ভিডিও EN
  1. Home/
  2. ভ্রমণ

পায়ে হেঁটে কলকাতা থেকে ঢাকা : দ্বাদশ পর্ব

ইকরামুল হাসান শাকিল | প্রকাশিত: ১২:৫৭ পিএম, ০৬ জানুয়ারি ২০১৮

সূর্যনগর বাজারে এসে দুপুরের খাবারের জন্য যাত্রা বিরতি করলাম। এখানে এসে এক ভদ্রলোকের সাথে পরিচয়। এই বাজারে তার একটা দোকান আছে। দোকান বন্ধ করে বাড়িতে দুপুরের খাবার খেতে যাচ্ছেন। আমি তাকে জিজ্ঞেস করলাম, এখানে ভালো খাবার হোটেল কোথায়? তিনি আমার পরিচয় জানতে চাইলেন। আমি পরিচয় দিলাম। এখন তিনি আমাকে জোর করেই তার বাড়ি নিয়ে গেলেন। বাজারের পাশেই তার বাড়ি। তার বাড়িতেই দুপুরের খাবার হলো শৈল মাছ দিয়ে।

দুই কি আড়াই কিলোমিটার পথ হাঁটার পর আড়িয়াল খাঁ নদের ওপর এসে দাঁড়ালাম। আড়িয়াল খাঁ নদ পদ্মা নদীর পূর্বপ্রান্তের শেষ এবং অন্যতম প্রধান শাখানদী। গোয়ালন্দঘাট থেকে প্রায় ৫১.৫ কিলোমিটার দক্ষিণ-পূর্বে পদ্মা থেকে উৎপন্ন হয়ে ফরিদপুর ও মাদারীপুর জেলার মধ্য দিয়ে প্রবাহিত হয়ে বরিশালের উত্তর-পূর্ব কোণে তেঁতুলিয়া চ্যানেলে গিয়ে পড়েছে। নদটির মোট দৈর্ঘ্য ১৬০ কিলোমিটার।

shakil

বিকেল পাঁচটার দিকে কাওড়াকান্দি ফেরিঘাটে এসে পৌঁছাই। নদী পাড় হওয়ার জন্য লঞ্চে উঠে পড়লাম। সোজা উঠে গেলাম লঞ্চের ছাদে। সেখানে বেশ কয়েকজন বসে আছে। বারো-তেরো বছর বয়সী এক ছেলে গান করছে আর সবাই শুনছে। ছেলেটিকে দেখে মনে হলো অন্ধ। কাছে গিয়ে দেখি সত্যি অন্ধ। কিন্তু গানের গলা অসাধারণ। আমি যতগুলো প্রতিবন্ধীকে গান করে ভিক্ষা করতে দেখেছি প্রায় সবারই গানের গলা খুবই ভালো। তবে তাদের গানের ধরণ প্রায় একই। ‘গুরু উপায় বল না, জনম দুঃখী কপাল পোড়া আমি একজনা’, ‘আল্লাহু আল্লাহু তুমি জাললে জালালু, শেষ করা তো যায় না গেয়ে তোমার গুণগান’, ‘আর কতকাল ভাসব আমি দুঃখের সাগরে’ কিংবা ‘আমার জনম দুঃখী মা’ এসব হৃদয় ও মর্মস্পর্শী গান গেয়ে মানুষের কাছ থেকে টাকা উপার্জন করে তারা। এখানেও তেমনি ‘মায়ের এক ধার দুধের দাম কাটিয়া গায়ের চাম, পাপোশ বানাইলেও ঋণের শোধ হবে না, এমন দরদী ভবে কেউ হবে না আমার মা গো’ গানটিই গাইছে ছেলেটি।

