ভালোবাসার শহর ভুটান
হানিমুন কিংবা প্রেমিক-প্রেমিকাদের রোমান্টিক সময়ের কথা মনে পড়লেই সমুদ্রসৈকত কিংবা ক্যান্ডেল লাইট ডিনারের কথা মনে হয়। কিন্তু সময়ের সঙ্গে পরিবর্তিত হচ্ছে অনেক কিছুই। এখন অনেকেই কোলাহল মাড়িয়ে শান্ত সময় কাটাতে চান। নিরিবিলি সময় কাটানোর উৎকৃষ্ট জায়গা ভুটান। সেখানে হয়তো চোখ ধাঁধানো আলোকোজ্জ্বল ভবন পাবেন না। নেই প্রকৃতিবিরুদ্ধ কোনো আয়োজন। যা কিছু আছে, সবই প্রকৃতিকে ধারণ করে। পরিপাটি করে সাজানো ভবনের অনিন্দ্য কারুকাজ মুগ্ধ করবে আপনাকে। সেখানকার লোকসংখ্যা কম হওয়ায় দেশটাই শান্ত, স্নিগ্ধ, ছিমছাম আর নিরিবিলি। তাই ভালোবাসার জন্য আদর্শ জায়গা ভুটান।
ভুটানের অধিবাসীরা নিজেদের দেশকে মাতৃভাষায় (জংখা) ‘দ্রুক ইয়ুল’ বা ‘বজ্র ড্রাগনের দেশ’ নামে ডাকে। ভুটানের থিম্পুর অধিবাসী নামগিয়ারের সঙ্গে কথা হয়। সেখানে ঘুরতে যাওয়া ব্যক্তিদের গাইড হিসেবে কাজ করা নামগিয়ার জানান, বাংলাদেশ সম্পর্কে তার ধারণা আছে। বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা সেখানে সফর করার সময় দেশটাতে এমন নিরাপত্তা বলয়ে ঘিরে ফেলা হয়েছিল, যা ভুটানবাসী বিশ্বের অন্য নেতাদের বা রাষ্ট্রপ্রধানদের বেলায় দেখেননি। তিনি বলেন, ‘গত দুই বছর ধরে অনেক বাংলাদেশি সেখানে ভ্রমণে যাচ্ছেন। বিশেষ করে নবদম্পতিরা বেশি যাচ্ছেন আজকাল।’
> আরও পড়ুন- হিমাচলে তুষার ঝড়ের কবলে- প্রথম পর্ব
আমাদের ১৩ সদস্যের দলেও তিন জোড়া স্বামী-স্ত্রী ছিলেন। ছিলেন বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের ইলেক্ট্রিক্যাল ও ইলেক্ট্রনিক্স ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগের সহকারী অধ্যাপক জোয়ার্দার জাফর সাদিক ও তার স্ত্রী রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের ইংরেজি সাহিত্যের ছাত্রী উত্তরা ইউনিভার্সিটির সাবেক শিক্ষিকা মকরিনা রহমান মিশৌরি। ছিলেন ডাক্তার দম্পতি মাহমুদ আল আমিন ও নুসরাত মজুমদার। আরো ছিলেন বিশিষ্ট ব্যবসায়ী জাস্টিন গোমেজ ও তার স্ত্রী জেনি রিবেরু গোমেজ। তাদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, ভুটানের মত একটি দেশকে তারা ভ্রমণের জন্য বেছে নিয়ে ঠিক কাজটিই করেছেন।
সহকারী অধ্যাপক জোয়ার্দার জাফর সাদিক বলেন, ‘ভুটান অসম্ভব ভালো লেগেছে। আর আমাদের ভ্রমণের সময়টা খুব চমৎকার কেটেছে। খুব অল্প সময়ের মধ্যেই আমাদের সাথে গ্রুপে ভ্রমণকারী বেশ কয়েকজনের সঙ্গে অনেক ভালো সম্পর্ক গড়ে ওঠায় সময়গুলো দারুণ কেটেছে। আমরা ভ্রমণ লিমিটেডের মাধ্যমে ট্যুর করলেও শুরু থেকে শেষ পর্যন্ত ছিল চরম অব্যবস্থাপনা ও অদক্ষতার ছাপ।’
কারণ হিসেবে তিনি বলেন, ‘ট্যুরকালীন কোনরকম গাইড ছাড়াই এক জায়গা থেকে আরেক জায়গায় যাওয়াটা অবশ্যই খুব সুখকর অভিজ্ঞতা ছিল না। তারপরও গ্রুপে ভ্রমণকারী সবার আন্তরিকতায় কোনরকম অপ্রীতিকর ঘটনার সম্মুখীন হতে হয়নি। তারপরও ভ্রমণ লিমিটেড এরকম পরিকল্পনাহীনতা এবং অপেশাদারিত্বের দায় কোনভাবেই এড়িয়ে যেতে পারে না। যা হোক- পারো, পুনাখা ও থিম্পু ভ্রমণের সৌভাগ্য হয়েছিল। তার মধ্যে সবচেয়ে ভালো লেগেছে পারো’র সৌন্দর্য। চারপাশে প্রকৃতির মনোমুগ্ধকর রূপ নিঃসন্দেহে অনেকদিন মনে দাগ কেটে রাখবে।’
> আরও পড়ুন- শুভ্রতার স্পর্শে : প্রবাসীদের বিশ্বস্ততা
জেনি রিবেরু গোমেজ বলেন, ‘নিঃসন্দেহে ভীষণ ভালো একটা প্লেস নতুন যুগলদের জন্য। সবুজের সমারোহে পাহাড়ের দেশ ভুটান। মন ভালো হয়ে যায় অপরূপ সৌন্দর্য দেখে। যদি দম্পতিরা প্রকৃতির সৌন্দর্য উপভোগ করতে চান এবং যদি তারা আকাশ, পাহাড়, মেঘ-বৃষ্টির লুকোচুরির খেলা কাছ থেকে দেখতে চান; তবে আমি বলবো ভুটান ইজ দ্য বেস্ট!’
এইচএস/এসইউ/জেআইএম