পায়ে হেঁটে কলকাতা থেকে ঢাকা : শেষ পর্ব
আমার পদযাত্রার সমাপ্তি হতে যাচ্ছে। আর মাত্র কয়েক কদম পথ বাকি। পদাতিক পরিবার আমাকে অভ্যর্থনা জানাতে জাতীয় জাদুঘরের সামনে অপেক্ষা করছে। সাথে আনন্দ বিনোদন ম্যাগাজিন পরিবারও এসেছে আমাকে অভ্যর্থনা জানাতে। আমি কাছে আসতে প্রিয়মুখগুলো দৌড়ে এসে আমাকে জড়িয়ে ধরলো। আমি কোনো কথা বলতে পারছিলাম না। অমসৃণ গালটা ভিজে গেলো চোখের জলে। এগারো দিন আগে সেই ভিনদেশের প্রাণকেন্দ্র থেকে হাঁটা শুরু করে অজানা-অচেনা পথ পাড়ি দিয়ে আজ আমি আমার স্বপ্নের পদযাত্রার সীমানা অতিক্রম করলাম।
ঘড়িতে তখন বিকেল চারটার কিছুটা উপরে। চারপাশের মানুষজন এসে আমাকে ঘিরে ফেলল। আমাকে গণজাগরণ মঞ্চের মাঝখানে নেওয়া হলো। আমি দাঁড়িয়ে আছি এক তরুণ প্রজন্মের ঐতিহাসিক স্রোতের মাঝখানে। যেখানে মানবতাবিরোধী অপশক্তির বিরুদ্ধে দেশের স্বপ্নবাজ তরুণ প্রজন্ম একত্রিত হয়েছে। আমিও তাদেরই একজন। আমি ভাষাসৈনিক, মুক্তিযোদ্ধা, মহান মুক্তিযুদ্ধে শহীদদের স্মরণে এবং তাঁদের প্রতি শ্রদ্ধা জানাতেই এ দীর্ঘ পথ অতিক্রম করলাম।
এখন দাঁড়িয়ে আছি এ প্রজন্মের যোদ্ধাদের মাঝে। এর চেয়ে বেশি আর কী বা চাওয়ার থাকতে পারে? হাজারো স্বপ্নবাজ আমার দিকে তাকিয়ে আছে, আর আমি দাঁড়িয়ে আছি তাদের দিকে তাকিয়ে। আমার হাতে তুলে দেওয়া হলো মাইক্রোফোন। আমিও আগ্রহ নিয়ে আমার পদযাত্রার গল্প শোনালাম। এ দীর্ঘ পথে সাক্ষাৎ পাওয়া মুক্তিযোদ্ধাদের কথা তুলে ধরলাম। তাদের শুভেচ্ছা পৌঁছে দিলাম এ প্রজন্মের যোদ্ধাদের কাছে। আমিও এক ইতিহাসের অংশ হলাম।
দশ ফেব্রুয়ারি কলকাতা প্রেসক্লাব থেকে হেঁটে ২০ ফেব্রুয়ারি ঢাকায় পৌঁছাই। ২১ ফেব্রুয়ারি ঢাকার রমনা বটমূলে পদাতিকের একুশে আন্তর্জাতিক সাংস্কৃতিক সম্মিলনের মঞ্চে যোগ দেই। দীর্ঘদিনের পদাতিকের কলকাতার সাংস্কৃতিক সহযোগী মিতালি-ভারত বাংলাদেশ সংস্কৃতি সংসদ আনুষ্ঠানিকভাবে আমার যাত্রা শুরু করে। কলকাতার গণমাধ্যম, রাষ্ট্রীয় প্রশাসনসহ সর্বসাধারণের সার্বিক সহযোগিতা আমাকে নির্বিঘ্নে বাংলাদেশ সীমানায় পৌঁছে দেয়। বাংলাদেশের জনগণ, সাংবাদিক ও প্রশাসনের সহযোগিতাও ছিলো স্মরণীয়।
শুরুর আগে ও পরে অনেকেই বলেছেন, এটা সম্ভব নয়। অনেকে ভয়ও দেখিয়েছেন। পথে নানান প্রতিকূলতাও ছিল অনেক। শারীরিক প্রতিকূলতাও ছিল। ছিল আবহাওয়ার বৈরিতা। তবুও থেমে থাকেনি আমার দৃঢ় মনোবল। আমি এগিয়ে গেছি স্বপ্নের পথে। স্বপ্নও এসে আমার সাথে আলিঙ্গন করেছে পরম মমতায়।
এসইউ/এমএস