shakil

লঞ্চটি কিছুদূর চলার পর একটি ঘাটে থামলো। এখান থেকে যাত্রী ওঠানো হচ্ছে। এই ঘাট থেকে একটি বরযাত্রীও উঠলো। প্রায় পনের-বিশ জনের একটি দল। কনেপক্ষ তাদের বিদায় দিচ্ছে। কনে মাকে জড়িয়ে ধরে কাঁদছে। তার সাথে তাল রেখে অনেকেই চোখের পানি আর নাকের পানি এক করছে। তাদের কান্নাকাটি শেষে লঞ্চটি আবার চলতে শুরু করলো। আপন গতিতে লঞ্চটি পদ্মার বুকে ভেসে চলছে। রাজা রাজবল্লভের কীর্তি পদ্মার ভাঙনের মুখে পড়ে ধ্বংস হয়েছে বলে পদ্মার আরেক নাম কীর্তিনাশা। আর এই কীর্তিনাশার চরিত্র উঠে এসেছে মানিক বন্দ্যোপাধ্যায়ের বিখ্যাত উপন্যাস ‘পদ্মা নদীর মাঝি’তে। এই নদীর তীরের মানুষের জীবনকে কেন্দ্র করেই লেখা তার এ উপন্যাস। পদ্মা বাংলাদেশের একটি প্রধান নদী। এটি হিমালয়ে উৎপন্ন গঙ্গা নদীর প্রধান শাখা এবং বাংলাদেশের ২য় দীর্ঘতম নদী।

মাওয় ঘাটে পৌঁছতে সন্ধ্যা হয়ে গেল। এখানে আমার জন্য অপেক্ষা করছিলেন একটি জাতীয় দৈনিকের প্রতিনিধি গোলাম মাওলা অপু। তিনি আমাকে ফেরিঘাটেই বেশ কয়েকজন বিভিন্ন পত্রিকার প্রতিনিধি নিয়ে অভ্যর্থনা জানান। তারপর তিনি তার বাসায় নিয়ে এলেন। তার পরিবারের সাথে গল্প হলো। রাতের খাবারের শেষে ঘুমাতে চলে গেলাম। আমার অবস্থান ঢাকাতে সেলিম ভাইকে জানিয়ে কিছুটা ভয় নিয়েই ঘুমিয়ে পড়লাম। ভয়ের বিষয়টা অপু ভাইয়ের কথার দ্বারাই বলছি। আমি ঘুমিয়েছি কিন্তু অপু ভাই ঘুমাতে পারেননি। কারণ তিনি হয়তো আমাকে আশ্রয় দিয়ে তিনিই বেশি বিপদে পড়েছেন। তাই ভয়ে তিনি সারা রাত জেগে ছিলেন আমার নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে।

shakil

আমি কলকাতা থেকে ঢাকা পায়ে হেঁটে আসতেছি ‘মাদক ছেড়ে নিয়মিত হাঁটুন সুস্থ থাকুন, ভাষা আন্দোলনের চেতনায় দেশ গড়বো আমরা তরুণ’ এই স্লোগানে। কিন্তু প্রতিদিন বিভিন্ন সংবাদমাধ্যম প্রচার করছে ‘কাদের মোল্লাসহ সকল যুদ্ধাপরাধীদের ফাঁসির দাবিতে কলকাতা থেকে পায়ে হেঁটে ঢাকার গণজাগরণ মঞ্চে আসছে শাকিল’ এমন শিরোনামে। এদিকে ঢাকার শাহবাগে তরুণ প্রজন্ম যুদ্ধাপরাধীদের ফাঁসির দাবিতে আন্দোলন করছে। আমাকেও সেখানকার একজন হিসেবেই নিউজ করছে। ফলে পুরো সময়টাজুড়ে একটা নিরাপত্তাহীনতায় থাকতে হয়েছে। তাই অপু ভাইও একই কারণে ভয়ে ছিলেন। যদি আমার কোন ক্ষতি হয়ে যায়, তাহলে তাকে জবাবদিহি করতে হবে সেই ভয়ে।

এসইউ/এমএস

আরও পড়ুন