়িয়ে যাবে। যারা ঘুরতে এসেছেন, তারা আর এখান থেকে ফিরতে চাইবেন না।’
এসইউ/এমকেএইচ