ভিডিও EN
  1. Home/
  2. ভ্রমণ

স্বর্গীয় ভুটানে নানা রঙের পাহাড়ের সঙ্গে মেঘের মিতালি

সিরাজুজ্জামান | প্রকাশিত: ০১:০৪ পিএম, ৩০ জুলাই ২০১৮

শিরোনাম দেখেই হয়তো ভড়কে যেতে পারেন। পাহাড়ের আবার রং হয় নাকি? হ্যাঁ, সত্যি হয়। তা-ও আবার নানা রঙের। বিশ্বাস না হলে ভ্রমণ করতে পারেন প্রকৃতির অনন্য উপহার ও রূপ-রসের দেশ ভুটান। যেখানে শান্তির সুবিশাল পাহাড় আপনাকে মুগ্ধ করে রাখবে। কিন্তু কেন নানা রঙের পাহাড়? একটু অপেক্ষা করুন, বলছি।

সমুদ্রপৃষ্ঠ থেকে ৭ হাজার ২১৮ ফুট উচ্চতায় পাহাড় আর মেঘের মিতালি হলো ভুটানে। আর বিভিন্ন জায়গায় আছে ঝরনা। বহির্বিশ্ব থেকে অনেক দিন বিচ্ছিন্ন থাকার কারণে ভুটান প্রাণী ও উদ্ভিদের এক অভয়ারণ্য। সমুদ্র নয়, পাহাড়ই আমার প্রিয়। অরণ্য আমাকে সবসময় টানে। এজন্য ছোটবেলা থেকে ভুটানে যাওয়ার খুব শখ। চেনাজানা বন্ধু, আত্মীয়, পরিজন, সহকর্মীরা যখন থাইল্যান্ডের মত দেশে যাওয়ার জন্য ব্যাকুল; তখন আমি বেছে নেই ভুটানকে। প্রকৃতিকে আরো বেশি আলিঙ্গন করতে সড়কপথে আমরা চারজন যাওয়ার কথা থাকলেও শেষ পর্যন্ত ভারত দুইজনের ট্রানজিট ভিসা দেয়নি। ঝামেলা এড়াতে ট্রাভেল এজেন্সির মাধ্যমে পরে আমরা দুইজন রওনা হই। ওই এজেন্সির মাধ্যমে মোট ১৩ জন ভুটানের বিভিন্ন জায়গায় ঘুরে প্রকৃতিকে অনুভব করি। কিন্তু ট্রাভেল এজেন্সি বেছে নেয়ার সময় অবশ্যই আপনাকে সতর্ক হতে হবে। কারণ অনেকে প্রতারণা করছে। পরের পর্বে এ নিয়ে বিস্তারিত লিখব। যা সবার জানা জরুরি।

bhutan

ভুটান দক্ষিণ এশিয়ার একটি ল্যান্ডলক দেশ। ভূতাত্ত্বিকভাবে দক্ষিণ এশিয়ায় এবং মালদ্বীপের পর এ অঞ্চলের দ্বিতীয় কম জনবহুল দেশ ভুটান। থিম্পু এর রাজধানী এবং বৃহত্তম শহর, ফুটসেলিংয়ের আর্থিক কেন্দ্র।

সেখানে সড়কপথে যেতে হলে ভারতের ট্রানজিট ভিসা নিয়ে সোজা চলে যেতে হয় বুড়িমারি বর্ডারে। বাংলাদেশের ইমিগ্রেশনের কাজ সেরে চ্যাংড়াবান্ধা যেতে হবে। ইমিগ্রেশন প্রক্রিয়ার শেষ করে চ্যাংড়াবান্ধা থেকে যেতে হবে জয়গাঁও বর্ডার। ট্যাক্সি অথবা বাসে যাওয়া যায়। ট্যুর অপারেটরদের মাধ্যমে গেলে সব ব্যবস্থা তারাই করবেন।

bhutan

জয়গাঁও আর এ ইমিগ্রেশন করতে হবে। তারপর হেঁটেই ঢুকতে হবে ভুটান। জয়গাঁও এপার আর ওপার ভুটানের ফুন্টসোলিং টাউন। ওই টাউন পর্যন্ত আসতে-যেতে কারো ভিসা লাগে না। অনন্য সুন্দর এই জায়গায় গেলে আপনার মনে হতেই পারে, পৃথিবীতে ভিসার কড়াকড়ি আসলেই কি বাড়াবাড়ি নয়? কোন কোন ক্ষেত্রে শিথিলও তো হতে পারে! এখানেই আপনাকে অন অ্যারাইভাল ভিসা দেবে ভুটান। ব্যস!

