ভিডিও EN
  1. Home/
  2. ভ্রমণ

ভয়ংকর তুষারপাতে ছোটাছুটি

অতনু দাশ গুপ্ত | প্রকাশিত: ০৫:২৯ পিএম, ১১ অক্টোবর ২০১৮

সকালে যথারীতি বিছানা ছেড়ে উঠতে মন চাইছিল না। কিছু করার নেই, বাইরে খারাপ আবহাওয়া, আর কি? কিছু বলার নেই। সকাল থেকেই অবিরাম তুষারপাত হচ্ছে! গতকাল শপিংয়ে গিয়ে মিষ্টি পেটিস এনেছিলাম। ওটাই খেয়ে দেখি, সাথে চা। হাতরুটি কোথায় পাওয়া যায় কে জানে? আদৌ পাওয়া যাবে কিনা কে জানে?

যথারীতি ট্যাক্সি ডাকলাম। আজ ক্লাস না থাকলেও যেতে হচ্ছে। কারণ স্টাডি পারমিটে সমস্যা! কিভাবে এর সমাধান করা যায় এটা সম্পর্কে ফেসবুকে পোস্ট দিয়েছিলাম। কানাডিয়ান বাংলাদেশিদের একটি গ্রুপ আছে, ওখানে আগেই রেজিস্ট্রেশন করে রেখেছিলাম। কিছু ব্যাপার জানতে পারলাম তাদের মাধ্যমে, বাকিটাতে ইউনিভার্সিটিই ‘যথাযথ’।

প্রথমে ঢুকেই ভাবতে লাগলাম কোথায় যাব? সিকিউরিটির সাহায্য নিলাম। নিয়ে গেল ইন্টারন্যাশনাল স্টুডেন্ট সেন্টারে। যেতে যেতে সব দেখিয়ে দিলো। কিন্তুু এত কম সময়ে সবকিছু মনে রাখা একরকম অসম্ভব! এত বড় ইউনিভার্সিটিতে কোথায় কি হারিয়ে খুঁজবো কে জানে? শুরুতে তো এমনই হয়!

canada-cover

ইন্টারন্যাশনাল স্টুডেন্ট অ্যাডভাইসিং রুমে ঢুকে ডানদিকে গিয়ে প্রথম রুমেই এক সুর্দশন যুবককে বসে থাকতে দেখলাম। আমাকে দেখেই বের হয়ে এলেন। বললেন, ‘আমি ডানিয়েল টিটভ, ইন্টারন্যাশনাল স্টুডেন্ট অ্যাডভাইজারের অ্যাসিস্টেন্ট।’ আমি আমার পরিচয় দিয়ে বিস্তারিত বললাম। টিটভ অ্যাডভাইজার হেডের রুমে চলে গেলেন। সব শুনে তিনিও এলেন- ডোনাল্ড জনসন। বললেন, ‘তোমাকে ক্যাম্পাসের বাইরে কাজ করার জন্য আবার সিআইসি’র (কানাডিয়ান সরকার) কাছে আবেদন করতে হবে। ভুল সিদ্ধান্ত নিয়েছে সরকার তোমার বিরুদ্ধে।

প্রয়োজনীয় কাগজপত্র জোগাড় করে দিলেন ডানিয়েল টিটভ। দু’জন একসাথেই কাজ শেষ করলাম। ওইদিন ইউনিভার্সিটিতে কোনো ক্লাস ছিল না। তাই কোনো ছাত্রছাত্রীও নেই। টিটভের বিশেষ কোনো কাজ ছিল না। এতক্ষণ সময় আমার পেছনে ব্যয় করার মতো দেশ কানাডা না, এখানে সবাই সবসময় ব্যস্ত।

এরপর শুরু হলো বাস রুটের ব্যাপারে বিস্তারিত বিবরণ। গুগল ম্যাপ ব্যবহার করে আমাকে বুঝিয়ে দিচ্ছিলেন টিটভ। আমি কিছু বুঝলেও অধিকাংশ জায়গায়ই বুঝলাম না। মনে অসংখ্য প্রশ্ন আসতে লাগলো, কোথায়? কোন দিকে? তাকে শুধু প্রশ্ন করতে লাগলাম। বাসে কোথাও যেতে হলে বাস পাস বা টিকিট লাগে। কিভাবে ওখানকার সরকারি অফিস ‘অ্যাকসেস নোভা স্কসিয়া’তে যাওয়া যাবে, যেখানে গিয়ে আমাকে কানাডিয়ান আইডি কার্ড বানাতে হবে। ওটা ছাড়া অ্যাপ্লাই করলে হবে না।