ফুটসেলিং ভুটানের দ্বিতীয় বৃহত্তম শহর। শহরটি সীমান্ত জেলা চুখা জেলায় অবস্থিত। শহরটি ভুটানের শিল্প ও বাণিজ্য শহর হিসাবেও পরিচিত।

bhutan

শুরুতে ব্যায়ামাগারের ছোট ভাই অভিনেতা ও মডেল রিদান খান ভুটানের উদ্দেশে রওনা দিলেও ট্রাভেল এজেন্সির মাধ্যমে ভারত পৌঁছার পর সব মিলে ১৩ জন মিলিত হওয়ার সুযোগ পাই। এর আগে সবাই একই বাসে গেলেও কারো সঙ্গে কথা বলার তেমন সুযোগ হয়নি। পরে আস্তে আস্তে একটি বড় পরিবারে পরিণত হই আমরা। আমাদের দলে ছিলেন বুয়েট থেকে পড়ালেখা শেষ করা বেসরকারি প্রতিষ্ঠানে কর্মরত একজন জ্যেষ্ঠ ভাই, বিশ্ববিদ্যালয়ের দুইজন শিক্ষক যারা স্বামী, দুই জন স্বামী-স্ত্রী চিকিৎসক, আরও কয়েকজন বিশিষ্ট ব্যবসায়ী।

এবার বলি ভুটানের পাহাড়ের রং ভিন্ন ভিন্ন কেন?

ভুটান দেশটি ছোট। ৭০ শতাংশ পাহাড় ও অরণ্য। লোকসংখ্যা প্রায় ৮ লাখের মত। তাই এখনও সব কিছু অক্ষত। এছাড়া সরকারও এসব রক্ষণাবেক্ষণ করতে বদ্ধ পরিকর। ভুটানের পাহাড়গুলোর গঠন, আকৃতি ও প্রকৃতি ভিন্ন ভিন্ন। কোন কোন পাহাড়ে শুধুই সুবিশাল সেগুন গাছ। ‘অ্যাভাটর’ সিনেমার মত হুবহু একই ধরনের। এটি সাধারণত পুনাখা যাওয়া-আসার পথে দেখা যাবে। পারু আর থিম্পু থেকে ভারত আসার পথে দেখা যাবে কোনটায় শুধুই পাইন গাছ, কোনটা আবার বোতল ব্রাশ, কোনটা আবার শুধু পাথর দিয়ে তৈরি। আবার ন্যাড়া পাহাড়ও আছে। পাথুরে পাহাড়গুলোর কোনটা আবার ধবধবে সাদা পাথরের, আবার কোনটা মেটে রঙের। কোন সবুজ পাহাড়ের গায়ে মেঘ ও কুয়াশা জমে সাদা হয়ে হয়েছে। তাই একই দৃষ্টিতে আপনার চোখে সবুজ, গাঢ় সবুজ, কোনটা সাদা, আর কোনটা ধুসর পাহাড় দেখতে পাবেন।

bhutan

আমাদের ড্রাইভার কাম ‘গাইড’ মি. রিনজিন ছিলেন সেনাবাহিনীতে। অবসরে যাওয়ার পর তিনি গাড়ি চালাচ্ছেন। তবে নিজে গাড়ি না কিনে কোম্পানির গাড়ি চালান। তিনি আমাদের জানান, ভুটানের বেশির ভাগ পাহাড়ে হীরা, সোনাসহ মূল্যবান সম্পদ রয়েছে। জাপান সরকার এসব সম্পদ তোলার জন্য প্রস্তাব দিয়েছিল। কিন্তু ভুটানের রাজা তাতে রাজি হননি।

ভুটানের এই অপরূপ পাহাড় দেখে আমাদের ভ্রমণের সঙ্গী রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের ইংরেজি সাহিত্যের ছাত্রী ও উত্তরা ভার্সিটির সাবেক শিক্ষক মকরিনা রহমান মিশৌরি সবসময় উচ্ছ্বসিত ছিলেন। তিনি তার অভিব্যক্তি প্রকাশ করে বলেন, ‘হিলস হ্যাজ এ কালার।’ পাহাড়েরও যে রং আছে তা ভুটানে না এলে বুঝতে পারতাম না। এটা না দেখে কাউকে বোঝানোও সম্ভব নয়।

এইচএস/এসইউ/জেআইএম

আরও পড়ুন