canada-cover

দেশীয় পাসপোর্ট, আইডি কার্ড কিংবা অন্য কোনো কিছু এখানে অচল। তবে ব্যতিক্রম- ড্রাইভিং লাইসেন্স। লাইসেন্স পরীক্ষা দিতে গেলে ওই কার্ড ব্যবহার করলে সুবিধা পাওয়া যায়। ফিরে আসি টিটভ ও আমার কার্যক্রমে। শুরু হলো ক্যাম্পাস পরিক্রমা। টিটভ আমাকে যতটা পারলো ঘুরে দেখালেন ক্যাপারস কনভিনেন্সে পৌঁছা পর্যন্ত। এটি একটি দোকান, যেখানে যাবতীয় প্রয়োজনীয় জিনিস পাওয়া যায়। বিস্তারিত পরে!

দেখলাম এক মেয়ে বসে আছে, যার সাজ ছেলের মতো। প্রথমে কিছুটা থতমত খেয়ে গেলেও পরে সামলে নিলাম। ডানিয়েল আমার সাথে পরিচয় করিয়ে দিলেন- এলি। সুন্দর হাসি দিয়ে আমাদের সাথে কথা বলতে লাগলো। টিটভের কাছে বাড়তি টিকিট ছিল, তিনি ওটা দিয়ে দিলেন। আর তখন ওই মেয়েও আরেকটি টিকিট দিলেন। এভাবে যাওয়া-আসার ব্যবস্থা তারাই করে দিলেন। সেখান থেকে বেরিয়ে বাসে ওঠার রাস্তা দেখিয়ে দিলেন।

বাইরে বরফ আর বরফ, আমার বুটের সমস্যা ছিল যেটা ওইদিনই বুঝতে পারলাম। এটি দিয়ে বরফে হাঁটা তো যায় কিন্তুু স্বচ্ছ বরফের রাস্তা দিয়ে একদম না! আমি বাসস্ট্যান্ডে অপেক্ষা করতে লাগলাম এবং যথারীতি সময়মত বাস এলো। ওঠার সময় ড্রাইভার হাসিমুখে বলল, ‘হাই, হাউ আর ইউ?’ একটি ছোট্ট বাক্সের মতো আছে ঠিক ড্রাইভারের পাশে, ওখানে টিকিটটি ফেলে দিতে হবে। দেখলাম, ওটাতে পয়সাও ফেলছে সবাই! কোথায় নিয়ে যাবে কে জানে? আমি উঠতেই ড্রাইভারকে বলে দিলাম, ‘আমি অ্যাকসেস নোভা স্কসিয়া যেতে চাই, রাস্তা চিনি না।’ বসে অপেক্ষা করতে লাগলাম, বাইরে তুষার বৃষ্টি। নতুন শহর, নতুন রাস্তা, নতুন মানুষ আর শুধু বরফের শুভ্রতা! সবমিলিয়ে ভয়ংকর সুন্দর।

পৌঁছে গেলাম গন্তব্যস্থলে। নামিয়ে দিলো ড্রাইভার। প্রথমবারের মতো কানাডার কোনো সরকারি অফিসে প্রবেশ করতে যাচ্ছি। আমাদের মোবাইল কাস্টমার কেয়ারগুলোর মতো। টোকেন সিস্টেম। প্রথমে এক জায়গায় গিয়ে আইডি দেখাতে হয়, মানে পাসপোর্ট আর স্টাডি পারমিটের কাগজটি। টাকাটা ওখানেই জমা নিয়ে নিলো। এরপর সিরিয়ালের জন্য অপেক্ষা করো।

canada-cover

গেলাম, প্রথমে নাম, জন্মতারিখ জিজ্ঞেস করলো। এরপর জাতীয় পরিচয়পত্র নেওয়ার সময় আমাকে একটি পেন দেওয়া হয়েছিল, যেটা দিয়ে ইলেক্ট্রনিক সাইন দিতে হয়, এখানেও একই জিনিস। এরপর ছবি তুললো। কিছুক্ষণের মধ্যেই কার্ড দিয়ে দিলো। কানাডার সরকারি পরিচয়পত্র। কিছুটা রোমাঞ্চিত হলাম বটে। কিন্তুু কিছুক্ষণের মধ্যেই সব ধরনের রোমাঞ্চের অবসান ঘটলো!

এবার ফিরে যাওয়ার পালা। আমি বাসের সময়সূচি দেখতে লাগলাম। বুঝতে পারছিলাম না অনেক কিছুই।

চলবে...

এসইউ/জেআইএম

আরও পড়ুন